শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার রেড রোডে। — নিজস্ব চিত্র
রেড রোডের শোভাযাত্রার জন্য বদলে গেল শহরের বেশ কয়েকটি পুজো কমিটির বিসর্জনের ঘাটের ঠিকানা।
পুলিশ সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবার রেড রোডে বিশ্ব বাংলার পুরস্কারপ্রাপ্ত ৩৯টি পুজো কমিটি তাঁদের প্রতিমা ও থিম নিয়ে ট্যাবলো সাজিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে প্রদর্শন করবে। অনুষ্ঠান শেষে প্রায় ১৫টি পুজো কমিটি বাবুঘাট সংলগ্ন ঘাটে বিসর্জন না করে প্রথা মেনে স্থানীয় ঘাটেই বিসর্জন করবে বলে পুলিশকে জানিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে পুলিশের সঙ্গে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের বৈঠকের পরে মত বদলায় শহরের বেশ কিছু পুজো।
যার মধ্যে রয়েছে একডালিয়া এভারগ্রিন, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, ভবানীপুর ৭৫ পল্লি, কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ, সল্টলেকের একে ব্লক, শিবপুর মন্দিরতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মতো পুজো। তবে চিরাচরিত প্রথা মেনে রেড রোডের অনুষ্ঠান সেরে নিজেদের এলাকায় ফিরে বির্সজন করার কথা দমদম পার্ক তরুণ দল, শ্রীভূমি, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, কাশী বোস লেন সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি-সহ বেশ কয়েকটি পুজোর।
চিরাচরিত বিসর্জনের ঘাট বদলে ফেলতে রাজি হওয়া পুজো-উদ্যোক্তারা জানান, রেড রোডের ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পরে ফের কয়েক কিলোমিটার পেরিয়ে স্থানীয় এলাকায় ভাসান দিতে চান না তাঁরা। কারণ, পুরো বিষয়টি শুধু সময়সাপেক্ষ নয়, সঙ্গে থাকবে যানজটের আশঙ্কাও। বেহালার একটি ক্লাবের কর্তা বলেন,‘‘অত দূরে চলে যাওয়ার পরে ফেরার কোনও মানেই হয় না। ফিরতে গেলে ফের রাস্তা জুড়ে যানজট হবে। আমরা তাই বাবুঘাটেই প্রতিমা বিসর্জন দেব।’’ পুলিশের একাংশের দাবি, রেড রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তা দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকলে ধর্মতলা-সহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট হবে। তার উপরে পুজো কমিটিগুলি ট্রেলার এলাকায় ফিরতে চাইলে জট আর বাড়বে। সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। তা মাথায় রেখেই বেশ কয়েকটি পুজো তাদের প্রথামাফিক ভাসানের স্থান বদলেছে বলে দাবি পুলিশের।
তবে ট্যাবলো-সহ ট্রেলার নিয়ে ফিরলে সমস্যা হতে পারে জেনেও চিরাচরিত ভাসানের স্থান বদলাতে নারাজ বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, শিকদার বাগান-সহ একাধিক পুজো কমিটি। উদ্যোক্তাদের দাবি, পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে ভাসানে সব রকম সাহায্য করবে। উত্তরের শিকদার বাগানের পুজো কমিটির সদস্য গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বরাবর নিমতলা ঘাটেই বিসর্জন দিই। তাই শোভাযাত্রা থেকে আমরা সেখানেই ফিরে প্রতিমা বিসর্জন দেব।’’
লালবাজারে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) সদর সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘কয়েকটি পুজো কমিটি তাঁদের পাড়ায় প্রতিমা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়ে আবেদন করেছেন। তাঁদের পাড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা ব্যবস্থা করেছি।’’ কিন্তু পাড়ায় ফেরার সময়ে রাস্তায় যানজট হলে তখন কী হবে? সুপ্রতিমবাবুর জবাব, তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ৩৯টি পুজোর কর্তারা ছাড়াও ছিলেন পুলিশের বিভিন্ন আধিকারিক। সেখানে কলকাতা পুলিশের তরফে পুজো কমিটিগুলিকে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে। স্থানীয় থানা ও ট্রাফিক গার্ডের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পুজো কমিটিগুলিকে কাজ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।
শোভাযাত্রা উপলক্ষে রেড রোডের অনুষ্ঠানস্থলকে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া হয়েছে বলে লালবাজার জানিয়েছে। প্রদর্শনী চলাকালীন রেড রোড ও সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ডিসি পদমর্যাদার ন’জন অফিসার। এলাকায় মোতায়েন করা হচ্ছে দেড় হাজার পুলিশকর্মী। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানের জন্য থাকছে আটটি ওয়াচ টাওয়ার, কুইক রেসপন্স টিম, দশটি পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ। লালবাজার সূত্রে খবর, রেড রোডের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বসার জন্য থাকছে দু’হাজার আসন। এ ছাড়াও সাধারণ দর্শকদের বসার জন্য আরও দশ হাজার আসনের ব্যবস্থা থাকবে। কেউ যাতে এই অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্য ব্রিগেড, শহিদ মিনার, বঙ্গবাসী ও লেডিস গল্ফ গ্রাউন্ডে চারটি জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থাও করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy