Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অসুস্থ স্বামীকে দেখতে গিয়ে বাসে পিষ্ট মহিলা

স্বামী কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। রোজের মতো শনিবার সকালেও তাঁকে দেখতে যাচ্ছিলেন স্ত্রী। হাসপাতালেরই গেটের সামনে মিনিবাসের চাকায় পিষ্ট হন মহিলা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় তাঁর।

কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

স্বামী কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। রোজের মতো শনিবার সকালেও তাঁকে দেখতে যাচ্ছিলেন স্ত্রী। হাসপাতালেরই গেটের সামনে মিনিবাসের চাকায় পিষ্ট হন মহিলা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় তাঁর।

এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে গোরাচাঁদ দে রোড ও সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে। পুলিশ জানায়, মৃতা কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় (৫২) চেতলা হাট রোডের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের হোমগার্ড। পায়ের রোগ সারাতে গোপালবাবু কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, সিগন্যাল সবুজ হতেই ওই মোড় পেরোনোর জন্য যানবাহন চলতে শুরু করে। মহিলা সেই সময়েই রাস্তা পেরোতে গিয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে পড়ে যান। যাদবপুর-বিমানবন্দর রুটের একটি মিনিবাসের পিছনের চাকায় পিষ্ট হন তিনি। ট্র্যাফিক পুলিশ ও হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ জানায়, সেখানে কি‌ছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় কৃষ্ণাদেবীর। তাঁর ব্যাগের কাগজপত্র ও মোবাইল ফোন থেকে বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ কৃষ্ণাদেবীর ননদ জয়া দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জয়া ও তাঁর ছেলে হাসপাতালে গিয়ে কৃষ্ণাদেবীকে শনাক্ত করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওই মিনিবাসের চালক জয়ন্ত সরকার জানান, পার্ক সার্কাস মোড় পেরিয়ে তিনি হাসপাতালের ট্র্যাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামান। ওই মোড়ে কয়েক জন যাত্রী নামেন। সিগন্যাল সবুজ হতেই কন্ডাক্টর ঘণ্টা বাজিয়ে বাস চালাতে নির্দেশ দেন। তিনি অ্যাক্সিলেটরে চাপ দিয়েই পিছন থেকে অনেকের চিৎকার শুনতে পান। বাস চালিয়ে লিন্টন পোস্ট অফিস স্টপে বাস থামান তিনি। সেখানে এক ট্র্যাফিক কর্মী এসে তাঁকে জানান, তাঁরই বাসের চাকায় পিষ্ট হয়েছেন এক মহিলা। এর পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে। জয়ন্তবাবুর অনুমান, কৃষ্ণাদেবী অন্য গাড়ির ধাক্কায় তাঁর বাসের তলায় পড়ে গিয়েছেন। জয়ন্ত এ দিন বলেন, ‘‘১৯৮০ সাল থেকে বাস চালাচ্ছি। আমার বাবাও কলকাতা পুলিশের কর্মী ছিলেন। আগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি আমার গাড়িতে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা জানতে গোরাচাঁদ দে রোড ও সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দিন বেনিয়াপুকুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ এমন ঘটায় হতবাক কৃষ্ণাদেবীর পরিবার। জয়াদেবী জানান, তিনি ও তাঁর বৌদি পালা করে তাঁর দাদাকে হাসপাতালে দেখতে যেতেন।

এ দিন বিকেলে গোপালবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট দু’কামরায় টালির চালের ঘরটি বন্ধ। প্রতিবেশীরা জানালেন, ওই দম্পতির দশ বছরের একটি ছেলে আছে। বাবার অসুস্থতার কারণে পুজোর আগেই সোনারপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছিলেন। কারণ, ছোট ছেলেকে রোজ ঘরে একা রেখে হাসপাতালে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। প্রতিবেশীরা জানালেন, বেশ কিছু দিন ধরেই গোপালবাবুর পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা হচ্ছিল। ওই অসুখ নিয়েই তিনি হোমগার্ডের কাজ করছিলেন। আত্মীয়স্বজনদের চাপে তিনি হাসপাতালে টানা ভর্তি থেকে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE