Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুজোয় রমরমা ভেজাল খানার, নির্বিকার পুলিশ

কোন কোন সংস্থা এ সব বিষাক্ত খাবার বিক্রি করছে, তা-ও জেনেছে। তার পরেও পুজোর মুখে ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে খাস কলকাতায় বা শহরের আশপাশে কোনও পুলিশি অভিযান হল না। পুজোর মধ্যেও যে হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইবি-র শীর্ষ কর্তারা।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪৯
Share: Save:

কোথাও বিরিয়ানিতে দেওয়া হচ্ছে ক্ষতিকর রং। এমন রং, যা ব্যবহার করা হয় শিল্প কারখানায়। ডালমুট, চানাচুর, ভুজিয়া মুচমুচে রাখতে মেশানো হচ্ছে মার্বেলের গুঁড়ো। রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা বা ইবি প্রাথমিক ভাবে এই সব তথ্য পেয়েছে। কোন কোন সংস্থা এ সব বিষাক্ত খাবার বিক্রি করছে, তা-ও জেনেছে। তার পরেও পুজোর মুখে ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে খাস কলকাতায় বা শহরের আশপাশে কোনও পুলিশি অভিযান হল না। পুজোর মধ্যেও যে হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইবি-র শীর্ষ কর্তারা।

মঙ্গলবার, ষষ্ঠী থেকে শনিবার, দশমী— এই পাঁচ দিন উৎসবের আনন্দে বহু মানুষেরই বাড়িতে রান্নার পাট কার্যত নেই। এই সময়ে অন্তত এক বেলা তো বটেই, অনেকে দুপুরে-রাতে, এমনকী কেউ কেউ প্রাতরাশও বাইরে সারেন। সেই জন্য রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানগুলিতে বিক্রি যেমন কয়েক গুণ বাড়ে, তেমনই শুধু পুজোর জন্য পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন বড় পুজো মণ্ডপকে ঘিরে বসে যায় খাবারের অস্থায়ী স্টল। সেই জন্য ভেজাল ও খারাপ খাবার বিক্রি করে যারা ব্যবসা করে, তাদের এই সময়ে রমরমা। তাই সাধারণ মানুষকে বিপদ বা অসুখ হওয়া থেকে বাঁচাতে এই সময়ে ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রয়োজনীয়তার কথা পুলিশের একাংশ জানাচ্ছেন।

কিন্তু ইবি-র এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এখন আমরা অভিযান চালালে সেটা পুজোর আবেগের ক্ষতি করা হবে। সেটা ঠিক হবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ এখন একটা অন্য ভাব, একটা অন্য ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। তাতে বিঘ্ন ঘটবে, এমন কিছু করা উচিত হবে না।’’

অথচ, দমদমের একটি রেস্তোরাঁয় রান্না করা মুরগির ঠ্যাঙে কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া আর ক্ষীরে ফর্মালিন মেলার পরে ইবি-র তরফেই অন্য রকম বলা হয়েছিল। ইবি-র
এক উচ্চপদস্থ অফিসার তখন বলেছিলেন, ‘‘ভেজাল, বাসি ও খারাপ খাবারের যা বহর, তাতে পুজোর সময়ে বিপর্যয় হতে পারে। ওই সময়ে বহু মানুষ বাইরে খাওয়াদাওয়া করেন। তাই পুজোর মুখে হোটেলে, রেস্তোরাঁয় খারাপ খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে কঠোর ব্যবস্থা
নিতে হবে।’’

তবে সেই অভিযান শেষ পর্যন্ত হয়নি। শুধু ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর, জেলার বিভিন্ন পদমর্যাদার ইবি অফিসারদের ভবানী ভবনে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, রেস্তোরাঁ তো বটেই, পুজো উপলক্ষে যে সব মেলা বসে, সেখানে বিক্রি হওয়া খাবারের উপরেও নজর রাখতে হবে।

খাস কলকাতায় চার-পাঁচ মাস আগে একটি নামী রেস্তোরাঁয় হানা দিয়ে দেখা গিয়েছিল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রান্না হচ্ছে, কাজ করছে না রেফ্রিজারেটর। তার পরেও পুজোয় ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান না চালানোর পক্ষে অন্য কারণ দেখাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পুজোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও যানবাহন চলাচল ঠিক রাখাই অগ্রাধিকার পায়। এই সময়ে ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর মতো লোকবল থাকে না।’’ যে কারণে খিদিরপুরের গৃহবধূ কস্তুরী সিংহ পাড়ার স্টল থেকে গরম গরম মাছভাজা কিনে খেতে গিয়ে পচা বলে বুঝতে পারলেও বিহিত পান না।

এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘ভেজাল এবং বাসি-পচা খাবার নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন যে আসলে উদাসীন, সেটা তাঁদের মনোভাব থেকেই স্পষ্ট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE