Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রিপোর্টে সই করবে কে, ধন্দে কর্তারা

এর জন্য তাঁরা ‘এনএবিএল’ অর্থাৎ ‘ন্যাশন্যাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড কোলাবোরেশন ল্যাবরেটরিজ’ এর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করছেন।

এমসিআই-এর সেই নির্দেশিকা।

এমসিআই-এর সেই নির্দেশিকা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ১২:৫৭
Share: Save:

ল্যাবরেটরিতে রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষার রিপোর্টে কারা সই করতে পারবেন তা নিয়ে ধন্দ এবং বিভ্রান্তিতে আপাতত জেরবার এনএবিএল অ্যাক্রিডিটেটেড ল্যাবরেটরির কর্তারা। এবং এর জন্য তাঁরা ‘এনএবিএল’ অর্থাৎ ‘ন্যাশন্যাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড কোলাবোরেশন ল্যাবরেটরিজ’ এর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করছেন।

৩০ জুন এনএবিএল দেশ জুড়ে তার অ্যাক্রিডিটেটেড ল্যাবরেটরিগুলিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, রেজিস্ট্রেশন নম্বরধারী এমবিবিএস এবং এমডি চিকিৎসক ছাড়া আর কেউ ল্যাবের রিপোর্টে সই করতে পারবেন না। এর পরে সাত দিন কাটতেই ১০ জুলাই তারাই আবার জানিয়েছে, আগের নির্দেশ বহাল থাকছে না। অর্থাৎ চিকিৎসকদের পাশাপাশি মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথোলজি, অ্যাপ্ল্যায়েড বায়োলজি, বায়োটেকনোলজির মতো বিষয়ের এমএসসি এবং পিএইচ়ডিরাও ল্যাবরেটরির রিপোর্টে সই করতে পারবেন। এনএবিএল কর্তাদের দাবি, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র ল্যাবরেটরি নিয়ে কোনও রায় দেওয়ারই অধিকার নেই।

অথচ সপ্তাহখানেক আগে এমসিআই-এর থেকে পাওয়া রায়ের ভিত্তিতেই এনএবিএল ঘোষণা করেছিল, ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ ল্যাবরেটরির রিপোর্টে সই করবেন না! এনএবিএল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এমসিআই-এর কাছ থেকে রায় চেয়ে পাঠিয়েছিল। অথচ তা প্রত্যাহারের সময় তোয়াক্কা করা হয়নি এমসিআই-এর অনুমতির।

ফলে এমসিআই এখন বেঁকে বসেছে। এমসিআই-এর এথিক্স কমিটির তরফে অজয় কুমার জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের রায় থেকে সরছি না। রায় প্রত্যাহারও করিনি।’’ রিপোর্ট সই করবেন একমাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকেরাই।

এই অবস্থায় কার নির্দেশ মানা হবে তা নিয়ে বিভ্রান্ত ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষেরা।

প্রশ্ন উঠেছে—এনএবিএল যদি নিজেরাই ল্যাবরেটরি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী হয় তা হলে তারা এর আগে সিদ্ধান্তের জন্য এমসিআই-এর দ্বারস্থ হয়েছিল কেন? কেনই বা এমসিআই-এর সেই মতামত নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়েছিল?

তা ছাড়া, গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার এনএবিএলকে একটি চিঠি দেয়। তাতে জানানো হয়, এনএবিএল অ্যাক্রিডিটেটেড ল্যাবরেটরিগুলির অনেকগুলিতে চিকিৎসকের বদলে এমএসসি এবং পিএইচডিধারীরা সই করছেন বলে প্রচুর অভিযোগ আসছে। এবং ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল আইন (১৯৫৬)’-র কিছু ধারার উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, এমএসসি ও পিএইচডিদের রিপোর্টে সই করাটা বেআইনি। এ নিয়ে তারা এনএবিএল-এর থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। এর পরেই এনএবিএল-এর থেকে চিঠি পাঠানো হয় এমসিআই-কে। কারা রিপোর্টে সই করতে পারেন সেই ব্যাপারে এমসিআই-এর রায় চায় তারা।

কলকাতার এনএবিএল-অ্যাক্রিডিটেটেড এক নামী ল্যাবরেটরির কর্তার কথায়, ‘‘যেখানে খোদ কেন্দ্রীয় সরকার এবং এমসিআই রিপোর্টে এমএসসি-পিএইচডিদের সইকে বেআইনি বলছে, সেখানে আমরা এনএবিএলের কথা শুনলে শেষে বিপদে পড়তে হবে কিনা সেটাও ভাবতে হচ্ছে।’’

এনএবিএল সূত্রের খবর, তাদের সংস্থার দুই চিকিৎসক কর্তাই এমসিআই-এর থেকে রায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু শুধু চিকিৎসকদের সইয়ের সিদ্ধান্তে শুরু হয় তোলপাড়। ‘সেন্ট্রাল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টস অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজিস্টস’-এর মতো বেশ কিছু সংগঠন এমন চাপ দেয় যে, এনএবিএল-কে পিছু হঠতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NABL medical test
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE