Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাবধান! পুজোর শহর ভরেছে মহিলা কেপমারে

দিন তিনেক আগে তিন জন বাংলাদেশি মহিলা কেপমার গ্রেফতার হয়। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গত এক মাসে বিভিন্ন শপিং মলের আশপাশ থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ২৫ জনেরও বেশি মহিলা পকেটমার।

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

পুজোর ভিড়ে কোনও অচেনা তরুণী আলাপ জমাতে চাইলে অথবা বেশি উৎসাহ নিয়ে সাহায্য করতে চাইলে সর্তক থাকুন। আলাপ জমানোর ফাঁকে সে আপনার পকেট ফাঁক করে পালাতে পারে। আপনার অজান্তে আপনার পকেট থেকে তুলে নিতে পারে মোবাইল ফোন। সাইড ব্যাগে ব্লেড চালিয়ে হাতিয়ে নিতে পারে টাকাপয়সা। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এ বার পুজোয় ভিন্‌ রাজ্য থেকে পুরুষ পকেটমারের চেয়েও অনেক বেশি ঢুকেছে মহিলা পকেটমার ও ছিনতাইবাজের দল। ঢুকে পড়েছে কেপমারের দলও।

দিন তিনেক আগে তিন জন বাংলাদেশি মহিলা কেপমার গ্রেফতার হয়। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গত এক মাসে বিভিন্ন শপিং মলের আশপাশ থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ২৫ জনেরও বেশি মহিলা পকেটমার। তবে এত বেশি সংখ্যক মহিলা পকেটমার ধরা পড়ার পরেও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না পুলিশ। পুলিশ জানাচ্ছে, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশ থেকেও মহিলা লিফটারেরা চলে এসেছে কলকাতায়। পুজোর মুখে তাদের টার্গেট বড় বড় পুজো মণ্ডপগুলি। শহরের বহু নামী পুজো মণ্ডপে এই মহিলা লিফটারেরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকবে বলে গোয়েন্দাদের অনুমান। লালাবাজারের ওয়াচ সেকশনের এক পুলিশ অফিসার জানাচ্ছেন, পুরুষ লিফটার নেই তা নয়, তবে এ বার তাদের বেশি চিন্তা মহিলা লিফটারদের নিয়েই।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এক সময়ে বাচ্চা কোলে নিয়ে মহিলারা এই ছিনতাইয়ের কাজ করত। মানুষ সর্তক হয়ে যাওয়ায় তারা এখন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। সুন্দর সাজগোজ করা তরুণী, হিন্দি ও ইংরেজিতে কথা বলা মহিলারাও হতে পারেন পকেটমার বা কেপমার। শুধু পুরুষ মোটরবাইক ছিনতাইবাজ নয়, মোটরবাইকে চেপে ‘মিক্সড ডবলস’ ছিনতাইবাজের দলও কাজ করছে। পুরুষ মোটরবাইক চালকের পিছনে মহিলা ছিনতাইবাজ রাস্তায় হাঁটতে থাকা পথচারীকে কিছু জিজ্ঞেস করার অছিলায় ছিনতাই করে পালাচ্ছে। মুখ হাত ঢাকা পোশাক পরা মহিলাদের থেকেও সাবধানে থাকতে বলেছেন গোয়েন্দারা। মহিলাদের পোশাক পরে পুরুষ ছিনতাইবাজ বা পকেটমারও পুজো দেখার সময়ে মেয়েদের লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁদের হাতের ব্যাগের টাকা সাফ করে দিতে পারে বলেও জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

পুজোর সময়ে কখন এই দল সব থেকে বেশি সক্রিয় থাকবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা? গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বেশি রাতে যখন পুলিশদের ডিউটি বদল হয়, সেই সময়টাকে বলা হয় ‘স্ট্যান্ড ডাউন’। এই ডিউটি পাল্টানোর সময়ে রাস্তাঘাটে পুলিশের সংখ্যা অনেকটা কমে যায়। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, ওই সময়েই সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে ছিনতাইবাজ ও পকেটমারের দল। তাই এ বার শহরের রাস্তায় শেষ রাতে বা ভোরবেলা বেশি সংখ্যক পুলিশ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে লালবাজার। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ভোরে এক দিকে পুলিশ থাকে কম, অন্য দিকে সারারাত ঠাকুর দেখার পরে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যান। সেই সুযোগেই ছিনতাইবাজরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে জন্য ঠাকুর দেখে বাড়ি ফেরার পথে দলবেঁধে বাড়ি ফিরতে বলছে পুলিশ। শুধু মণ্ডপেই নয় বাড়ি ফেরার পথে রেল স্টেশন, মেট্রো স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডেও সর্তক থাকতে হবে। মোবাইল ফোন জামার পকেটে বা প্যান্টের পকেটে না রেখে হাতে রাখাই ভাল। সোনার চেন বা দুল না পরাই ভাল। সাইড ব্যাগ থাকলে, তা সাবধানে রাখতে হবে। বিশেষ ভাবে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে এটিএম কাউন্টারে। সারারাত ধরে ঠাকুর দেখে খাওয়াদাওয়া করে টাকা ফুরিয়ে গেলে এটিএম কাউন্টারে অনেকে টাকা তুলতে যান। সেখানে টাকা তুলতে কোনও রকম অসুবিধা হলেও অচেনা কেউ যেচে সাহায্য করতে চাইলে তা না নেওয়াই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE