Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাত ধরেছে স্কুল, সাফল্য পড়ুয়াদের

এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম দশের মধ্যে রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত এই স্কুলের ৭ জন ছাত্র। যাদের মধ্যে এক জন পঞ্চম, এক জন ষষ্ঠ, তিন জন নবম ও দু’জন দশম হয়েছে।

একসঙ্গে: ফলপ্রকাশের পরে রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বয়েজ হোম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

একসঙ্গে: ফলপ্রকাশের পরে রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বয়েজ হোম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০২:১৮
Share: Save:

ছাত্রদের কাছে তাঁরা সিঁড়ির এক একটি ধাপ। সেই সিঁড়ি বেয়ে যাতে পড়ুয়ারা সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছতে পারে, সে দিকে সব সময়ই নজর রাখেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বয়েজ হোম উচ্চ বিদ্যালয়ের সন্ন্যাসী থেকে শিক্ষকেরা।

আর তাতেই এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম দশের মধ্যে রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত এই স্কুলের ৭ জন ছাত্র। যাদের মধ্যে এক জন পঞ্চম, এক জন ষষ্ঠ, তিন জন নবম ও দু’জন দশম হয়েছে। স্কুলের সম্পাদক স্বামী জয়ানন্দ জানান, ৭০ বছরের পুরনো এই স্কুলের ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে ৬ জন স্থান অর্জন করেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে এই স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন স্বামী জয়ানন্দ। প্রথমে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি সম্পাদক হন।

তিনি বলেন, ‘‘৮-৯ বছর আগে এক জায়গা থেকে ফেরার সময়ে আমার গাড়ি রাস্তার মোড় ঘুরে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে ডোবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তখন রাস্তার পড়ে থাকা একটি মৃত মহিষে ধাক্কা লেগে গাড়িটি আটকে যায়। সে দিন থেকেই আমি ভাবি যে আমাদের দেহটিও তো ছাত্রদের কাছে একটা সিঁড়ি হতে পারে।’’ স্বামী জয়ানন্দ জানান, তখন থেকেই শুরু হয় প্রচেষ্টা। যে ছাত্র পিছিয়ে রয়েছে তাকে 'সিঁড়ি' দিয়ে উপরে তোলার চেষ্টা করা। আর যে সহজেই উপরেই উঠবে তাকে আরও কিছুটা সাহায্য করা।

স্কুল সূত্রের খবর, গরিব ঘরের ছেলেরা যেমন এখানে থেকে পড়াশোনা করে, তেমনই মধ্যবিত্ত ঘরের পড়ুয়ারাও রয়েছে। তবে সকলের উপরেই সমান নজর থাকে স্কুল কর্তৃপক্ষের। কোন ছাত্র কোন বিষয়ে পিছিয়ে রয়েছে সে সব আলাদা করে নজর দেন শিক্ষকেরা। আর তাই এ দিনের সাফল্যের ভাগ স্কুলকেই দিতে চায় সফল পড়ুয়ারা। ষষ্ঠ স্থান পাওয়া ছাত্র সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘‘সাফল্য সবারই ভাল লাগে। আমারও লাগছে। আমার সাফল্যের ভাগীদার যতটা বাবা-মা, ততটাই স্কুল।’’ মেসি ও সুনীল ছেত্রীর ভক্ত সায়নের মতে, বছরের প্রথম থেকেই পড়াশোনা ঠিক মতো করা উচিত। না হলে শেষে গিয়ে চাপে পড়তে হবে।

স্কুলের আদর্শকে পাথেয় করেই আগামী দিনে দেশের ভাল হয় এমন কাজ করতে চায় পঞ্চম স্থান পাওয়া স্বাহীতাগ্নি চক্রবর্তী। তাঁর স্বপ্ন ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেলে পাশ করার পরে আর্তের সেবা করার। ফেলুদার ভক্ত সৌম্যদীপ খান অবশ্য পরীক্ষা দেওয়ার পরেই বুঝেছিল সাফল্য তার ঝুলিতে আসছেই। সে জানায়, প্রথম কুড়ির মধ্যে থাকবে এমনটা আশা ছিল। তবে সে যে নবম স্থান পাবে এমনটা ভাবেনি। সৌম্যদীপের কথা, ‘‘প্রথমে শুনে তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না। পরে স্কুলে এসে আরও ভাল করে জানলাম।’’

রহড়ার ওই স্কুল থেকেই নবম হয়েছে নিলয় চক্রবর্তী, আয়ুষ পণ্ডিত এবং দশম হয়েছে অয়নীল নন্দী ও অদ্রীদেব মণ্ডল। এ দিন সকলেই স্কুলে এসে সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক মহারাজের আশীর্বাদ নেয়। স্কুলের মুকুটেও যেমন এই প্রথম একসঙ্গে সাতটি সাফল্যের পালক লাগল, তেমনই সাত পড়ুয়াও চায়, আগামী দিনে দেশের-দশের কল্যাণে নিজেদের তুলে ধরে স্কুলের নাম আরও উজ্বল করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE