Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হটপ্যাড থেকে ধোঁয়া, দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু দুই বৃদ্ধের

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম শ্যামসুন্দর ঘোষ (৮২) এবং গোলোক ঘোষ (৭৮)। সম্পর্কে তাঁরা দাদা-ভাই। দু’জনেই অবিবাহিত। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, রাতে ওই দু’জন হটপ্যাড নিয়ে শুয়েছিলেন। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরে অনুমান, তা থেকেই কোনও ভাবে শর্ট সার্কিট হয়ে যায়।

মর্মান্তিক: এই ঘর থেকেই মেলে দুই বৃদ্ধের দেহ। নিজস্ব চিত্র

মর্মান্তিক: এই ঘর থেকেই মেলে দুই বৃদ্ধের দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০২
Share: Save:

ঘরভর্তি ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধ। ভিতরে বিছানায় শুয়ে আছেন দুই বৃদ্ধ। কারও দেহে সাড় নেই। রবিবার ভোরে বেলেঘাটার ১৩১/এইচ/৩২, রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র রোডের একটি বাড়ি থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হল ওই দুই বৃদ্ধের দেহ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম শ্যামসুন্দর ঘোষ (৮২) এবং গোলোক ঘোষ (৭৮)। সম্পর্কে তাঁরা দাদা-ভাই। দু’জনেই অবিবাহিত। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, রাতে ওই দু’জন হটপ্যাড নিয়ে শুয়েছিলেন। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরে অনুমান, তা থেকেই কোনও ভাবে শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ থাকায় ধোঁয়া বেরোনোর সুযোগ পায়নি। তাতেই দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন শ্যামসুন্দরবাবু ও গোলোকবাবু। তবে তাঁদের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, অবিবাহিত গোলোকবাবু ১৯৯১ সাল থেকে এন্টালির একটি রঙের দোকানে হিসেবরক্ষকের কাজ করতেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে গত বছরের পুজোর পর থেকে আর ওই কাজ করতে পারতেন না। তখন থেকেই তিনি শয্যাশায়ী। আত্মীয়স্বজনেরাও দেখাশোনা করতেন না ওই দুই বৃদ্ধের। গোলোকবাবু যে দোকানে কাজ করতেন, তার মালিকের ছেলে সঞ্জয় রায় এবং তাঁর স্ত্রী সন্দীপা দু’জনের দেখভাল করতেন। পড়শিরা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিদিনই তাঁরাই পালা করে দুই ভাইকে দেখে যেতেন।

রবিবার সন্ধ্যায় সন্দীপা জানান, দোকানে দীর্ঘ ২৮ বছর কাজ করায় গোলোকবাবুর সঙ্গে তাঁদের প্রায় আত্মীয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। আর সেই সূত্রেই তাঁর দাদা শ্যামসুন্দরবাবুর সঙ্গে পরিচয় তাঁদের। সন্দীপা আরও জানিয়েছেন, গোলোকবাবু এবং শ্যামসুন্দরবাবু আগে মৌলালির কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সেই বাড়ি প্রোমোটার নিয়ে নেওয়ায় বছর পাঁচেক আগে তাঁরা বেলেঘাটায় উঠে যান। কয়েক মাস আগে নিজেরাই রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র রোডের ওই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন।

প্রতিবেশীদের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, গোলোকবাবু অসুস্থ হয়ে পড়লেও জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শ্যামসুন্দরবাবু হাঁটাচলা করতে পারতেন। মাঝেমধ্যে পাড়ায় বেরোতেন, দোকান-বাজারও করতেন। কিন্তু হঠাৎই বাজারে পড়ে গিয়ে চোট পান। হাসপাতালে ভর্তি করে অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। গত শুক্রবার বাড়ি ফেরেন শ্যামসুন্দরবাবু। তবে অস্ত্রোপচারের পর থেকে তিনিও খুব একটা হাঁটাচলা করতে পারতেন না।

এর পরে স্থানীয় আয়া সেন্টার থেকে দু’জনকে দেখভালের জন্য আয়া আসতেন। তিনি থাকতেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। তবে ওই আয়া সেন্টারটি পাড়াতেই হওয়ায় মাঝেমধ্যে রাতেও এক জন আয়া এসে গোলোকবাবু ও শ্যামসুন্দরবাবুকে দেখে যেতেন। দুই ভাই খুব একটা হাঁটাচলা করতে না পারায় বাইরে থেকে তাঁদের ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে রেখে যেতেন আয়া। ফ্ল্যাটের বাকি বাসিন্দা এবং পড়শিরাও কখনও কখনও দু’জনকে দেখে যেতেন, খোঁজখবর নিতেন।

স্থানীয় ওই আয়া সেন্টার সূত্রে রবিবার জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে আয়া যখন যান, তখনও দুই বৃদ্ধ জেগে ছিলেন। আয়া বেরোনোর আগে তিনি হটপ্যাডের সুইচ বন্ধ করে দেন। তাতে এক ভাই রেগেও গিয়েছিলেন। আয়া সেন্টারের তরফে দাবি করা হয়েছে, রাতে হয়তো হটপ্যাডের সুইচ আবার অন করেছিলেন তাঁরা। তা থেকে কোনও ভাবে শট সার্কিট হয়ে ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল ঘর। পড়শিরা জানিয়েছেন, তাঁরা যখন ধোঁয়া বেরোতে দেখে ঘর খোলেন, সেখানে ঢোকা যাচ্ছিল না। হটপ্যাড অন করে দুই ভাইয়ের শোওয়ার অভ্যাসের কথা জানিয়েছেন সন্দীপাও। তিনি বলেন, ‘‘আমি এক রাতে গিয়ে দেখে বারণ করেছিলাম। মনে হচ্ছে রাতে হটপ্যাড বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন ওঁরা। না হলে এমন কেন ঘটবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Old People Suffocation Hotpad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE