Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
উদ্বিগ্ন লালবাজার

পুলিশ নিগ্রহের স্পর্ধা এ বার স্কুলপড়ুয়ারও

ট্র্যাফিক আইন ভাঙায় বাধা দিলে পুলিশের নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। নতুন নয় হেলমেটহীন মোটরবাইক চালানোও। তবে মঙ্গলবার পার্ক সার্কাসে যা ঘটল, তা কার্যত নতুন এক নজির গড়েছে।

নিজস্ব সংবাদাদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

ট্র্যাফিক আইন ভাঙায় বাধা দিলে পুলিশের নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। নতুন নয় হেলমেটহীন মোটরবাইক চালানোও। তবে মঙ্গলবার পার্ক সার্কাসে যা ঘটল, তা কার্যত নতুন এক নজির গড়েছে। কারণ হেলমেটহীন আরোহীর বাইক থামাতে গিয়ে ট্র্যাফিক কনস্টেবলের জখম হওয়ার ঘটনায় যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে একাদশ শ্রেণির স্কুলছাত্র। আইনভঙ্গ এবং আইনরক্ষককে হামলার এই স্পর্ধা এ বার কমবয়সীদের মধ্যেও সংক্রমিত হওয়া উদ্বেগ বাড়িয়েছে লালবাজারের পুলিশকর্তাদের।

পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালাতে দেখে পথ আটকেছিলেন ওই ট্র্যাফিককর্মী। কিন্তু বাইকচালক তরুণ উল্টে বাইক নিয়ে ওই পুলিশকর্মীকে ধাক্কা মেরে ফেলে পালানোর চেষ্টা করে। শেষমেশ অবশ্য জনতা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। লালবাজার সূত্রের খবর, ধৃত স্কুলপডু়য়ার নাম ফাহেদ খান। বালিগঞ্জের বাসিন্দা ১৮ বছরের ওই তরুণ রাজারহাটে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র। আজ, বুধবার তাকে আদালতে হাজির করানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আটক করা হয়েছে মোটরবাইকটিকেও। বাইকের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে গিয়ে হাতে-পায়ে গুরুতর চোট পেয়েছেন পার্ক সার্কাস ট্র্যাফিক গার্ডের ওই কনস্টেবল রাজীব হালদার। তাঁর চিকিৎসা চলছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে পার্ক সার্কাস ময়দানের পাশে দরগা রোড ও সুরাবর্দি অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে ডিউটি করছিলেন রাজীববাবু। বেলা ১১টা নাগাদ হেলমেট ছাড়া এক তরুণ মোটরবাইক চালিয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দিক থেকে পার্ক সার্কাস ৪ নম্বর সেতুর দিকে যাচ্ছে দেখে থামাতে যান তিনি। তখনই বাইকচালক ফাহেদ এই কাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, মোটরবাইকের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন যান রাজীববাবু। ইতিমধ্যে ফাহেদ বাইক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ধরে ফেলে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ কনস্টেবলের অভিযোগের ভিত্তিতে বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ ওই তরুণকে গ্রেফতার করে।

কখনও গণ্ডগোল থামাতে গিয়ে, কখনও মত্ত যুবকের আচরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে, কখনও বা বেআইনি পার্কিং রুখে অতীতে বারবার আক্রান্ত হতে হয়েছে পুলিশকে। লালবাজারের কর্তাদের অনেকেই মানছেন, আইনরক্ষককে পরোয়া না করার প্রবণতা বাড়ছে বই কমছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই আক্রোশের লক্ষ্য ট্র্যাফিক পুলিশ। তবু এই সমস্ত ঘটনায় সার্বিক ভাবে উর্দির প্রতি সম্ভ্রমই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে বলে মানছেন তাঁরা।

গত বছরের ৬ জুন গণ্ডগোল থামাতে গিয়ে ক্যানিং স্ট্রিটে প্রহৃত হন এক ট্র্যাফিক কনস্টেবল। ওই বছরেরই ২৭ জুন জাদুঘরের সামনের গেটে মত্ত যুবকের প্রস্রাব করায় বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশ। গত বছর ৮ মার্চ ওয়াটগঞ্জে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরেও উত্তেজিত জনতার হাতে আক্রান্ত হয় পুলিশ। ভাঙচুর করা হয় ডিসি (বন্দর) সুদীপ সরকারের গাড়ি।

কেন বারবার পুলিশের প্রতি এই বেপরোয়া মনোভাব? কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কমিশনার গৌতমমোহন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে পুলিশ নিগ্রহের ঘটনা কমবে। এর জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার।’’ তবে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘আইনের যে সব ধারা অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে মামলা করা সম্ভব, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সবই প্রয়োগ করা হচ্ছে। আইনের বাইরে গিয়ে তো আমরা কিছু করতে পারি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE