Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মেধা তালিকায় দশে, কলকাতায় প্রথম সোহম

এক কাপ দুধ আর বিস্কুট খেয়ে ঠিক ন’টায় টিভির সামনে মা-বাবার সঙ্গে বসে পড়েছিল সোহম। একের পর এক ঘোষিত নামে কলকাতার কেউ না থাকায় একটু মন খারাপ হয়ে যায় তার।

মিষ্টিমুখ: মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে বাবা-মা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সোহম। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মিষ্টিমুখ: মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে বাবা-মা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সোহম। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

সকাল ন’টা। টিভি-তে তখন মাধ্যমিকের মেধা তালিকা ঘোষণা শুরু করলেন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। বেশ কিছু সময় পরে ঘোষণা, কলকাতার যাদবপুর বিদ্যাপীঠ থেকে দশম স্থান পেয়েছে সোহম দাস। সেই প্রথম কলকাতার কোনও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর নাম শোনা গেল মেধা তালিকা থেকে। দ্রুত বদলে গেল সন্তোষপুর বিধান কলোনির গোটা বাড়ির পরিবেশ। ছেলের সাফল্যে খুশি বাবা সঞ্জিত দাস এবং মা মিতালি দাস। আত্মীয়-পরিজনকে ফোন করে খুশির খবর দেওয়ার দায়িত্বটা নিয়ে ফেললেন সঞ্জিতবাবু নিজেই।

এক কাপ দুধ আর বিস্কুট খেয়ে ঠিক ন’টায় টিভির সামনে মা-বাবার সঙ্গে বসে পড়েছিল সোহম। একের পর এক ঘোষিত নামে কলকাতার কেউ না থাকায় একটু মন খারাপ হয়ে যায় তার। মাকে বলে, ‘‘এ বার মেধা তালিকায় কলকাতার কেউ নেই! আমাদের স্কুল থেকেও কেউ দশের মধ্যে থাকল না!’’
কথাটা শেষ হতেই ঘোষণা হল সোহমের নাম। মিতালিদেবী বলেন, ‘‘প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।’’ সোহম নিজেও বলছে, ‘‘ভেবেছিলাম ৬৬০ থেকে ৬৭০ নম্বরের মতো পাব। কিন্তু এক থেকে দশের মধ্যে থাকব সেটা ভাবিনি।’’

তেমন কিছু না ভাবলেও প্রত্যাশিত নম্বর হবে কি না সেই নিয়ে উদ্বেগ ছিল সোহম এবং মা-বাবার। তাই ফল বেরোনোর আগের দিন বিকেলে মানসিক চাপ কমাতে সপরিবার বাংলা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন মিতালিদেবীরা। রাতে বাড়ি ফিরে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়াও করেনি সোহম। মিতালিদেবী
জানান, ঘুমোতে যাওয়ার আগে সোহম জিজ্ঞেস করে, সে কত পেতে পারে বলে তাঁর মনে হয়। মিতালিদেবী ছেলেকে জানান, ৬৫০-এর মতো পাবে সে। ফল বেরোনোর পরে ছেলেকে মিষ্টি খাওয়াতে খাওয়াতে একগাল হেসে মিতালিদেবী বলেন, ‘‘আমি কম করেই বলেছিলাম। বেশি বলে যদি কম পায়! তখন তো ছেলেটা মন খারাপ করবে, তাই।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সোহমের প্রিয় বিষয় ভৌতবিজ্ঞান, তাতে সে পেয়েছে ৯৮। অঙ্কে পেয়েছে ১০০। বাকি সব বিষয়েই ৯০-এর উপরে নম্বর পেয়েছে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের এই ছাত্র। সারা বছর নিয়মিত আট থেকে দশ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে সে। এলআইসিতে কর্মরত সঞ্জিতবাবু ছেলের জন্য প্রতিটি বিষয়ের গৃহশিক্ষক রেখেছিলেন। পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকেরাও তাকে প্রচুর সাহায্য করেছেন বলে জানাল সোহম। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সে। নিজে সে ভাবে খেলাধুলো না করলেও বিরাট কোহলির ভক্ত সোহম। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই সমর্থকের অবশ্য অবসর কাটে গল্পের বই হাতে। ফেলুদা এবং শঙ্কুর গোটা সিরিজ তার শেষ হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষার পরে ছুটির বেশির ভাগটাই ব্যোমকেশ পড়ে কাটিয়েছে সোহম।

প্রিয় খাবার বিরিয়ানি পরপর দু’প্লেট শেষ করে দিতে পারে সোহম। মাঝেমধ্যেই মা-বাবার সঙ্গে বাইরে বিরিয়ানি খেতে যায় সে। তবে বাড়ির খাবারের মধ্যে তার প্রিয়, মায়ের হাতের পোলাও-মাংস। হাসিমুখে সেটা জানাল সোহম। সকাল থেকেই ফোনে ফোনে খুশির খবরটা সবাইকে জানাচ্ছিলেন সঞ্জিতবাবু। বাড়িতে যাঁরা আসছেন, তাঁদের জন্য মিষ্টির আয়োজনও করেছিলেন তিনি। সঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘ছোট থেকেই সোহম মনোযোগী। স্কুলে‌ বরাবর প্রথম তিনের মধ্যে থেকেছে। তাই ভাল ফলের আশা ছিলই। ও যা পড়তে চায়, এ বার তা-ই পড়বে।’’

পারিবারিক উৎসবের মাঝেই ডাক এসেছিল সোহমের স্কুল থেকে। প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য এবং অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে দেখা করে মার্কশিট নিয়েআসতে গিয়েছিল সোহম। ছাত্র প্রণাম করতেই পরিমলবাবু আশীর্বাদ করে বলেন, ‘‘বড় হয়ে তোকে দেশের সম্পদ হতে হবে।’’ এর পরে ফের এক দফা মিষ্টিমুখ হয়। আর ভবিষ্যতের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রতি সোহমের পরামর্শ, ‘‘সারা বছর মন দিয়ে পড়তে হবে। তাহলে পরীক্ষার আগে বাড়তি চাপ থাকবে না। কোনও বিষয় প্রিয় থাকতেই পারে, তবে অন্য বিষয়কেও অবহেলা করবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE