Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দাতা না আনলে রক্ত ‘অমিল’ এনআরএসে

প্রয়োজনীয় রক্তের ইউনিট পেতে রক্ত কে দেবেন জানতে চাইলে নিভা মণ্ডলের আত্মীয় বলেন, ‘‘ডোনার তো জোগাড় করতে পারছি না!’’

আশা: এনআরএস-এর ব্লাড ব্যাঙ্কে রোগীর পরিজনেদের ভিড়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

আশা: এনআরএস-এর ব্লাড ব্যাঙ্কে রোগীর পরিজনেদের ভিড়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

হাসিনা বিবি? নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের স্পিকারে বার দু’য়েক নামটা ডাকলেন কর্তব্যরত কর্মী। মহিলা দ্রুত কাউন্টারের সামনে এসে হাজিরা দিয়ে বললেন, ‘‘এই যে স্যার, হাসিনা বিবি।’’ ওপার থেকে কর্মীর জিজ্ঞাস্য, ‘‘ডোনার (রক্তদাতা) কে? ডোনার ছাড়া রক্ত পাওয়া যাবে না।’’ সেই কথা শুনে হাসিনা পাল্টা বলেন, ‘‘রক্ত যে পাওয়া যাবে না, লিখে দিন।’’ কর্মী বলেন, ‘‘ওটা স্যারের কাছে গিয়ে লেখান!’’

হাসিনা কাউন্টার থেকে যে-ই সরলেন কর্মীটি আবার হাঁক পাড়লেন, নিভা মণ্ডল? প্রয়োজনীয় রক্তের ইউনিট পেতে রক্ত কে দেবেন জানতে চাইলে নিভা মণ্ডলের আত্মীয় বলেন, ‘‘ডোনার তো জোগাড় করতে পারছি না!’’ কর্মী নিজের অবস্থানে অনড়, রক্তদাতা না আনলে রক্ত মিলবে না। রোগীর আত্মীয় বাইরে থেকে রক্ত কিনে নেবেন কি না জানতে চাইলে, ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মী নমুনার শিশি হাতে ধরিয়ে তা-ই করার পরামর্শ দিলেন।

এখনও গরম সে ভাবে পড়েনি। কলকাতার ভোটেরও মাস দেড়েক দেরি থাকায় পাড়ায় পাড়ায় নির্বাচনী প্রচার সেই অর্থে তুঙ্গে পৌঁছয়নি। এরই মধ্যে চাহিদা মতো রক্তের জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের। বৃহস্পতিবার দুপুরে তেমনই ছবি দেখা গেল ব্লাড ব্যাঙ্কের।

মুর্শিদাবাদ থেকে মায়ের চিকিৎসা করাতে কলকাতায় আসা দীপঙ্কর মণ্ডলের কথায়, ‘‘মায়ের পায়ে অস্ত্রোপচারে দু’ইউনিট রক্ত লাগবে। তার জন্য দু’জন ডোনার চাইছে। বলছে, রক্ত দিলে রক্ত পাওয়া যাবে।’’ বসিরহাটের বাসিন্দা মিনা সাধুখাঁ বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর থেকে রোগীর পরিবারের কাছে ডোনার চাইলে কোথা থেকে দেবে?’’ রক্ত নিয়ে রোগীদের হয়রানি কমাতে ‘জীবনশক্তি’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। বসিরহাটের বাসিন্দা মিনাদেবীর বি-পজিটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন। এ দিন দুপুরে সরকারি অ্যাপের তথ্য দেখিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীকে বলেন, ‘‘অ্যাপে তো বলছে, বি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে। তাহলেও কেন ডোনার আনতে হবে?’’ ওই কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের মজুতে যা রক্তের ইউনিট রয়েছে তা কম। তাই ডোনার চাইছি!’’

গরমের সময় প্রতি বছরই রক্তের অভাব দেখা দেয়। ভোটের বছরে সঙ্কট যাতে তীব্র না হয়, সে জন্যও রক্তের সংগ্রহ বাড়াতে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে তৎপর হতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এনআরএসের সমস্যা অনেক গভীরে বলে মত স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের একাংশের। তেমনই এক কর্মীর কথায়, ‘‘গত বছর মার্চে এনআরএস-এ ৪১টি শিবির হয়েছিল। এ বছর এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৩টি শিবির হয়েছে। শিবির থেকে মোট সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ ১০৭৩ ইউনিট। তার মধ্যে ট্রিপল ব্যাগের (কনসেন্ট্রেটেড আরবিসি, প্লাজমা, প্লেটলেট) সংখ্যা ৬০৫টি।’’

স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এনআরএস থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের নোডাল সেন্টার। পাশাপাশি, অঙ্কোলজি, কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের বিপুল রোগীর রক্তের জোগান দেওয়ার চাপ রয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, ‘‘হেমাটোলজি, অঙ্কোলজি মিলিয়ে এনআরএসে প্রতিদিন অন্তত ২০০ ইউনিট প্লেটলেট লাগে। এই জোগান মেটাতে শিবিরের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রিপল ব্যাগের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। তা হচ্ছে না। কারণ, এ কাজ করার কথা টেকনিশিয়ানদের। এনআরএসে মাত্র ১৭ জন টেকনিশিয়ান রয়েছেন। তাঁদেরও আবার ক্রস ম্যাচের কাজে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে!’’

ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক দিলীপ পান্ডা বলেন, ‘‘সঙ্কট কিছু নেই। যা চাপ আছে আমরা সামলে নেব।’’ সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রক্ত না দিলে রক্ত পাওয়া যাবে না, তা কিন্তু নয়। রক্তদাতা যাতে পাওয়া যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ, আমাদেরও তো জোগান বাড়াতে হবে।’’ শিবিরে সংখ্যা কেন কম জানতে চাইলে সুপার বলেন, ‘‘শিবির বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যা সমস্যা রয়েছে তা মিটিয়ে ফেলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRS Hospital Blood Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE