Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

সুরার ফাঁদ পেতে টাকা লুটছে জামতাড়া গ্যাং

পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন লোকের মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ করে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় মদের দোকানের ছবি-সহ ফোন নম্বর দিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এই গ্যাং।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৭
Share: Save:

কখনও এটিএম কার্ড ‘ব্লক’ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি, কখনও বা কেওয়াইসি ‘আপডেট’ করানোর অনুরোধ— এমনই নানা ছল-ছুতোর সাহায্যে ফাঁদ পাতে তারা। তার পরে কৌশলে এটিএমের পিন বা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের পাসওয়ার্ড জেনে নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব করে দেয় মুহূর্তের মধ্যে।

এ বার লকডাউনকে হাতিয়ার করে বাড়িতে মদের ডেলিভারি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছে সেই কুখ্যাত ‘জামতাড়া গ্যাং’-এর বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন লোকের মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ করে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় মদের দোকানের ছবি-সহ ফোন নম্বর দিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এই গ্যাং। তার পরে সেই ফাঁদে যাঁরা পা দিচ্ছেন, হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের টাকা।

পুলিশ সূত্রের খবর, যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন, লকডাউন চলায় তাঁরা বাজারে মদ না-পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় তার সন্ধান করছেন। তাই সোশ্যাল মিডিয়া বা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পেয়ে কেউ কেউ ভাবছেন, সত্যিই হয়তো কোনও কোনও ডিস্ট্রিবিউটর গুদাম থেকে সরাসরি বাড়িতে মদ ডেলিভারি দিচ্ছেন। এই আশায় অনেকেই পা দিচ্ছেন জামতাড়া গ্যাংয়ের ফাঁদে। বাড়িতে মদ পৌঁছে দেওয়ার নামে আগাম টাকা নিয়ে সেই ব্যক্তিকে ব্লক করে দিচ্ছে ওই গ্যাংয়ের সদস্যেরা। তত ক্ষণে অবশ্য ক্রেতার অ্যাকাউন্ট থেকে চলে গিয়েছে কয়েক হাজার টাকা!

সম্প্রতি এক যুবককে তাঁরই এক পরিচিত একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ফরোয়ার্ড করেন। তিনি ওই যুবককে জানান, অর্ডার দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে চলে আসবে পছন্দের মদের বোতল। ওই যুবক সে কথা বিশ্বাস করে হোয়াটসঅ্যাপে আসা নম্বরে ফোন করে মোট পাঁচ বোতল মদ অর্ডার দেন। অনলাইনে টাকাও মিটিয়ে দেন। কিন্তু সেই মদ আর তাঁর বাড়িতে পৌঁছয়নি। ওই যুবক জানান, তিনি যে মোবাইল নম্বরে ফোন করে অর্ডার দিয়েছিলেন, তাতে ফের ফোন করলে বলা হয়, লকডাউন চলায় রাস্তায় পুলিশের নজর এড়িয়ে যেতে হবে। তাই একটু সময় লাগবে। কিন্তু তার পরে তিন দিন কেটে গেলেও মদের বোতল হাতে না-পেয়ে ফের ওই নম্বরে ফোন করেন তিনি। এ বার তাঁকে জানানো হয়, ডেলিভারি দিতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই তাঁকে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। এর জন্য ওই যুবকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু সেটি তিনি দেননি। মদের আশায় কয়েক হাজার টাকা খোয়ালেও তাঁর অ্যাকাউন্টে হাত দিতে পারেনি ‘জামতাড়া গ্যাং’।

গড়িয়ার বাসিন্দা এই যুবক ব্যাঙ্কের তথ্য না দিলেও মদের বোতল পেতে মরিয়া অনেকেই তা দিয়ে ফেলছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আর ওই ভাবেই তাঁরা খুইয়েছেন বহু টাকা। লালবাজার সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে সাইবার সেলে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। যার ভিত্তিতে তদন্তেও নেমেছেন গোয়েন্দারা। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, লকডাউন চলাকালীন বেআইনি ভাবে মদ কেনার চেষ্টা করায় অনেক প্রতারিতই অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁদের আশঙ্কা, নিজেরাই হয়তো আইনি জটিলতায় পড়ে যাবেন।

লকডাউনের বাজারে এই গ্যাং ইতিমধ্যেই চার লক্ষ টাকার মতো হাতিয়ে ফেলেছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

গড়িয়ার ওই যুবক জানান, তিনি যে নম্বরগুলিতে ফোন করে মদের অর্ডার দিয়েছিলেন, সেগুলি এখনও সচল রয়েছে। তাঁর দাবি যে ঠিক, সেই প্রমাণও মিলল মঙ্গলবার দুপুরে। ওই নম্বরগুলির একটিতে ফোন করে তিন বোতল রাম আর দু’বোতল হুইস্কি অর্ডার দিতে চাওয়ায় বলা হল, হোয়াটসঅ্যাপে লোকেশন পাঠিয়ে অনলাইন ওয়ালেট অ্যাপের মাধ্যমে টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। তার পরে আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে বাড়িতে মদ পৌঁছে যাবে!

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Jamtara Gang Loot Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE