Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

দূষণ-লড়াইয়ে ভিক্টোরিয়া, জাদুঘরও

দর্শকদের পোশাক, জুতোর সঙ্গে লেগে থাকা ধুলো ক্ষতি করছে না তো দুষ্প্রাপ্য নথি এবং তৈলচিত্র-সহ মূল্যবান সামগ্রীর? দর্শকেরা যে আসছেন, তাঁদের সঙ্গে কত পরিমাণ ধুলো ভিতরে আসছে—এ বার বিজ্ঞানীদের সাহায্যে সেই সমীক্ষা করতে চাইছেন ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৭
Share: Save:

দর্শকদের পোশাক, জুতোর সঙ্গে লেগে থাকা ধুলো ক্ষতি করছে না তো দুষ্প্রাপ্য নথি এবং তৈলচিত্র-সহ মূল্যবান সামগ্রীর? দর্শকেরা যে আসছেন, তাঁদের সঙ্গে কত পরিমাণ ধুলো ভিতরে আসছে—এ বার বিজ্ঞানীদের সাহায্যে সেই সমীক্ষা করতে চাইছেন ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। কারণ, শহরের ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশবিদদেরই নয়, চিন্তায় রাখছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষকেও। শুধু তা-ই নয়, দূষণ সম্পর্কে জাদুঘরের সব কর্মীকে সচেতন করার জন্যও আয়োজন করা হচ্ছে বিশেষ কর্মশালার। যেখানে মূল্যবান সামগ্রীকে কী ভাবে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে, সেই পাঠ দেওয়া হবে।

ভারতীয় জাদুঘরের অধিকর্তা রাজেশ পুরোহিত বলেন, ‘‘দর্শকদের সঙ্গে কতটা ধুলো ঢোকে মিউজিয়ামের ভিতরে, কোন কোন জিনিস থেকে মূল্যবান সামগ্রীর ক্ষতি হয়, সে সম্পর্কে আমরা একটা সমীক্ষা করতে চাইছি। এ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। কিন্তু দূষণ বেড়ে চলায় এই ধরনের সমীক্ষা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ, রাস্তার ধারেই অবস্থিত এই মিউজিয়াম।’’ জাদুঘরের সংরক্ষণ পরামর্শদাতা তথা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ন্যাশনাল মিউজিয়ামের প্রাক্তন সংরক্ষণ অধিকর্তা আর পি সবিতা বলেন, ‘‘পাণ্ডুলিপি, তৈলচিত্র, যে কোনও পুরনো সামগ্রীরই ক্ষতি হয় ধুলোয়। যে ভাবে দূষণ বাড়ছে, আমাদেরও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।’’

তবে শুধু ভারতীয় জাদুঘরই নয়, শহরের দূষণ চিন্তায় রেখেছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষকেও। এমনিতে ভিক্টোরিয়া চত্বরের ভিতরেই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে বায়ুর গুণমান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বয়ংক্রিয় ‘স্টেশন’ রয়েছে। ফলে সেখান থেকে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০), অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম২.৫)-সহ তার গুণমান সম্পর্কে সব তথ্যই পাওয়া যায়। সে দিকে নজর রাখার পাশাপাশি রয়েছে মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পরিবেশ কমিটিও। তাই ভিক্টোরিয়ার সাদা মার্বেলের তো বটেই, ভিতরের ঐতিহাসিক সামগ্রীরও যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে জন্য ‘কম্প্রিহেন্সিভ এয়ার কন্ডিশন্‌ড’ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। কৃত্রিম ভাবে যাতে তাপ ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই সংক্রান্ত প্রস্তাব ইতিমধ্যেই তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়েছেন তাঁরা। আনুষ্ঠানিক ভাবে তার অনুমোদন পাওয়া শুধু বাকি। ওই প্রকল্পের জন্য পুরোদস্তুর সমীক্ষাও শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যে ইতিমধ্যেই একটি বিষয় পরিষ্কার। তা হল, কলকাতার বাতাসের মানের ধারাবাহিক অবনমন হয়েছে। চলতি নভেম্বর গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত হতে চলেছে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে পরিবেশবিদদের একাংশের মধ্যে। তাই মূল্যবান সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও হঠাৎ করে এই পরিমাণ দূষণ চিন্তায় রাখছে সকলকেই।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সূত্রের খবর, সেখানে মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে ২৮,৩৯৪টি। দুষ্প্রাপ্য তৈলচিত্রের সংখ্যা ৩৯০০। গত বছরে ভিক্টোরিয়ায় এসেছিলেন প্রায় ৩৬ লক্ষ দর্শক। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত যত দর্শক ভিক্টোরিয়ায় এসেছেন, তাতে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, ওই সংখ্যা ৪০ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। এখন আগত দর্শকদের প্রায় ২৫ লক্ষই ভিক্টোরিয়ার গ্যালারিতে প্রবেশ করেন। ফলে ধুলোয় দূষণ নিয়ে বাড়তি সতর্কতা নিতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, দূষণে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মার্বেলের যা ক্ষতি হয়েছিল, তা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার করা হয়েছে। নিয়মিত সংরক্ষণের কাজ হলেও বায়ুদূষণের কারণে সেই কাজের উপরে আরও গুরুত্ব দিতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সেক্রেটারি-কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বিদেশের মিউজিয়ামে যেখানে দর্শক-সংখ্যা খুব কম, সেখানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে পায়ে একটা প্লাস্টিক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যাতে জুতোর ধুলো বেরোতে না পারে। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক দর্শকের ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব নয়। তবে ভিক্টোরিয়ার অভ্যন্তরীণ তাপ এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দূষণের হাত থেকে মূল্যবান সামগ্রীকে রক্ষা করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Victoria Memrial Indian Museum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE