Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Vishwakarma Puja

নারী পৌরোহিত্যে বিশ্বকর্মার বন্দনা

রাত-দিন এক করে মাটির জালায় এঁকেছেন বিশ্বকর্মা আর তাঁর বাহনকে। নিজেদের তৈরি কাগজের ফুল, পাখি, শিকলে সেজে উঠেছে পুজোর অঙ্গন।

বদল: বিধি মেনে পুজোয় শামিল আবাসিকেরা। বৃহস্পতিবার, পাভলভে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বদল: বিধি মেনে পুজোয় শামিল আবাসিকেরা। বৃহস্পতিবার, পাভলভে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৩৫
Share: Save:

পুজো হবে কি হবে না, সেই দোলাচল ছিল শেষ মুহূর্তেও। কিন্তু ওঁদের জেদের কাছে হার মেনেছিলেন সবাই। তাই শেষ পর্যন্ত বছর পঁয়ত্রিশের সংহিতার কণ্ঠে উচ্চারিত বিশ্বকর্মার মন্ত্রেই প্রথা ভাঙার সূচনা হল।

মহালয়া আর বিশ্বকর্মা পুজো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল পাভলভের আবাসিকদের আয়োজনে। চন্দ্রশেখর, সুকর্ণ, তপন, টুকাই, দেবাশিস, দেবব্রত— বিশ্বকর্মার ছয় কারিগর ওঁরা। হাতে হাতে সাহায্য করতে অনেক আবাসিকের মতোই এগিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা, সাদিকুল ইসলাম। পুজোর আনন্দে ওঁরা ভুলেছেন পরিবার থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণাও।

রাত-দিন এক করে মাটির জালায় এঁকেছেন বিশ্বকর্মা আর তাঁর বাহনকে। নিজেদের তৈরি কাগজের ফুল, পাখি, শিকলে সেজে উঠেছে পুজোর অঙ্গন। অথচ কোভিডের জন্য এ বছর পুজোই বন্ধ হতে বসেছিল। গত চার বছর ধরে

মূর্তি এনে পুরোহিত ডেকে পুজো করছেন এই আবাসিকেরা। এ বছর মূর্তি আসবে না, পুরোহিত ডাকা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আবাসিকদের। যা শুনে বিশ্বকর্মার ছবি আঁকার দায়িত্ব তুলে নেন সেরামিকের প্রশিক্ষণ নেওয়া ওই ছয় শিল্পী। ঠাকুর না-হয় হল। মন্ত্র পড়বেন কে? এগিয়ে আসেন সংহিতা। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে লেডিজ় হস্টেলে থাকতেন তিনি। তার আগে নিজের বাড়িতে

নিয়মিত পুজো করতেন। কিন্তু বিশ্বকর্মার মন্ত্র তো জানা নেই! যাঁর নামের অর্থেই লুকিয়ে বেদের মন্ত্র সমষ্টি, তাঁকে কে রোখে! নেট ঘেঁটে নামানো হল মন্ত্র। দিন কয়েকেই প্রস্তুতি সারা।

মনোরোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেরামিক, প্রিন্টিং, ধোবি-ঘর ও চা-ঘরের কর্মী ওঁরা। পুজোর আয়োজনে আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে ছিল ওই সংগঠন। দুপুরে সবার জন্য ছিল মাটন বিরিয়ানি আর ফিরনি।

এম বি এ পাশ চন্দ্রশেখর, এম ফার্মা সুকর্ণ, নিরাপত্তারক্ষী দেবাশিস, তপন, টুকাই, দেবব্রতদের কেউ ছ’মাস, কেউ এক বছর কেউ বা দশ বছরের আবাসিক। কেউ পরিবারে ব্রাত্য, কারও জন্য আবার অপেক্ষায় পরিজনেরা। কারও রয়েছে পারিবারিক সচ্ছলতা, কেউ আবার আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া। তবে ওঁরা এক জায়গায় এক, শিল্পী। প্রায় সবারই সেই সত্তার প্রকাশ পেয়েছে আবাসিক থাকাকালীন।

‘‘এই শিল্পীসত্তা সমাজে প্রশংসিত হলে মনোবল বাড়ত ওঁদের! অথচ অনেকেই সুস্থ, তবু আইনি জটিলতায় ঘরে ফিরতে না-পারায় মুষড়ে পড়ছেন। ওঁদের জন্য বিশেষ কিছু করতে পারছি কোথায়!’’— আক্ষেপ করছিলেন পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শুক্লা দাসবড়ুয়া বলেন, “এই আয়োজনে সমাজকে দুটো বার্তা দিচ্ছেন ওঁরা।

মনোরোগী মানেই তিনি কোনও কাজে অক্ষম, এই ভাবনা বদলের সময় এসেছে। দ্বিতীয়টি হল, মেয়েরা শুধু আড়ালে থেকেই দায়িত্ব পালন করেন না, বড় পরিসরেও তা পালনে তাঁরা সক্ষম।” সংস্থার তরফে রত্নাবলী রায় বলছেন, “ব্রাহ্মণ্যবাদ, বর্ণবাদ নীরবে ভেঙে সমাজের পরিবর্তনকে এগিয়ে দিচ্ছেন ওঁরাই। এঁরা প্রত্যেকে এক-এক জন স্রষ্টা। মনোরোগীর তকমা দিয়ে ওঁদের সমাজ পিছনে ঠেলে রাখতে পারবে না। ওঁরাই আগামীর পথপ্রদর্শক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vishwakarma Puja Festivals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE