Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অর্থ দফতরের নির্দেশ নিয়ে পাঁচ খণ্ডের বই

সেতুই হোক বা রাস্তা, যে কোনও ধরনের স্থায়ী নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নির্ধারিত নির্দেশাবলী না মানলে কাজ করানো যাবে না। এ নিয়ে গত দু’-তিন বছর ধরে অনেক সার্কুলার দেওয়া হয়েছে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৯
Share: Save:

সেতুই হোক বা রাস্তা, যে কোনও ধরনের স্থায়ী নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নির্ধারিত নির্দেশাবলী না মানলে কাজ করানো যাবে না। এ নিয়ে গত দু’-তিন বছর ধরে অনেক সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। তবে তা ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে নানা মহলেই মাঝেমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের অর্থ দফতর নানাবিধ নির্দেশ সংবলিত সার্কুলার নিয়ে পাঁচ খণ্ডের একটি বই প্রকাশ করেছে। নাম দেওয়া হয়েছে, ‘কম্পেন্ডিয়াম অব জেনারেল সার্কুলার্স’। ওই বই পুরসভার প্রতিটি দফতরের ডিজি, চিফ ম্যানেজার-সহ পদস্থ অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

প্রায় আটশো পাতার ওই বই ছাপানো শুরু হয়েছে পুরসভার প্রেসে। ওই নির্দেশিকার মূল বক্তব্য হল, সরকার কোনও স্থায়ী সম্পদ তৈরি করলে তা ওই বইয়ের নির্ধারিত বয়ান মেনেই করতে হবে। প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি থেকে সাধারণ টেন্ডার, ই-টেন্ডার, টেন্ডারের শর্ত, দর বাঁধা— সবই বইয়ে উদ্ধৃত নিয়ম অনুসারে করতে হবে। কোথাও সেই নিয়মের অন্যথা হলে শুধু যে সেই কাজ বাতিল হবে, তা-ই নয়, সংশ্লিষ্ট অফিসারকে জবাবদিহিও করতে হবে। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা সংবলিত এই বইয়ের খবর পুর প্রশাসনের কাছে আসতেই টনক নড়েছে বিভিন্ন দফতরের। অফিসার, ইঞ্জিনিয়ার-সহ একাধিক মেয়র পারিষদের বক্তব্য, কলকাতা পুরসভা চলে নিজস্ব আইনে। স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে। তাই রাজ্য সরকারের আর্থিক নীতি এখানে বাধ্যতামূলক করা যায় কি?

পুরসভার বিভিন্ন প্রকল্পে দরপত্রের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। কখনও বা বিনা দরপত্রে কাজ দেওয়ার ঘটনা নিয়েও তোলপাড় হয় পুর মহল। ত্রিফলা আলোই হোক বা হটমিক্সের মাল সরবরাহ, দরপত্র-দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বারংবার তুলকালাম হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। দেখা গিয়েছে, কাজের জন্য যে দর নির্ধারিত করেছে পুর প্রশাসন, তা বাজারদরের থেকে অনেক বেশি। এবং বাজার যাচাই না করেই তার বরাত দেওয়া হয়েছে পছন্দের ঠিকাদারকে। কখনও বা ই-টেন্ডার না করেই বরাত দেওয়া হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে নির্ধারিত দরের চেয়ে ৪০-৫০ শতাংশ বেশি দর দিয়ে কাজ দিতে হয়েছে পুর প্রশাসনকে। কারণ, ঠিকাদারেরা মিলিত ভাবে সেই কাজের দর বাড়াতে বাধ্য করেছেন। এর পিছনে এক শ্রেণির অফিসার ও কর্মীদের যোগসাজশের অভিযোগও উঠেছে। যার জেরে অতিরিক্ত টাকা বেরিয়ে গিয়েছে পুর কোষাগার থেকে। গত বছর থেকে এই ধরনের অনিয়মে লাগাম টানতে উদ্যোগী হয় রাজ্যের অর্থ দফতর। নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও কাজের যে মূল্য (এস্টিমেট) ধরা হবে, তার চেয়ে পাঁচ শতাংশের বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হবে না। এবং সেই পরিমাণ বাড়াতে হলেও রাজ্যের অর্থ দফতরের অনুমোদন নিতে হবে। সেই নির্দেশ আসতেই পুরসভায় হইচই শুরু হয়ে যায়। কাজে অনীহা দেখা যায় অনেকের মধ্যে। পুর প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেওয়ার আগ্রহ কমে যায় ঠিকাদারদের।

সে ক্ষেত্রে পুর প্রশাসন কী করবে, তার নির্দেশও রয়েছে ওই বইতে। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ জানান, ১০০টি বই ছাপা হচ্ছে। পুরসভার প্রতিটি দফতরের হাতে ওই বই তুলে দেওয়া হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, টেন্ডার, ই-টেন্ডার, রিজার্ভ

প্রাইস, টেন্ডারে নিয়ম অনুসারে প্রতিযোগী না মিললে পরবর্তী ক্ষেত্রে কী করতে হবে, সবই বলা রয়েছে সেখানে। বইয়ের নিয়ম এবং নীতি মেনে সব দফতরকে কাজ করতে হবে বলে জানানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality Finanace Ministry Book West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE