পসরা: শহরের এক বেকারিতে ইস্টারের বিশেষ খাবার। নিজস্ব চিত্র
পিকনিক গার্ডেনের বাড়ি থেকে বন্ডেল রোডের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব মায়ের সঙ্গে দেখাটা ভিডিয়ো কলে সারতে হবে কে ভেবেছিল! সংক্রমণের ভয়ে কন্যা ডেনিস অ্যান্টনি মাকে ‘ইস্টার এগ’ পৌঁছতেও রাজি নন। স্মার্টফোনের ছবিতে মায়ের আদর-মাখা মুখটুকু মনে মনেই স্পর্শ করতে চান তিনি।
আজ, বৃহস্পতিবার একবালপুরের জাফর আলমের জন্যও এক অন্য শবে বরাত। খিদিরপুরের সোলানা কবরস্থানে স্ত্রীর সমাধিতে যাওয়াটা অনেক বছরের অভ্যাস। এ বার ছেলে-বৌমার কড়া নির্দেশ, ‘‘বাবা কোথাও যাবে না। করোনার সংক্রমণ বয়স্কদের জন্যই বেশি বিপজ্জনক।’’
খ্রিস্টানদের পবিত্র সপ্তাহে গুড ফ্রাইডে-র প্রার্থনা তথা নানা কৃচ্ছ্রসাধনের রীতি চলবে এই বৃহস্পতিবার। নিঃশব্দ প্রার্থনায় অনেকে হেঁটে শহরের গির্জা পরিক্রমা করেন খিদিরপুর থেকে ধর্মতলা কিংবা শিয়ালদহ থেকে পিকনিক গার্ডেন। এ বার সে সবের প্রশ্নই নেই। প্রোটেস্ট্যান্টদের কলকাতা ডায়োসিসের বিশপ পরিতোষ ক্যানিং বা ক্যাথলিকদের আর্চবিশপ টমাস ডিসুজ়া অনলাইন স্ট্রিমিংয়ে প্রার্থনার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন সপ্তাহভর। কলকাতার প্রার্থনার সময়ে নেট খুলতে না-পারলে কেউ কেউ আবার অস্ট্রেলিয়া কিংবা ফিলিপিন্সের প্রার্থনায় সামিল হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: মদের হোম ডেলিভারি হচ্ছে না, জানাল কলকাতা পুলিশ
বেথলেহেমে উদ্বাস্তু ঘরের শিশু জিশুর ব্যথা বয়ে বড়দিনে শামিল হয়েছিল কলকাতা। দেশ তখন নাগরিকত্ব আইনে বৈষম্যের প্রতিবাদে উত্তাল। গুড ফ্রাইডের প্রাক্কালে ভারত তথা দুনিয়া জুড়ে তালাবন্দির আবহেও ইতিহাসের ছোঁয়া। ক্রুশে জেরুসালেমের জিশুর আত্মাহুতির ছায়া যেন কলকাতাতেও।
বুধবার দিনভর হাতে হাতে ঘুরছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। সেই প্রথম ইস্টারেও রাজরোষে জিশুর ভক্তদের বাড়ি থেকে বেরোনো সম্ভব ছিল না। এমনকি গুড ফ্রাইডের পরের রবিবার জিশুর পুনরুত্থানের বার্তা পেয়েও বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি তাঁরা। ঈশ্বরপুত্রের যন্ত্রণা শেষে ইস্টারে তবু আশায় বুক বেঁধেছিলেন সবাই। করোনা-প্রতিরোধে গৃহবন্দি দশার সঙ্গে আশ্চর্য মিল সেই প্রথম ইস্টারের। তবে নানা প্রতিকূলতাতেও চার্চের সেবাকাজ অটুট। পবিত্র বৃহস্পতিবারেও ফুরসত নেই চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়ার কলকাতা ডায়োসিসের অর্থসচিব রীতেশ সরকারের। হলদিয়ার গেঁওখালিতে দুর্গতদের ত্রাণ পৌঁছতে যেতে হচ্ছে তাঁকে।
রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড লাগোয়া তস্য গলিতে সালদানহাদের সাবেক কাঠের আভেনটাও ভরসা জোগাচ্ছে অনেককেই। তালাবন্দিতে শহর জুড়ে পাউরুটির আকাল। গুড ফ্রাইডের প্রার্থনা ও দিনভর উপবাস শেষে হট ক্রস বানের অভাব ঘোচাতে অন্যতম ভরসা সালদানহারা। পাঁউরুটি জোগাতে স্থানীয় পুলিশও অনুরোধ করেছিল তাঁদের। ইস্টার এগ থেকে মার্জিপ্যান, কেক পৌঁছতেও তাঁরা তৎপর। ডেবরা সালদানহার কথায়, ‘‘ইস্টারের ডিম হল জীবনের প্রতীক। ডিমের মতো পার্বণী চকলেট তাই বাড়ি বাড়ি পৌঁছতে হচ্ছে।’’
গ্লাভস পরা নিজস্ব ডেলিভারি টিম দফায় দফায় বালিগঞ্জ থেকে ট্যাংরা ঘুরলেও এই দুর্যোগে ব্যবসা ধাক্কা খাচ্ছে। শবে বরাতে অনেক মুসলিম ঘরেও ময়দা-টয়দার অভাবে পার্বণী হালুয়া জমছে না। নাখোদা মসজিদের ইমাম শাফিক কাশমির অনুরোধ, ‘‘বাড়িতে বসে নমাজ পড়ুন। কেউ বাজি ফাটাবেন না। রমজ়ানের প্রস্তুতি নিন।’’ দুঃখের শেষে আর এক আরম্ভের আকুতি পার্বণী মেজাজে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy