Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

খাস কলকাতায় বাইকে উঠে নিগ্রহকারীকে মার তরুণীর

কোনও শুটিংয়ের দৃশ্য নয়। বাস্তবের ছবি। ওই তরুণীর যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে মোটরবাইক চালককে হাতেনাতে ধরে এ ভাবেই কাবু করলেন তিনি নিজেই।

ধৃত সুবোধ শর্মা এবং তরুণীর ক্ষতবিক্ষত আঙুল (ইনসেটে)।

ধৃত সুবোধ শর্মা এবং তরুণীর ক্ষতবিক্ষত আঙুল (ইনসেটে)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

মোটরবাইক চালাচ্ছে হেলমেট পরা এক যুবক। তার পিছনে বসে এক হাত গলায় জড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে যুবককে একের পর এক ঘুসি মেরে কাবু করছেন বছর একুশের এক তরুণী। সোমবার রাতে সার্ভে পার্ক থানা এলাকায় এমনই এক দৃশ্যের সাক্ষী রইল শহর।

কোনও শুটিংয়ের দৃশ্য নয়। বাস্তবের ছবি। ওই তরুণীর যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে মোটরবাইক চালককে হাতেনাতে ধরে এ ভাবেই কাবু করলেন তিনি নিজেই। পরে অভিযুক্তকে পুলিশের হাতেও তুলে দেন ওই তরুণী। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবকের নাম সুবোধ শর্মা (২৮)। তার বাড়ি ছিট কালিকাপুরে। তরুণীর সাহসিকতার জন্য মঙ্গলবারই তাঁকে কলকাতা পুলিশের তরফে স্মারক দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।

পুলিশকে ওই তরুণী অভিযোগে জানান, সোমবার তখন রাত পৌনে এগারোটা। মোমিনপুর থেকে ‘রক ক্লাইম্বিং’-এর অনুশীলন সেরে ফিরছিলেন তিনি। যাদবপুর সুলেখা মোড়ে বাস থেকে নেমে গলি দিয়ে হেঁটে ফিরছিলেন তরুণী। বাড়ির কাছে পৌঁছতেই তাঁর পাশ দিয়ে একটি মোটরবাইক চলে যায়। তরুণীর দাবি, তিনি দেখেন, ওই যুবকের মাথায় হেলমেট থাকা সত্ত্বেও সে যেতে যেতে তাঁর দিকে বারবার ফিরে তাকাচ্ছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিষয়টিতে আমল না দিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দেন তিনি। যখন তিনি বাড়ির দরজা থেকে কয়েক হাত দূরে, আচমকা বাইকটি ফিরে আসে। তাঁর দাবি, ‘এই মেয়ে’ বলে ডেকে ওঠে ওই বাইকচালক। তরুণী তাকাতেই অভিযুক্ত সামনে থেকে তাঁর যৌন হেনস্থা করে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঘাবড়ে যান তিনি। এর পরেই চিৎকার করতে করতে দৌড়ে ছেলেটির হাত ধরে টান মারতে থাকেন তরুণী। তবু আটকাতে না পারায় যুবকের বাইকের পিছনে লাফিয়ে ওঠেন। এর পরেই পিছন থেকে যুবকের গলা জড়িয়ে একের পর এক ঘুসি মেরে তাকে কাবু করার চেষ্টা করেন। অভিযুক্ত বাঁচার জন্য তাঁর হাতের আঙুল কামড়ে দেয় বলে দাবি তরুণীর। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, রক্তাক্ত হাতেই অভিযুক্তকে ধরে থাকেন।

এক সময়ে হেলমেট খুলে ফেলে বাইকটিকে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে দেয় অভিযুক্ত। পুলিশকে তরুণী জানান, তাঁর চিৎকারে তখন পড়শি এবং পরিবারের সবাই রাস্তায় পৌঁছে গিয়েছেন। বেগতিক দেখে ছেলেটি তাঁর পা ধরে ক্ষমা চাইতে থাকে। তত ক্ষণে মোটরবাইক আরোহীকে ঘিরে ফেলেছেন পাড়ার লোকেরা। তরুণীর আবাসনের সম্পাদক শেষে সার্ভে পার্ক থানায় ফোন করে পুলিশকে ডেকে পাঠান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত যুবককে ধরে থানায় আনে এবং তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িতে তখন দুই বোন। তরুণী জানালেন, মঙ্গলবার সকালে একাই গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছেন তিনি। ভয় করেনি? সটান উত্তর, ‘‘আমার ভয় কম। বাবা-মা আজ অফিস যেতে চাইছিলেন না। আমিই জোর করে পাঠালাম।’’ ইংরেজি সাহিত্যের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ওই তরুণী জানান, এক সময়ে মাত্র ছ’মাসের জন্য ক্যারাটে শিখেছিলেন তিনি। কিন্তু সে অনেক বছর হয়ে গিয়েছে। ইদানীং রক ক্লাইম্বিং শিখছেন। সোমবার রাতে সেই অনুশীলন থেকেই বাড়ি ফিরছিলেন। দিদির সাহসিকতায় গর্বিত ছোট বোন। সোমবার রাতে দিদি যখন অভিযুক্তকে একাই কাবু করছেন, তখন মোবাইলে অভিযুক্তের ছবি তুলতে ভোলেননি তিনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় ধৃত যুবক জানিয়েছে, সে আসবাব তৈরির কাজ করে। সেই কারণে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হয়। সোমবারও সেই কাজেই গিয়ে ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে। তবে অভিযুক্ত মাদকাসক্ত ছিল বলেই তরুণী এবং পুলিশের দাবি। ধৃতকে এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে ২২ মে পর্যন্ত তার জেল হেফাজত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE