ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে গুলি ছোড়ার এই ছবি। নিজস্ব চিত্র
পরপর দু’টি গুলির শব্দ!
হকচকিয়ে উঠলেন বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা অতিথি থেকে বাড়ির লোকজন। খোশগল্প থামিয়ে অনেকেই ভাবলেন, বাড়িতে বুঝি ডাকাত পড়েছে। কিন্তু না, হুড়মুড়িয়ে বাইরে আসতেই ভুল ভাঙল সকলের। ডাকাত বা দুষ্কৃতী হামলা নয়, বরং আনন্দে মাতোয়ারা হয়েই নিরাপত্তারক্ষীর হাতে থাকা একনলা বন্দুক থেকে শূন্যে ছোড়া হয়েছে গুলি।
শহর ও শহরতলির অনেক বিয়েবাড়িতেই এখন বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষীর দেখা মেলে। কিন্তু বাঙালি বিয়েতে আকাশে গুলি ছোড়ার এমন কাণ্ড দেখে তাজ্জব অনেকেই। তত ক্ষণে অবশ্য গুলি চালানোর
ছবি উঠে গিয়েছে আমন্ত্রিতদের মোবাইলে। আর সেটাই পরে ছড়িয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। পুলিশের কাছে খবর পৌঁছতেই তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে পাত্রের জামাইবাবু নান্টু দে ও এক নিরাপত্তারক্ষী অশোক সিংহের বিরুদ্ধে। তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। রবিবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার নিমতায়।
বিহার বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে বিয়েতে জামাইবরণের সময়ে শূন্যে গুলি ছোড়ার চল রয়েছে। যার জেরে ওই সমস্ত রাজ্যে
প্রাণও গিয়েছে অনেকের। বিহারে ইতিমধ্যেই বিয়ের অনুষ্ঠানে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালানো নিষিদ্ধ
হয়েছে। তার পরেও যে এমন ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তারই প্রমাণ মিলেছিল গত ৯ মার্চ। ওই দিন পটনার ভোজপুর জেলার জামুয়ায় এক বিয়েতে বরযাত্রী আসার পরে রিভলভার থেকে কেউ গুলি চালায়। প্রথম গুলিটিতে কিছু না হলেও দ্বিতীয়টি রিভলভারের মধ্যে আটকে যায়। সেটি বার করতে গিয়ে গুলিটি পাত্রীর পিসির ছেলের নাকের পাশ দিয়ে ঢুকে যাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিনই পটনার দরিয়াপুরে জামাইবরণের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাত্রীর মামির মৃত্যু হয়। এর আগেও ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশে জামাইবরণের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল খোদ বরের। আর একটি অনুষ্ঠানে মারা গিয়েছিল আট বছরের এক শিশু। হরিয়ানাতেও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন জামাই।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত রবিবার নিমতা থানার প্রতাপনগরের বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাসের বৌভাতের অনুষ্ঠান ছিল। তিনি জানিয়েছেন, কোনও
অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া না পেয়ে নিজের বাড়ির কাছেই ফাঁকা জায়গায় ম্যারাপ বেঁধে বৌভাতের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে অনেকেই সোনার গয়না পরে আসবেন ভেবে নিরাপত্তার জন্য দু’জন সশস্ত্র রক্ষীকে মোতায়েন করেছিলেন বিশ্বজিৎ। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, রাতের খাওয়া শেষ হওয়ার পরে মণ্ডপের বাইরে রাস্তায় তখন অতিথি, আত্মীয়দের ভিড়। সেখানেই কালোর উপরে সাদা ডোরা কাটা গেঞ্জি পরে এক ব্যক্তি কয়েক জনের অনুরোধে শূন্যে গুলি ছুড়লেন। যা দেখে অনেকে বললেন, ‘লাভলি’। আবার সেখানে উপস্থিত লোকজন একে অপরকে গুলি চালানোর অনুরোধও করছেন। দু’টি গুলি চালানোর পরে অবশ্য কয়েক জন এসে আর গুলি চালাতে বারণ করলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে আচমকা গুলির শব্দ পেয়ে তাঁরাও চমকে উঠেছিলেন। পরে জানতে পারেন, বিয়েবাড়ির লোকেরা নিজেরাই শূন্যে গুলি ছুড়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, নিরাপত্তারক্ষী অশোককে জেরা করে জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে বাড়ি ফিরবেন বলে তাঁরা পোশাকও পাল্টে ফেলেছিলেন। সেই সময়ে নান্টুবাবুর কথাতেই তিনি গুলি ছোড়েন। তবে বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘আমরা কাউকে গুলি চালাতে বলিনি। পরিচিত এক ব্যক্তির নিরাপত্তা সংস্থা রয়েছে। তিনিই বিনা পয়সায় দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়েছিলেন। আচমকাই এক রক্ষী গুলি ছোড়ার পরে আমরাই তাঁকে বারণ করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy