Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জঞ্জাল যন্ত্রণা! এই হস্টেলে থাকা যায়?

রবিবার শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির একাধিক হস্টেলে ঘুরে দেখা গেল, সেগুলি বসবাসের উপযোগী নয়। পড়ুয়াদের থেকে বরং সেই সব হস্টেলে কুকুরের ‘দাপট’ বেশি।

দৈন্যদশা: চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসের পাশে আবর্জনার স্তূপ

দৈন্যদশা: চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসের পাশে আবর্জনার স্তূপ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

হস্টেলের প্রায় প্রতি তলার বাঁকেই উল্টে পড়ে রয়েছে আবর্জনা ভর্তি বিন। প্রবল দুর্গন্ধে টেকা দায়। আশপাশে ডাঁই করা খাবারের প্যাকেট, জলের বোতল। তার মধ্যেই দাপাচ্ছে কুকুরের দল। যেন সদ্য উৎসব শেষ হয়েছে।

এমনই একটি ডাস্টবিন লাগোয়া ঘরের জানলা এঁটে বসে এক ডাক্তারি পড়ুয়া। ছবি তুলতে দেখে বললেন, ‘‘এ তো রোজকার ব্যাপার। জানলা-দরজার মতো নাকও বন্ধ রাখতে পারলে ভাল হত। হবু চিকিৎসকদের থাকার জায়গার স্বাস্থ্য কেমন দেখুন!’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘শৌচাগারের দিকটা একবার ঘুরে আসুন। হস্টেল কাকে বলে বুঝবেন!’’

রবিবার শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির একাধিক হস্টেলে ঘুরে দেখা গেল, সেগুলি বসবাসের উপযোগী নয়। পড়ুয়াদের থেকে বরং সেই সব হস্টেলে কুকুরের ‘দাপট’ বেশি। প্রায় প্রতিটি তলায় ময়লার বিন ভর্তি হয়ে উল্টে পড়ে রয়েছে। হস্টেলের বেশির ভাগ জায়গায় ছাদের চাঙড় খসে পড়ছে। এক ঘরে অনেক জনকে থাকতে হলেও দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে শৌচাগারের পাশের ঘরগুলি ফাঁকা রাখতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। অভিযোগ, হস্টেলে জলের অভাব নিয়ে বারবার সরব হয়েও সমস্যা মেটেনি। ছাদের ঘরে ‘ফল্স সিলিং’ লাগানো হলেও সেগুলি মাঝে মধ্যেই ভেঙে পড়ছে।

সব মিলিয়ে অবস্থা এমনই যে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পড়ুয়াদের মতো হস্টেল নিয়ে যে কোনও দিন বড় আন্দোলনের পথে যেতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি দিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং এসএসকেএমের মতো মেডিক্যাল কলেজগুলির হস্টেলের আবাসিকেরা। এক পড়ুয়া বললেন, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ঘটনার পরেও কর্তৃপক্ষ সচেতন না হলে খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।’’

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে বেশির ভাগ জায়গায় খসে পড়েছে ছাদের অংশ

সবথেকে খারাপ অবস্থা নীলরতন সরকার আর চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের। এনআরএসে পুরুষ এবং মহিলাদের মিলিয়ে হস্টেলে প্রায় ৩০০টি ঘরে থাকতে হচ্ছে অন্তত এক হাজার জনকে। অভিযোগ, এক একটি ঘরে চার পাঁচ জন করে থাকতে দেওয়া হলেও পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা করা হয়নি। নিয়মিত হস্টেল সাফাইও হয় না। দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ার দাবি, ‘‘কিছু দিন আগেই ছাদের কিছুটা চাঙড় ভেঙে পড়ে এক ছাত্র আহত হয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষকে বলা হলে, ওই অংশের সিমেন্ট খসিয়ে ফেলা হয়েছে। তার বেশি কিছু করা হয়নি।’’ ওই পড়ুয়াই জানান, হস্টেলের পরিবেশ এমন যে, গত বৃষ্টির মরসুমেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন।

কোথাও আবার বারান্দায় বিন থেকে উপচে পড়েছে জঞ্জাল, পড়ে রয়েছে কাঠ-বাঁশের টুকরোও

চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে ৩টি হস্টেল রয়েছে। সব ক’টিতেই কমপক্ষে ৫০-৫৩টি করে ঘর রয়েছে। সেখানে বসবাস করছেন ১৩০ জন করে। সেখানকার লিন্টন বয়েজ হস্টেলের এক ছাত্র বললেন, ‘‘ছাদের বেশ কিছুটা করে প্রতিদিনই খসে পড়ছে। এখানে তো হস্টেল সুপারই নেই। ‘দাদা’ ধরলে তবেই থাকতে পারা যায়।’’

ছাত্রাবাস লাগোয়া এলাকায় জমেছে প্লাস্টিক, টালির টুকরো। নিজস্ব চিত্র

এসএসকেএম হাসপাতালেও পুরুষ এবং মহিলাদের মিলিয়ে তিনটি হস্টেল। নতুন ভবন তৈরি হলেও অভিযোগ, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এক পড়ুয়ার দাবি, ‘‘প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের রসা রোডের একটি ছোট বাড়িতে ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানকার অবস্থা খুবই খারাপ। সব ভেঙে পড়ছে। এক ঘরে অনেককে থাকতে হয়।’’ সেই সঙ্গে দাবি করলেন, মূল ক্যাম্পাসে হাজারেরও বেশি পড়ুয়া থাকলেও ক্যান্টিনের খাবারে কোনও রকম ভর্তুকি মেলে না। ক্ষুব্ধ এক

প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার প্রশ্ন, ‘‘আমাদের কেন মূল ক্যাম্পাসে থাকতে দেওয়া হবে না?’’

আরজি কর-এর পড়ুয়াদের জন্যও মূল ক্যাম্পাস, মানিকতলা এবং বেলগাছিয়া মিলিয়ে তিনটি হস্টেল রয়েছে। এক পড়ুয়ার অভিযোগ, ‘‘কাউন্সেলিংয়ে বরাবরই গাফিলতি থাকে। ঘর ফাঁকা থাকলেও শহরের ছেলেমেয়েরা ঘর পান না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনায় এখন সবার টনক নড়েছে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল সুপারদের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ আগেই সক্রিয় হননি কেন? উত্তর মেলেনি দেবাশিসবাবুর কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE