Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তরুণীর মৃত্যুতে ধৃত দুই বন্ধু, আটক আরও তিন

নাবালক দাবি করেছে, অতিরিক্ত মদ খাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন সায়নী। স্টেশনের কাছেই পাপাইয়ের বাড়ি। অসুস্থ সায়নীকে ধরাধরি করে পাপাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। 

সায়নী শীলের (বাঁ দিকে) মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার পাপাই ঘোষ (ডান দিকে)। শুক্রবার, আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

সায়নী শীলের (বাঁ দিকে) মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার পাপাই ঘোষ (ডান দিকে)। শুক্রবার, আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪৯
Share: Save:

রেল স্টেশন লাগোয়া রাস্তা। মাঝরাতের আলো-আঁধারিতে দেখা গিয়েছিল, সেই রাস্তা ধরেই কয়েক জন পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এক তরুণীকে। বুধবার রাতে সেই দৃশ্য দেখেছেন আগরপাড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দা। সায়নী শীল (১৮) মৃত্যু-তদন্তে এমন তথ্যই হাতে এসেছে খড়দহ থানার পুলিশের। যদিও কী ভাবে সায়নীর মৃত্যু হল, সেই ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি।

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সায়নীর এক বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতের আইনজীবীর দাবি, সে নাবালক। তার সঙ্গে সায়নীর সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। পাকড়াও করা হয়েছে পাপাই ঘোষ নামে এক তরুণকেও। বুধবার রাতেই সায়নীর বাড়ির লোকজন খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ আরও তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। সকলেই আগরপাড়ার বাসিন্দা।

শুক্রবার ধৃত দু’জনকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক পাপাইকে পাঁচ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন। অন্য জনের আইনজীবী দাবি করেন, তাঁর মক্কেল নাবালক। বিচারক সেই দাবির পক্ষে নথি জমা করতে বলেছেন। তত দিনের জন্য ধৃতকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে ঠাকুর দেখার সময়ে সায়নীর সঙ্গে ছিল সেই নাবালক ও তার কয়েক জন বন্ধু। বেশি রাতের দিকে সকলেই আগরপাড়া স্টেশনে বসে মদ খায় বলে জানা গিয়েছে। নাবালক দাবি করেছে, অতিরিক্ত মদ খাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন সায়নী। স্টেশনের কাছেই পাপাইয়ের বাড়ি। অসুস্থ সায়নীকে ধরাধরি করে পাপাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

তার পরে কী হয়েছিল?

এই জায়গায় এসেই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। ধৃত নাবালক ও পাপাই-সহ যে পাঁচ জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, প্রত্যেকের বয়ানেই প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে। নাবালক দাবি করেছে, সুস্থ হওয়ার পরে তারা সায়নীকে তার মামার বাড়ির গলি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এসেছিল।

বুধবার রাতে আগরপাড়ার মামাবাড়ি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন সোদপুরের বাসিন্দা সায়নী। তার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীটি। বৃহস্পতিবার বিকেলে আগরপাড়ারই একটি পুকুর থেকে মেলে তাঁর দেহ। তার আগে সকালে ওই পুকুরের ধার থেকে মিলেছিল সায়নীর মোবাইল ফোন ও জুতো।

বন্ধুরা সায়নীকে তার মামাবাড়ির কাছে পৌঁছে দিলেও তিনি বাড়িতে ঢোকা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করেনি কেন? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। প্রশ্ন উঠেছে, সায়নী পুকুরপাড়ে এলেন কী করে? পুলিশের ধারণা, জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে সায়নীর। কিন্তু তিনি জলে পড়লেন কী ভাবে? পা হড়কে পড়ে গেলে তাঁর জুতো জোড়া পুকুরপাড়ে সাজানো থাকল কী করে? জলে তিনি নিজে পড়েছিলেন, না কেউ তাঁকে ফেলে দিয়েছিল?

ধৃতদের জেরা করে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (‌জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। অনেক তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। তবে তদন্তের মাঝপথে সে সব বলা ঠিক হবে না। কিছু দিনের মধ্যেই পুরো ঘটনা জানা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Unnatural Death Sodepur Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE