Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘জলদি এসো’, আর্তি ছিল বধূর

সোমবার রাবিয়ার পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে বিবিবাগান লেন থেকে রাবিয়ার স্বামী মহম্মদ ফৈয়াজউদ্দিন এবং শ্বশুর মহম্মদ গোলাম রসুলকে গ্রেফতার করেছে এন্টালি থানা।

রাবিয়া খাতুন

রাবিয়া খাতুন

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

‘জলদি আ যাইয়ে’— এটাই ছিল বুধবার গুজরাত নিবাসী দিদিকে এন্টালির শ্বশুরবাড়ি থেকে পাঠানো রাবিয়া খাতুনের শেষ বার্তা। তার পর থেকে আর বছর উনিশের রাবিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন। তিন দিন পরে শনিবার মধ্য রাতে এন্টালি থানা থেকে ফোনে তাঁদের জানানো হয়, রাবিয়ার মৃত্যু হয়েছে। দ্রুত থানায় যোগাযোগ করতে হবে।

সোমবার রাবিয়ার পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে বিবিবাগান লেন থেকে রাবিয়ার স্বামী মহম্মদ ফৈয়াজউদ্দিন এবং শ্বশুর মহম্মদ গোলাম রসুলকে গ্রেফতার করেছে এন্টালি থানা। আদালতে ধৃতদের ২৩ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত হয়। দেহটি মঙ্গলবারই ময়না-তদন্ত করিয়েছে পুলিশ। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, বিষক্রিয়ার জেরে মৃত্যু হয়েছে রাবিয়ার। তবে ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই পুলিশ এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে। সেই সঙ্গে রাবিয়া নিজেই বিষ খেয়েছেন, না কি তাঁকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শাশুড়ির পাশাপাশি মৃতার বাবা মা এবং তিন দিদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। রাবিয়ার বাপের বাড়ির লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে রাবিয়াকে মারধর করা হত। এমনকি জোর করেই রাবিয়ার সঙ্গে ফৈয়াজউদ্দিন বিয়ে করেছিলেন বলেও অভিযোগ তাঁদের।

বিহারের ছাপরা জেলায় বাড়ি রাবিয়াদের। তাঁর বাবা মহম্মদ জায়েদ হুসেন বুধবার জানান, রাবিয়ার শ্বশুর ধৃত রসুল তাঁর নিজের ভাই। গত এপ্রিলে উত্তরপ্রদেশ বেড়াতে যায় দুই পরিবার। সেখান থেকে ফেরার পথে বোনকে শহর ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে কলকাতায় নিয়ে আসেন কাকার ছেলে ফৈয়াজউদ্দিন। আর বাড়ি ফেরেননি রাবিয়া। জায়েদ হুসেনের অভিযোগ, ‘‘বেড়াতে এনে এখানেই রেখে দিল। মেয়ের সঙ্গে আমাদের কোনও কথাই বলতে দিত না। বহু বার ফোন করেও ওর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। গত মে মাসে শুনলাম রাবিয়াকে বিয়ে করেছে ফৈয়াজউদ্দিন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই বিয়েতে মত ছিল না রাবিয়ার। ও আমাদের কাছে ফিরতে চেয়েছিল। কিন্তু ওকে ফিরতে দেওয়া হয়নি। ভাইয়ের কাছেই রয়েছে ভেবে প্রথমে আমরাও মেনে নিয়েছিলাম। পরে অত্যাচার শুরু করল। এখন তো দেখছি মেয়েটাকে মেরেই ফেলেছে।’’

রাবিয়ার দিদি শাহনাজ বিবির অভিযোগ, ‘‘বিয়ের পরেই ৫০ হাজার টাকা পণ চেয়েছিল ফৈয়াজউদ্দিনেরা। দিতে পারিনি বলে মারধর করত। বোন মেসেজ করেছিল। কিন্তু ফোন করে পাইনি।’’ পুলিশে জানাননি কেন? শাহনাজের বক্তব্য, ‘‘আমি গুজরাতে থাকি। বাবা-মা বিহারে। এখানে আমাদের জোর কোথায়। কাকার সঙ্গে ঝামেলায় যাওয়ারও সাহস হয়নি।’’

রাবিয়ার শ্বশুরবাড়ির প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ট্রেনের ক্যান্টিনে চাকরি করতেন ফৈয়াজউদ্দিন। কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় বাইরেই থাকতেন তিনি। শ্বশুর রসুল কাজ করতেন একটি ফাস্টফুডের দোকানে। অভিযোগ প্রায় প্রতিদিনই ঝামেলা লেগে থাকত রাবিয়াদের বাড়িতে। স্বামী বাড়ি ফিরলে ঝামেলা আরও বাড়ত। শনিবার রাতে হঠাৎ চিৎকার শুনে রাবিয়াদের ঘরে যান প্রতিবেশীরা। ফৈয়াজউদ্দিন সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না। এক প্রতিবেশী বললেন, ‘‘দেখি মাটিতে পড়ে রাবিয়া। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বার হচ্ছে। আমরাই পুলিশে খবর দিই।’’ মৃতার পরিবার এসে না পৌঁছনোয় পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ‘পিস হাভ্ন’-এ রাখার ব্যবস্থা করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE