Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পথে পড়ে অচৈতন্য বৃদ্ধ, অটো থামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচাল দুই কিশোরী

অসুস্থ মানুষটাকে এড়িয়ে যায়নি শুধু ওরা দু’জন। অটো থামিয়ে তাতে বৃদ্ধকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায় ট্যাংরার মেহের আলি লেনের দুই কিশোরী। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে।

ত্রাতা: রিজওয়ানা ও জয়া। ছবি: সুদীপ ঘোষ

ত্রাতা: রিজওয়ানা ও জয়া। ছবি: সুদীপ ঘোষ

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:০৩
Share: Save:

রাস্তায় পড়ে রয়েছেন অচৈতন্য এক বৃদ্ধ। পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ি। পথচারীদের কেউ কেউ উঁকি মেরেও দেখছেন। ব্যস, ওইটুকুই।

অসুস্থ মানুষটাকে এড়িয়ে যায়নি শুধু ওরা দু’জন। অটো থামিয়ে তাতে বৃদ্ধকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায় ট্যাংরার মেহের আলি লেনের দুই কিশোরী। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে।

পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতালে অসুস্থকে ভর্তি করা, ওষুধ কিনে আনা থেকে দেখভাল, সবই করে চলেছে ১৭ বছরের দুই কন্যা— রিজওয়ানা খাতুন এবং জয়া শর্মা। পাশাপাশি বাড়িতে থাকে তারা। অসুস্থতার কারণে রিজওয়ানা নবম শ্রেণির পর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। জয়া দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

মঙ্গলবার বিকেলে রিজওয়ানা-জয়াদের পাওয়া গেল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে। দুই বান্ধবী জানাল, সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ তারা দু’জনে বেরিয়েছিল। দেখে, মেহের আলি লেনে এক বৃদ্ধ পড়ে রয়েছেন। জয়া বলে, ‘‘এক জন বুড়ো মানুষ ওভাবে পড়ে রয়েছেন! আমরা কাছে গিয়ে প্রথমে ওঁর চোখেমুখে জল দিই। জ্ঞান ফেরেনি। তখন বুঝলাম, ওঁকে হাসপাতালেই নিয়ে যেতে হবে।’’ কিন্তু আশপাশের লোকজনের সাহায্য চাইলে খালি হাতেই ফিরতে হয় দু’জনকে।

রিজওয়ানার কথায়, ‘‘প্রথমে কেউ কেউ এগিয়ে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে শুনেই চলে যান তাঁরা। আমরা এক জন অসুস্থ মানুষকে রাস্তায় মরতে দিতে পারিনি। মনে হয়েছে, আমাদের বাড়ির কারও যদি এমন হয়, আর লোকজন ফেলে চলে যায়!’’ তখন পাড়ার মোড়ে ছোটে দুই কিশোরী। অটো ভাড়া করে বৃদ্ধকে নিয়ে যায় হাসপাতালে। সেখানে আউটপোস্টে পুলিশকর্মীদের সব কিছু জানানো হয়। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বৃদ্ধকে।

এ দিকে, খোঁজ করে পুলিশ জানতে পারে, বৃদ্ধের নাম বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য। বাড়ি ট্যাংরার বিচালিঘাট রোডে, থাকেন একাই। বিয়ে করেননি। এক দিদি রয়েছেন। তাঁর বাড়ি মেহের আলি লেনে। পুলিশ রিজওয়ানা এবং জয়াকে নিয়ে দিদির বাড়িতে গেলেও বিফল হয়ে ফিরতে হয়। রিজওয়ানা-জয়ার কথায়, ‘‘ওঁর দিদি দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। তখন ঠিক করি, আমরাই ওঁর চিকিৎসার জন্য যা করার করব।’’ তবে হাসপাতালের কর্মী থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষী— সকলেই তাদের সাহায্য করছেন বলে জানিয়েছে কিশোরীরা।

রিজওয়ানা এবং জয়া— দু’জনেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। রিজওয়ানা জানায়, বাবা-মা প্রথমে থানা-পুলিশের ভয় পেলেও পরে হাসপাতালে যাতায়াতে বাধা দেননি। জয়া বাড়িতে কিছু না বলেই হাসপাতালে চলে এসেছিল। রাতে গিয়ে সব বলে। প্রথমে পুলিশের কথা ভেবে তার বাবা-মা ভয় পেয়েছিলেন। পরে মেয়ের দৃঢ়তার কাছে হার মেনেছেন। আর হাসপাতালে দিনরাত পড়ে থাকা সেই কন্যারা বলছে, ‘‘দাদুকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়ে তবেই আমাদের ছুটি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tangra ট্যাংরা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE