মাঝেরহাট উড়ালপুল-এ ভাঙন। ফাইল চিত্র।
সাত দিন আগে হেলমেট পরে স্কুটি চালিয়ে বন্ধুর সঙ্গে কলেজ স্ট্রিট থেকে ফিরছিলেন। তার পরে কী হল মনে নেই। সোমবার ফের যখন কথা বলার অবস্থায় পৌঁছলেন, তখন তাঁর মুখের নীচের চোয়ালে লাগানো পঁচিশটি স্ক্রু ও আটটি প্লেট।
হাসপাতালের আইসিইউ-তে শুয়ে ২৬ বছরের যুবক বাবাকে প্রশ্ন করেন, ‘‘হেলমেট পরে আইন মেনে স্কুটি চালাচ্ছিলাম। সেতুর উপর দিয়ে স্কুটি চলছিল, সেটাই কি অপরাধ ছিল? এই ভোগান্তির দায় কার?’’
৪ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মাঝেরহাট সেতুর একাংশ ভেঙে যায়। ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১২ জন। মৃত্যু হয় ৩ জনের। আহতদের মধ্যেই ছিলেন পর্ণশ্রীর বাসিন্দা ২৬ বছরের পাপাই রায়।
ঘটনার দিন তাঁর বন্ধু সৌমেন বাগের সঙ্গে স্কুটিতে ফিরছিলেন। সেতু ভেঙে যাওয়ায় গুরুতর চোট পান দু’জনেই। বছর আঠাশের সৌমেনকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই মৃত ঘোষণা করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাপাইকে ভর্তি করা হয় একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
ওই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩ দিন হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে নজরদারিতে রাখার পরে চিকিৎসকেরা পাপাইয়ের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। শনিবার প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে পাপাইয়ের মুখের অস্ত্রোপচার চলে। তাঁর অস্ত্রোপচার করেন শল্য চিকিৎসক সুজয় মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, পাপাইয়ের মুখের নীচের অংশ অর্থাৎ চোয়াল থেকে ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গিয়েছিল। ফলে, তাঁর জিভ, গলা ও মুখকে ধরে রাখার হাড় ও পেশির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। জিভ শ্বাসনালীর উপর চলে গিয়েছিল বলেই শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর ভেঙে যাওয়া অংশগুলোকে এক জায়গায় করা হয়েছে। আটটি প্লেট দিয়ে মুখের নীচের অংশ বেঁধে রাখা হয়েছে।
এ দিন তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে, তিনি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন না। পরবর্তী ৩ মাস তাঁকে তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মুখে গুরুতর চোট পাওয়ার পাশাপাশি পাপাইয়ের পাঁজরের হাড়েও চিড় ধরা পড়েছে। গুরুতর মানসিক অস্থিরতার মধ্যে তিনি রয়েছেন। ফলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাঁর এখনও ক্রমাগত চিকিৎসা জরুরি। তিনি শক্ত খাবার ফের কবে খেতে পারবেন, সেটা এখনই চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
পাপাইয়ের পরিবার জানিয়েছে, ছেলে বেঁচে গিয়েছে। তবে, ভোগান্তি যে অনেক বাকি রয়েছে সেটা তাঁরা আন্দাজ করতে পাচ্ছেন। ২৬ বছরের যুবকের এই ভোগান্তির দায় কার, সেই উত্তর দিতে পারেননি তাঁর বাবা প্রবাল রায়। তাঁর শুধু প্রার্থনা, ‘‘ছেলেটা যেন সব বিপদ কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy