সমূল: উপড়ে গিয়েছে গাছ। বৃহস্পতিবার, সল্টলেকে। নিজস্ব চিত্র
এক পথচারী যাচ্ছিলেন গাছের পাশ দিয়ে। অন্য দু’জন দাঁড়িয়েছিলেন একটু দূরে। আচমকা শিকড় সুদ্ধ ভেঙে পড়ল সেই গাছ! যিনি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় বেঁচে গিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালের ব্যস্ত সময়ে ঘটনাটি ঘটেছে সল্টলেকের করুণাময়ী মোড়ে।
বছর দু’য়েক আগে মুম্বইয়ে নারকেল গাছ মাথায় ভেঙে পড়ায় মারা গিয়েছিলেন এক মহিলা। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সারা দেশে। সম্প্রতি সল্টলেকেই চলন্ত অটোর উপরে গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল। কোনও রকমে রক্ষা পান চালক এবং তিন যাত্রী।
সল্টলেকের দু’টি ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। এর আগেও সেখানে একাধিক বার গাছ পড়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সব গাছ বসানো হয়েছিল বহু আগে। কিন্তু সেগুলির এখন কী অবস্থা, তা দেখভালের কোনও প্রচেষ্টাই স্থানীয় প্রশাসনের তরফে চোখে পড়ে না।
স্থানীয় সূত্রের খবর, করুণাময়ী মোড় থেকে ১০ নম্বর ট্যাঙ্কের দিকে যে রাস্তাটি গিয়েছে, এ দিন সেই লেনের ধারে একটি বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ শিকড় সুদ্ধ উপড়ে আসে। কোনওমতে বেঁচে যান হাওড়ার বাসিন্দা অনন্ত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘এটিএম থেকে টাকা তুলে আসছিলাম। গাছের নীচ দিয়ে যাওয়ার সময়ে হঠাৎ মনে হল, সেটা আমার দিকে হেলে পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে আসায় বেঁচে গিয়েছি। না হলে গাছ ও বাতিস্তম্ভ সুদ্ধ পড়তাম।’’ খবর পেয়ে পুরকর্মীরা এসে গাছটি কেটে সরান। প্রায় এক ঘণ্টা ওই রাস্তার একাংশে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সল্টলেকে রাস্তার দু’ধারে তো বটেই, বুলেভার্ডেও বহু গাছ রয়েছে। নানা কারণে অনেক গাছ কাটা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার পরেও যেগুলি রয়ে গিয়েছে, সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ পুরসভার তরফে দেখা যাচ্ছে না। বিধাননগর পুরসভার অবশ্য দাবি, কোন কোন গাছ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বা হেলে পড়েছে সেগুলি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। বিষয়টি নিয়ে বন দফতরের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। নির্বাচনের পরে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে। মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) রহিমা বিবি (মণ্ডল) বলেন, ‘‘গাছ পড়ার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত কী অবস্থায় গাছগুলি রয়েছে, তা পরীক্ষা করে বিপজ্জনক গাছগুলি চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’’
বাসিন্দাদের বক্তব্য, মাটি আলগা হয়ে গাছ পড়ে থাকতে পারে। পাশাপাশি গাছে পেরেক পুঁতে হোর্ডিং-ব্যানার লাগানো বন্ধ করা প্রয়োজন। সম্প্রতি নিউ টাউনে হিডকো কর্তৃপক্ষ গাছ না কেটে শিকড় সুদ্ধ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছেন, গাছ স্থানান্তরিত করার জায়গা থাকলে অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।
বারবার কেন গাছ পড়ছে? পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাটির গুণমানের পরিবর্তন হচ্ছে। কোথাও কোথাও মাটির জলধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
গাছ পড়ে যাওয়ার পিছনে সেটাও একটা বড় কারণ।’’
মাটির জল ধারণ ক্ষমতা নষ্ট হওয়ার কারণ কী? পরিবেশকর্মীদের একাংশ বলছেন, এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নির্মাণকাজের জন্যও এমন হতে পারে। যদিও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য বনপাল অতনু রাহা বলেন, ‘‘নির্মাণকাজ মুখ্য কারণ বলে মনে হয় না। হয়তো কোনও সময়ে ঝড়ে গাছের ক্ষতি হয়েছিল। ফলে গোড়া আলগা হয়ে থাকতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy