নিরামিষেও রক্ষা নেই! দক্ষিণ দমদমের খাদ্য অভিযানের রিপোর্টের সারমর্ম অন্তত সে রকমই।
ভাগাড়-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে গত ১১ মে অমরপল্লি সংলগ্ন শপিং মলের ফুডকোর্ট, রেস্তরাঁ এবং নয়াপট্টির কাছে একটি চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় অভিযান চালিয়েছিল দক্ষিণ দমদম পুরসভা। সেই অভিযান থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে যে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর ব্যাক্টিরিয়া মিলেছে, তা আগেই জানা গিয়েছিল। সেই রিপোর্টে কী রয়েছে, শুক্রবার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে কাউন্সিলরদের তা জানানো হয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির পরীক্ষার নিরিখে জনস্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, রং দে বসন্তী ধাবা থেকে সংগৃহীত আলু-পনিরে কলিফর্ম মিলেছে। ক্ষীরে পাওয়া গিয়েছে কলিফর্ম এবং ই-কোলাই। তার থেকে কী কী রোগ হতে পারে, তা-ও পুরসভার বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরসভার দাবি, সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভজহরি মান্না থেকে যে বেকড রসগোল্লা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, তা-ও নিরাপদ নয়। তাতে মিলেছে কলিফর্ম। পাশাপাশি পুরসভার দাবি, সরকারি রিপোর্টে বলা হয়েছে, সর্বেশ্বরী প্রন ফ্যাক্টরি থেকে সংগৃহীত কাঁচা চিংড়ির নমুনা অত্যন্ত নিম্নমানের ছিল।
যার প্রেক্ষিতে পুরপ্রধান বলেন, “বিভিন্ন রেস্তরাঁ থেকে সাতটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার মধ্যে রং দে বসন্তী ধাবার ক্ষীর এবং আলু-পনির, ভজহরি মান্নার রসগোল্লা খারাপ ছিল বলে সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্টে জানানো হয়েছে। প্রন ফ্যাক্টরির কাঁচা চিংড়িও নিম্নমানের। এদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার পথে হাঁটছি আমরা। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারকে চিঠি দেব আইন মেনে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।” রং দে বসন্তী ধাবা কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্টের সঙ্গে একমত নন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের খাবারের গুণমান অত্যন্ত ভাল। কোন পদ্ধতিতে খাবার সংগ্রহ করা হয়েছিল, কতদিন পরে সেগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে, তা দেখা উচিত।” ভজহরি মান্নার কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘গত ১১ মে দক্ষিণ দমদমের শপিং মলে আমাদের আউটলেট থেকে বেকড রসগোল্লার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বেকড রসগোল্লা শহরের প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান থেকে কিনি। নিজেরা তৈরি করি না। আজ পর্যন্ত কোনও অভিযোগও পাইনি। তা ছাড়া, পুরসভার তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। যা জেনেছি, সবই সংবাদমাধ্যম থেকে। সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্টের প্রতিলিপি হাতে পেলে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে সুবিধা হয়।” সর্বেশ্বরী প্রন ফ্যাক্টরির কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
সেই রিপোর্ট কার্ড।
রং দে বসন্তী ধাবার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পুর-জনস্বাস্থ্য বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, এমন তো নয়। তা হলে অন্য কাউন্টার থেকে সংগৃহীত নমুনায় কিছু পাওয়া গেল না কেন?”
বস্তুত এ দিন পুরসভার তরফে যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, তা সরকারি পরীক্ষাগারের মূল রিপোর্টের প্রতিলিপি নয়। মূল রিপোর্টের তথ্যের ভিত্তিতে পুরসভা অভিযানের ফলাফল প্রকাশ করেছে। অভিযুক্ত রেস্তরাঁর প্রতিনিধিদের একাংশের প্রশ্ন, কেন প্রকাশিত রিপোর্টে সরকারি পরীক্ষাগারের কোনও সিলমোহর নেই। দেবাশিস বলেন, “বোঝার সুবিধার্থে এ ভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। কী ধরনের রোগ হতে পারে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy