Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু, দেহ মিলল শৌচাগারে

পুলিশ সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে বেহালার মহেন্দ্র ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা বিশ্বজিতের সঙ্গে বিয়ে হয় ঋতুপর্ণার। তাঁদের আট বছরের একটি ছেলে রয়েছে। মঙ্গলবার ভাইফোঁটা উপলক্ষে ছেলেকে নিয়ে শ্যামবাজারের পিত্রালয়ে গিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা।

ঋতুপর্ণা দাস

ঋতুপর্ণা দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫২
Share: Save:

শ্যামবাজারের পিত্রালয়ে ভাইফোঁটা দিয়েই মঙ্গলবার রাতে তড়িঘড়ি বেহালায় শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন দিদি। রাতটুকু কাটতে না কাটতেই বুধবার ভোরে ভাই ঋতুরাজ দাসের কাছে ফোন আসে, মৃত্যু হয়েছে তাঁর দিদি ঋতুপর্ণা দাসের (২৮)। নিজের ফ্ল্যাটের শৌচাগার থেকেই তাঁর গলায় ফাঁস লাগানো মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। ময়না-তদন্তের পাশাপাশি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে বেহালার মহেন্দ্র ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা বিশ্বজিতের সঙ্গে বিয়ে হয় ঋতুপর্ণার। তাঁদের আট বছরের একটি ছেলে রয়েছে। মঙ্গলবার ভাইফোঁটা উপলক্ষে ছেলেকে নিয়ে শ্যামবাজারের পিত্রালয়ে গিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা। তবে ওই রাতেই শ্বশুরবাড়ি ফিরে যান তিনি। ঋতুপর্ণার বাড়ির লোকজনের দাবি, স্বামী সঙ্গে না যাওয়ায় মেয়ে রাতেই শ্বশুরবাড়ি ফিরে যান।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মৃতার শাশুড়ি রেখারানি দাস দাবি করেছেন, ঋতুপর্ণা যে ফিরে আসবেন, তা জানতেন না তাঁরা। খাবার আনানোর সংস্থা থেকে ওই রাতে খাবারের ব্যবস্থা করেন বিশ্বজিৎ। তার মধ্যেই শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীয়ের ঝগড়া। রেখারানির কথায়, ‘‘আমার ছেলে কেন সঙ্গে যায়নি, তা নিয়ে ঋতুপর্ণা ঝগড়া শুরু করে। রাতে আমাদের কারওরই খাওয়া হয়নি। নাতিকে শুধু খাবার খাইয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ বৃদ্ধা দাবি করেছেন, তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ছেলে তাঁকে ডেকে জানান, ঋতুপর্ণা আত্মঘাতী হয়েছেন। বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘শৌচাগারে ঢুকে শাওয়ারের সঙ্গে গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়েছিল ঋতুপর্ণা। কোনওমতে আমি ওই কাপড় ছিঁড়ে দেহ নামিয়ে পুলিশে খবর দিই।’’

পর্ণশ্রী থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, ফোন পেয়ে বিশ্বজিৎদের ফ্ল্যাটে গিয়ে তিনি দেখেন, শৌচাগারের দরজার সামনে একটি সোফায় পড়ে রয়েছে ঋতুপর্ণার সংজ্ঞাহীন দেহ। পুলিশই দেহটি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি ময়না-তদন্তের রিপোর্টের জন্যও অপেক্ষা করছেন তদন্তকারীরা। ওই আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা লম্বা একটি ছেঁড়া কাপড় উদ্ধার হয়েছে। ভারী চেহারার ঋতুপর্ণা কী করে ওই কাপড়ের সাহায্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে থাকতে পারলেন, সেটাই প্রশ্ন। গলায় ফাঁসের চিহ্ন ছিল। তবে মৃতার গায়ে অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।’’ মৃতার ভাই ঋতুরাজ বলেন, ‘‘জামাইবাবু আর দিদির ঝগড়া হয়েছিল শুনেছি। ময়না-তদন্তের রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’’

এ দিন বেহালায় ঋতুপর্ণার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে আত্মীয়দের ভিড় রয়েছে। তবে তাঁর বছর আটেকের ছেলেকে মায়ের মৃত্যুর কথা জানানো হয়নি। টিভি চালিয়ে একটি ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। মাঝেমধ্যেই সে খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে, ‘‘মা কোথায়? বাবাই বা কোথায় গেল! ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই ওদের আর দেখিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Behala Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE