বিভিন্ন পথ দুর্ঘটনার ভিডিয়ো দেখছেন বেসরকারি বাস ও ট্যাক্সির চালকেরা। নিজস্ব চিত্র
বেলাগাম গতিতে ছুটছে একটি মিনিবাস। চার রাস্তার মোড়ের ঠিক আগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে ধাক্কা মেরে উল্টে গেল সেটি।
একটি বাসকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে দাঁড়াল অন্য একটি বাস। সেই বাসের পিছনের দরজা দিয়ে এক যাত্রী নামতেই তাঁকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল আর একটি বেসরকারি বাস।
বিরাট পর্দায় এই সব দৃশ্য দেখে বারবার আঁতকে উঠছিলেন সামনে বসে থাকা দর্শকেরা। কোনও দৃশ্য দেখে কেউ বলে উঠলেন ‘‘ভয়ঙ্কর!’’ কেউ বা নিজের মাথায় হাত রেখে ভয়ে বুজে ফেললেন চোখ। বিভিন্ন দুর্ঘটনার একের পর এক দৃশ্য দেখে সকলেরই মুখের অভিব্যক্তি বদলে যাচ্ছিল বারবার।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার মেটিয়াবুরুজ ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষে দুর্ঘটনার এই ভিডিয়ো দেখানোর আয়োজন করা হয়েছিল বেসরকারি বাস ও ট্যাক্সিচালকদের জন্য। বিরাট পর্দায় ওই ভিডিয়ো যাঁরা দেখেন, তাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৪৫-এর মধ্যে। কেউ চালান বেসরকারি বাস, কেউ বা ট্যাক্সি। দুর্ঘটনা রোধে এ ভাবেই প্রচারে নেমেছিল কলকাতা পুলিশ
লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশ এলাকায় গত কয়েক বছরের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, পথ দুর্ঘটনার পিছনে পথচারীদের পাশাপাশি চালকদের বেপরোয়া মনোভাবও সমান ভাবে দায়ী। কখনও দুর্বার গতিতে গাড়ি চালানো, তো কখনও বাসে বাসে রেষারেষি করতে গিয়েই বারবার বিপদ ঘটছে। এ ছাড়া, নির্দিষ্ট লেন মেনে গাড়ি না চালানোর ফলেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে শহরে। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তাদের দাবি, দুর্ঘটনার নানা কারণ এবং চালকদের ভুলত্রুটিগুলি তুলে ধরতেই বাস
ও ট্যাক্সিচালকদের ওই ভিডিয়ো দেখানো হয়েছে।
পুলিশের তৈরি করা ওই ভিডিয়োয় প্রতিটি দুর্ঘটনার পরেই তার কারণ সবিস্তার ব্যাখ্যা করেছেন ট্র্যাফিক-কর্তারা। একই সঙ্গে জেব্রা ক্রসিং বা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বাস অথবা গাড়ি দাঁড়ালে কী কী অসুবিধা হতে পারে, তা-ও বোঝানো হয়েছে চালকদের। লেন মেনে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি অ্যাম্বুল্যান্সকে জায়গা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে চালকদের। ওই ভিডিয়োয় মোট ১৫টি দুর্ঘটনার ছবি দেখানো হয়েছে। দেখেছেন ৫৮ জন চালক।
পুলিশকর্তারা বলছেন, ভিডিয়ো চলাকালীন চালকদের অভিব্যক্তি দেখেই বোঝা গিয়েছে, তাঁরা নিজেদের ভুলগুলি বুঝতে পেরেছেন। ভিডিয়ো দেখার পরে এক বাক্যে সবাই নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর শপথও নিয়েছেন। দর্শকদের মধ্যে ছিলেন মেটিয়াবুরুজ-হাওড়া রুটের মিনিবাসচালক মহম্মদ ফিরোজ আলি। কাঁচুমাচু মুখ করে বললেন, ‘‘ভয়ানক ভিডিয়ো দেখলাম! আমরা ঠিক ভাবে গাড়ি চালালে অনেক দুর্ঘটনা ঠেকানো যাবে।’’ তাঁর পাশেই দাঁড়ানো ১২ নম্বর রুটের বাসচালক, বছর পঁচিশের মহম্মদ চাঁদ আবার বললেন, ‘‘টাকা রোজগার করতে গিয়ে কাউকে মেরে ফেলার অধিকার আমাদের নেই। এ বার থেকে আইন মেনেই চলব।’’
পুলিশকর্মীদের মতে, কন্ডাক্টরদের ইন্ধনেও অনেক সময়ে বাসচালকেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাসচালক মহম্মদ রমজান বললেন, ‘‘কন্ডাক্টরেরা বললেও আমরা আর ওদের কথা শুনব না।’’
দুর্ঘটনার পরে ধরা পড়লে বা প্রশিক্ষণ শিবিরে এলে অনেকেই ভাল ভাল কথা বলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে
তা কতটা মানা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy