মিনিট পনেরো ধরে চলছে সওয়াল-জবাব। এক ব্যক্তি প্রাণপণে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, যে দিনের ঘটনা নিয়ে কথা হচ্ছে, সে দিন তিনি শহরে ছিলেনই না। পরিবারের সঙ্গে দিঘায় গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। সঙ্গে ছিল গাড়িটি। ঘটনার দিনের উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এর পরে ওই ব্যক্তি দাবি করেন, পুলিশ ওই রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ দেখাক। সিগন্যাল ভাঙার প্রশ্নই ওঠে না!
পাশে দাঁড়ানো এক জন বললেন, ‘‘একশো টাকার তো ব্যাপার। দিয়ে দিন না।’’ ভদ্রলোক উত্তেজিত। বললেন, ‘‘একশো টাকার ব্যাপার নয়। অভিযোগটাই ভুল। আমার কাছে প্রমাণ রয়েছে।’’ কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানালেন, শুধু ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রেই নয়, অটোমেটিক মেসেজিং ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে গত দু’বছরে ট্র্যাফিক সংক্রান্ত অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রমাণ-সহ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অনেকেই। তাঁদের দাবি, শহরে না থাকাকালীনও তাঁদের গাড়ি আইন ভেঙেছে বলে মোবাইল নম্বরে মেসেজ এসেছে। রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং ঘটনার দিন শহরের বাইরে থাকার উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে পুলিশি অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তাঁরা।
সল্টলেকের বাসিন্দা ভাস্কর মজুমদারের অবশ্য দাবি, তাঁর ক্ষেত্রে সেই সুযোগই নেই। বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী
ভাস্করবাবুর কাছে প্রায় সাত বছর আগের ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের মেসেজ এসেছে এখন। গত ২৭ অগস্ট পাঠানো সেই মেসেজে জানানো হয়েছে, সাত বছর আগের ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের অক্টোবরে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ট্র্যাফিক আইন ভেঙেছিল ভাস্করবাবুর স্কুটার। তা ছাড়া, এখনও পর্যন্ত ভাস্করবাবুর স্কুটার আরও তিন দফায়
ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করেছে। সেগুলিও যথাক্রমে ছয়, চার এবং দু’বছর আগে। শেষের দু’টি মামলা ইতিমধ্যেই আবার শিয়ালদহ আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। যদিও ওই সব ঘটনার কিছুই পরে মনে করতে পারছেন না বছর তেষট্টির বৃদ্ধ। বললেন, ‘‘সাত বছর আগের কোনও এক দিনের ঘটনা এত দিন পরে কী করে মনে করব? কীসের ভিত্তিতেই বা পুলিশের মেসেজকে চ্যালেঞ্জ জানাব! জরিমানা ১০০ টাকা হলেও তা দিয়ে দিই কী করে? সত্যিটা জানা দরকার। পুলিশই সাহায্য করুক।’’
সমস্যার কথা জানিয়ে গত ২৮ অগস্টই কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) এবং লালবাজারে ট্র্যাফিক পুলিশের ওসি-কে মেল করেছেন ভাস্করবাবু। তাঁর বক্তব্য, পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে কথা বলতে চান তিনি। পরে আরও দু’বার একই বিষয়ে মেল করেছেন ভাস্করবাবু। কোনও উত্তর আসেনি। সম্প্রতি তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দফতরেও মেল করেন। গত ১৭ এবং ২৩ সেপ্টেম্বরের সেই মেলেরও কোনও উত্তর আসেনি পুলিশের তরফে।
প্রসঙ্গত, আগে ‘স্পট ফাইন’-এর পাশাপাশি চিঠি পাঠিয়েও ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন ও সেই সংক্রান্ত জরিমানার কথা জানানো হত গাড়ির মালিককে। বছর দু’য়েক ধরে অনলাইন এবং মেসেজের মাধ্যমে জরিমানার কথা জানানো শুরু হয়েছে কলকাতা পুলিশ এলাকায়। আইন লঙ্ঘনের পরে সরাসরি গাড়ির মালিকের মোবাইল ফোনে সেই মেসেজ পৌঁছে যায়। মেসেজ পাওয়ার পরে স্থানীয় ট্র্যাফিক গার্ডে গিয়ে বা অনলাইনে জরিমানা মিটিয়ে দেওয়া যায়। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, আগে সবই ম্যানুয়াল ছিল। মেসেজের মাধ্যমে জরিমানা শুরু হতেই অনেকে এ নিয়ে অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেরই দাবি, আগে কোনও চিঠি পাননি। হঠাৎ মেসেজ পাচ্ছেন। এই মেসেজকে অতটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। সময়ে জরিমানা মেটালেই হল।’’
কিন্তু সাত বছর আগের কোনও ঘটনার জন্য এত দিন পরে মেসেজ আসে কী করে?
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের সদ্য নিযুক্ত ডিসি সন্তোষ পাণ্ডে বললেন, ‘‘দু’দিন হল দায়িত্ব নিয়েছি। এখনও সে ভাবে দেখা হয়নি। না দেখে বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy