Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে ঢুকে মায়ের ঝুলন্ত দেহ দেখল শিশু

মৃতার নাম মৌসুমী সান্যাল (৩০)। মৌসুমীর বাবা অসিত মণ্ডল ওই রাতেই জামাই ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে বেলেঘাটা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩২
Share: Save:

ঘরে খেলছিল পাঁচ বছরের ছেলে। মায়ের খোঁজে পাশের ঘরে ঢুকেই সে দেখল, তার মা ‘লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’ ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়াশব্দ না মেলায় কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার শুরু করে ওই শিশু। যা শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন ওই ফ্ল্যাটে। দরজায় তালা থাকায় তাঁরা প্রথমে ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারেননি। পরে শিশুটি জানলা দিয়ে চাবি দিলে তাঁরা তালা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখেন, শিশুটির মা সিলিং থেকে ঝুলছেন। পুলিশের সাহায্যে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে বেলেঘাটা থানা এলাকার রানি রাসমণি বাজার এলাকায়। মৃতার নাম মৌসুমী সান্যাল (৩০)। মৌসুমীর বাবা অসিত মণ্ডল ওই রাতেই জামাই ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে বেলেঘাটা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মৌসুমীর স্বামী অমিত সান্যালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ধৃতকে বুধবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে আট দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়ে দেন। ধৃতের মা অসুস্থ থাকায় তাঁকে অবশ্য বুধবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখার পরে পুলিশের অনুমান, মৌসুমী আত্মঘাতীই হয়েছেন। তাঁর ছেলেকে মৌসুমীর পরিবারের লোকজন বসিরহাটে মামার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন।

লালবাজার জানিয়েছে, মৌসুমীর বাবার অভিযোগ, টাকার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর মেয়েকে মারধর করতেন অমিত। মঙ্গলবার বিকেলে মৌসুমীর সঙ্গে তাঁর শেষ বার কথা হয় ফোনে। তখন মৌসুমী বসিরহাটের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। ওই কথোপকথনের কয়েক ঘণ্টা পরেই অসিতবাবুকে ফোন করে কলকাতায় চলে আসতে বলে বেলেঘাটার পুলিশ। পরে রাতে তিনি ওই অভিযোগ দায়ের করেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

২০১২ সালে বসিরহাটের বাসিন্দা মৌসুমীর সঙ্গে বিয়ে হয় বেলেঘাটার অমিতের। পেশায় গাড়িচালক অমিত পাঁচ বছরের সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে রাসমণি বাজারের ওই ফ্ল্যাটের দোতলায় থাকতেন। সঙ্গে থাকতেন অমিতের মা-ও। প্রাথমিক তদন্তের পরে তদন্তকারীদের দাবি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তি চলছিল। তাঁরা জেনেছেন, ঘটনার দিন অমিত ও মৌসুমীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। তার পরেই অসুস্থ মাকে নিয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান অমিত। ওই সময়েই নিজের ঘরে ঢুকে আত্মহত্যা করেন মৌসুমী। পাশের ঘরেই ছিল তাঁর পাঁচ বছরের ছেলে। পুলিশের দাবি, মায়ের খোঁজ না পেয়ে অন্য ঘরের দরজা ঠেলে ঢোকে শিশুটি। দেখতে পায় ওই দৃশ্য। তদন্তকারীদের পরে সে জানায়, ঘরে ঢুকে সে দেখতে পায়, তার মা ‘লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’ কিন্তু কোনও কথা বলছেন না। এর পরেই সে চিৎকারের সঙ্গে কান্না জুড়ে দেয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে শিশুটির কান্নার আওয়াজ পেয়ে ছুটে আসেন আবাসনের অন্য বাসিন্দারা।

তাঁরাই প্রথমে জানলা দিয়ে শিশুটির সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটি জানতে পারেন। পুলিশ জানিয়েছে, দরজায় তালা থাকায় বাসিন্দারা প্রথমে ভিতরে ঢুকতে পারেননি। পরে শিশুটি জানলা দিয়ে চাবি দিলে ওই বাসিন্দারা দরজা খুলে ভিতরে ঢোকেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suicide Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE