অভিযুক্ত নাইজেরীয়দেরই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
সাবধান! সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘ফাঁদ’ পেতে অপেক্ষা করছে সাইবার অপরাধীরা। সতর্ক না হলেই পকেট থেকে খসতে পারে লাখ লাখ টাকা।
‘আপনি লটারি জিতেছেন’— এ রকম কি কোনও মেল এসেছে আপনার কাছে? কিংবা বিদেশি কোনও বন্ধু ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে ? বা বিজনেস পার্টনার করতে চাই, এই বলে লম্বা-চওড়া মেল করেছে কেউ? অথবা ফেসবুকে কোনও বিয়ের প্রস্তাব পাচ্ছেন ঘন ঘন? তা হলে এখনই সাবধান হন।
ইমেলে, ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে এমন বার্তা এলে ভুলেও তা খুলবেন না। এ বিষয়ে যদি এখনই সতর্ক না হন তা হলে আপনার পরিস্থিতি হতে পারে এন্টালির বাসিন্দা মাঝ বয়সি মহিলা সান্দ্রার মতোই। সাইবার হ্যাকারদের ফাঁদে পড়েই সান্দ্রা খুইয়েছেন পাঁচ লক্ষ টাকা।
ঠিক কী হয়েছিল?
সুদূর ইংল্যান্ড থেকে সান্দ্রাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান এক ব্যক্তি। প্রোফাইলে ঝকঝকে ছবি। চ্যাটিংয়ে টুকটাক কথাবার্তাও শুরু হয়। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। সান্দ্রা ছবি আপলোড করলেই লাইক, কমেন্ট করতে ভুলতেন না ইংল্যান্ড নিবাসী বন্ধু ড্যানিয়েল স্ট্যান। ভাল-মন্দ উপদেশ তো আছেই। সান্দ্রার স্বামী মারা যাওয়ার খবর শুনে আরও বেশি করে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন স্ট্যান। ফেসবুক থেকে এর পর দু’জনের মধ্যে শুরু হয় হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং। ইংল্যান্ড নিবাসী সেই বন্ধু উপহার পাঠাবেন বলে জানান সান্দ্রাকে।
এর কিছুদিন পরেই শুল্ক দফতর থেকে ফোন আসে সান্দ্রার কাছে— ‘আপনার জন্য ইংল্যান্ড থেকে ‘গিফ্ট’ এসেছে। কাস্টমস ডিউটি দিয়ে নিয়ে যান।’
সান্দ্রাও ছটফট করছিলেন। কখন বন্ধুর উপহার সামগ্রী বাড়িতে আনবেন? কি রয়েছে তাতে? কোনও কিছু চিন্তা না করেই কাস্টমস ডিউটির টাকা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেন তিনি। কিন্তু গিফট এল না! ইংল্যান্ড নিবাসী ওই ওই বন্ধু ফোন করে বললেন, “শুল্ক দপ্তরের ব্যাপার তো, একটু দেরি হয়।”
আরও পড়ুন: সেন্ট পলস কলেজে ছাত্র নিগ্রহ কাণ্ডে ৫ অভিযুক্তই গ্রেফতার
আরও পড়ুন: চকচকে আপেল খান? তৈরি রাখুন স্বাস্থ্যবিমাও
ড্যানিয়েল বলেন, আরও কিছু গিফট পাঠাচ্ছি একসঙ্গে নিয়ে নেবে। ফের টাকা জমা দিলেন সান্দ্রা। এর পরেই ফেসবুক থেকে বন্ধু উধাও। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন যাচ্ছে না। এমনকি, সেই শুল্ক দফতরের ফোনেও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। ড্যানিয়েলের ফাঁদে পড়ার বিষয়টি যখন বুঝলেন সান্দ্রা, ততদিনে তাঁর সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি টাকা খোওয়া গিয়েছে।
টাকা খোওয়া যাওয়ার পর সান্দ্রা কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন। তড়িঘড়ি তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে দেখা যায় ফেসবুক প্রোফাইলটি ভুয়ো। হোয়াটসঅ্যাপ রেজিস্টার করানো হয়েছিল ইংল্যান্ডের একটি নম্বরে। ফোনের সূত্র ধরে জানা গেল, দিল্লির উত্তমনগর বসে গোটা ঘটনা সাজিয়েছে সাইবার অপরাধী। দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশির পর ধরা পড়ে ‘ড্যানিয়েল’। আসল নাম দিয়াকিত ইউসুফ। নেপথ্যে ছিলেন জুড নামে আর এক জন। দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দু'জনেই নাইজেরীয়। তাদের জেরা করে উদ্ধার হয়েছে দামী মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব, পেন ড্রাইভ-সহ নানা জিনিস। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলাদেরই টার্গেট করত তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy