Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ‘হুমকি’, গ্রেফতার দুই

শনিবার রাতের ঘটনার নেপথ্যে বাবুর হাত রয়েছে বলে দাবি প্রদীপের মা মিনু নায়েকের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বড় ছেলেকে মারার জন্যই ওরা এসেছিল। না হলে দু’বছর তো পাড়া শান্ত ছিল! সন্ধ্যা থেকে বাড়ির আশপাশে দেবুকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এ ভাবে কত দিন?’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০২:৪৫
Share: Save:

কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র গুঁজে এলাকায় ঘুরছিল দুই দুষ্কৃতী। সমাজবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে এক যুবকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকাতে পিছপা হল না তারা। দমদম পার্ক অঞ্চলের আরতি হরিজনপল্লিতে শনিবার রাতের এই ঘটনায় শেষে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দুই দুষ্কৃতীকে ধরে লেক টাউন থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন বাসিন্দারা।

পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত যুবক প্রদীপ নায়েকের অভিযোগ, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দেবু মুখোপাধ্যায় নামে এক অপরিচিত যুবককে স্থানীয় বাসিন্দা গাজি ওঁরাওয়ের সঙ্গে এলাকায় সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, দেবুর বাড়ি খড়দহে। রবিবার প্রদীপ বলেন, ‘‘পাড়ার দোকানে দেবুর কোমরের বাঁ দিকটা যে ভাবে উঁচু হয়ে ছিল, তাতেই সন্দেহ দানা বাঁধে। এক ঝলক দেখে মনে হল ওটা আগ্নেয়াস্ত্র। কোমরের দিকে তাকিয়ে আছি দেখে দেবু গাজির সঙ্গে চলে গেল।’’

সন্দেহের অবসান ঘটাতে গাজির ঘরে যান প্রদীপ। কথা বলতে বলতে দেবুর কোমরে হাত দেন তিনি। অনুমান যে ঠিক, তা আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি। মুহূর্তের মধ্যে দেবুকে এমন ভাবে প্রদীপ জাপটে ধরার চেষ্টা করেন, যাতে সে পালিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু নিজেকে ছাড়িয়ে দেবু কোমরের আগ্নেয়াস্ত্র প্রদীপের মাথায় ঠেকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে কোনও রকমে আগ্নেয়াস্ত্র মাথা থেকে সরিয়ে সেখান থেকে চম্পট দেন প্রদীপ। ততক্ষণে পাড়ার লোক জড়ো হয়ে গিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, গাজির ঘরের খাটের তলা থেকে দেবুকে পাকড়াও করেন বাসিন্দারা। গাজি পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে। বাসিন্দাদের দাবি, গাজি এবং দেবুর সঙ্গে এক মহিলা-সহ আরও এক জন ছিল। সুযোগ বুঝে তারাও চম্পট দেয়।

ঘটনার পিছনে দু’বছর আগের ত্রাসের পরিবেশের ছায়া দেখছে আক্রান্তের পরিবার। বস্তুত, দুষ্কৃতীকে ধরতে প্রদীপের সক্রিয়তার ক্ষেত্রেও সেই ঘটনার যোগ রয়েছে। কী ঘটেছিল দু’বছর আগে? স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ প্রসাদের দাবি, ‘‘ওই এলাকায় বাবু নায়েক নামে এক দুষ্কৃতীর দাপট ছিল। বাবুর জন্য পাড়ার নাম খারাপ হচ্ছিল। তাই প্রদীপের দাদা উজ্জ্বল নায়েক বাবু ও তার সঙ্গীদের পাড়া ছাড়া করে। সেই রাগে উজ্জ্বলকে মারার পরিকল্পনা করে বাবু। সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এর পরে বাবু গ্রেফতার হয়।’’ সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে বাবু। শনিবার রাতের ঘটনার নেপথ্যে বাবুর হাত রয়েছে বলে দাবি প্রদীপের মা মিনু নায়েকের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বড় ছেলেকে মারার জন্যই ওরা এসেছিল। না হলে দু’বছর তো পাড়া শান্ত ছিল! সন্ধ্যা থেকে বাড়ির আশপাশে দেবুকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এ ভাবে কত দিন?’’ স্থানীয় বাসিন্দা অনু নায়েকের বক্তব্য, ‘‘এই পরিবার বাবুদের এলাকা ছাড়া করেছে বলে এত রাগ। আমরা সকলে একজোট না হলে রক্তারক্তি আটকানো যেত না।’’

ধৃত গাজি এবং দেবুকে এ দিন বিধাননগর মহকুমা আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এলাকাবাসীদের বক্তব্য প্রসঙ্গে বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, কী উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ অভিযুক্তেরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ সমীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকার শান্ত পরিবেশ যাতে কোনও ভাবেই নষ্ট না হয়, পুলিশ প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Threat Gun
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE