Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুজোয় চাই নতুন পথ, শুরু কাজ

কলকাতার পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে বন্দর এলাকার ওই রাস্তাগুলি চালু করতে পারব বলে আশা করছি।’’ রবিবার থেকে হাইড রোড মেরামতির কাজও শুরু হয়েছে।

জোরকদমে: তৈরি হচ্ছে বিকল্প রাস্তা। মাটি ফেলে সমান করা শুরু হল অালিপুর অ্যাভিনিউ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

জোরকদমে: তৈরি হচ্ছে বিকল্প রাস্তা। মাটি ফেলে সমান করা শুরু হল অালিপুর অ্যাভিনিউ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪০
Share: Save:

যানজট কাটাতে বেহালা ও শহরের বাকি অংশের মধ্যে বিকল্প রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করল পূর্ত দফতর। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আলিপুর অ্যাভিনিউ থেকে নিউ আলিপুর হয়ে ডায়মন্ড হারবার রোডে নিয়ে যাওয়া হবে একটি রাস্তা। সোমবার থেকে তার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজা সন্তোষ রায় রোড থেকে মাঝেরহাট সেতুর নীচ দিয়ে নিউ আলিপুরের হুমায়ুন কবীর সরণি পর্যন্ত কোনও রাস্তা তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। এ নিয়ে রেলের সঙ্গে ওই এলাকায় যৌথ সমীক্ষা করবে রাজ্য প্রশাসন। পুজোর আগেই যাতে নতুন রাস্তা চালু করা যায়, জোরকদমে এখন সেই চেষ্টাই চলছে বলে প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন।

বন্দর এলাকায় ওল্ড গরাগাছা রোড, ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোড, হবোকেন রোড-সহ কয়েকটি নতুন পথ সারিয়ে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। কলকাতার পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে বন্দর এলাকার ওই রাস্তাগুলি চালু করতে পারব বলে আশা করছি।’’ রবিবার থেকে হাইড রোড মেরামতির কাজও শুরু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্গাপুর সেতুতে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। তাই ওই এলাকায় বিকল্প রাস্তা হিসেবে আলিপুর অ্যাভিনিউকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ওই রাস্তা অবশ্য রেললাইনে গিয়ে শেষ হয়েছে। তার আগে খালও রয়েছে। পূর্ত দফতর ও পুলিশের কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই খালের উপরে হিউম পাইপ দিয়ে অস্থায়ী কালভার্ট তৈরি করা হবে। তার পরে রেলের তিনটি বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে হবে। তৈরি করতে হবে লেভেল ক্রসিংও। তার পরে নিউ আলিপুরের ‘এ’ ও ‘বি’ ব্লক পেরিয়ে রাস্তা জুড়ে দেওয়া হবে নিউ আলিপুর রোডের সঙ্গে। তবে কত দিনের জন্য ওই অস্থায়ী কালভার্ট তৈরি করা হবে, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি পূর্ত দফতর।

এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, আলিপুর অ্যাভিনিউয়ে জেসিবি মেশিন দিয়ে জঙ্গল সাফ করে মাটি ফেলে সমান করা হচ্ছে। যে ঠিকাদার সংস্থা তারাতলা থেকে জোকা পর্যন্ত রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করে, তারাই এই বরাত পেয়েছে। ঠিকাদার সংস্থার এক কর্মী জানান, জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে বলা হয়েছে।

নবান্নের খবর, মাঝেরহাট সেতুর পাশ দিয়ে রাজা সন্তোষ রায় রোড হয়ে আর একটি রাস্তা তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। সেখানেও একই ভাবে কালভার্ট ও লেভেল ক্রসিং তৈরি করতে হবে। এর সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে রেল, পুলিশ ও পূর্ত দফতরের কর্তারা যৌথ পরিদর্শন করবেন।

পুরসভার কর্তারা বলছেন, বন্দর এলাকার নতুন রাস্তার দু’পাশে থাকা জঙ্গল এবং নিকাশি সাফ করতে বলা হয়েছে। রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো লাগানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পূর্ত, মেকানিক্যাল, রাস্তা, জঞ্জাল এবং আলো বিভাগ একসঙ্গে কাজ করছে। প্রতিদিন ওই রাস্তায় দেড় হাজার মেট্রিক টন হটমিক্স দেওয়া হচ্ছে। তবে পুজোর আগে রাস্তা খারাপ হলে তা-ও ফের সারিয়ে দেওয়া হবে।

তবে, রেললাইন পেরিয়ে নতুন রাস্তা করা কতটা নিষ্কণ্টক হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের। সরকারি ভাবে রেলকর্তারা জানান, রাজ্যের তরফে এখনও কোনও প্রস্তাব তাঁরা পাননি। তবে রাজ্যের পরিকল্পনা আঁচ করে নিজেদের মতো পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। রেলের একটি সূত্রের দাবি, শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় যাত্রিবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেনের চাপ রয়েছে। লেভেল ক্রসিং তৈরি হলে তা ট্রেন এবং গাড়ি চলাচল— দু’য়ের উপরেই প্রভাব ফেলবে। কারণ, ট্রেন যাতায়াতের সময়ে লেভেল ক্রসিং বন্ধ রাখতে হবে। আবার দীর্ঘক্ষণ লেভেল ক্রসিং বন্ধ থাকলে যান চলাচল বিঘ্নিত হবে। এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশদে আলোচনা করে নিতে চাইছেন রেলকর্তারা।

অনেকেই বলছেন, বেহালা ও বাকি শহরের মূল সংযোগকারী রাস্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াতেই যানজট বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি বিকল্প রাস্তা তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন। পুলিশেরই একাংশ বলছে, পুজো এগিয়ে এলে বেহালায় যানজট আরও বাড়বে। তার আগেই রাস্তা চালু করার চেষ্টা চলছে।

এ দিন পুজো সমন্বয় বৈঠকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের গলাতেও ছিল একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘এ বার মাঝেরহাট নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছে। আমাদের সকলকে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। কলকাতা পুলিশ এবং কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলছি, আমরা একসঙ্গে কাজ করলে দর্শনার্থীদের অসুবিধা হবে না। যখন চ্যালেঞ্জ আসে, ভগবান তা মোকাবিলা করার শক্তি দেন। এ বার ট্র্যাফিক আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বা চ্যালেঞ্জের সামনে এসেছে। আমরা সবাই মিলে এর মোকাবিলা করতে পারব আশা করি। আপনাদের (পুজো উদ্যোক্তা) সহযোগিতা দরকার।’’

এ দিন গিয়ে দেখা গেল, ‘রকব্রেকার’ এবং ‘এক্সক্যাভেটর’ যন্ত্র দিয়ে ভাঙা সেতুর ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ চলছে। ধ্বংসাবশেষ সরানোর দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধ্বংসাবশেষটি সেতুর সব থেকে লম্বা অংশ (৩৪.৭৫ মিটার)। এর তলায় গ্যাসের পাইপ, বিদ্যুতের তার রয়েছে। তাই সাবধানে কাজ করতে হচ্ছে। তার মধ্যে খালে জোয়ারের জল ঢুকে পড়ায় কাজে

বাধা পড়ছে।’’ বুধবারের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন ওই আধিকারিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Puja Majerhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE