এ ভাবেই মারা হয়েছে অশীতিপর শান্তিপ্রভা দেবকে। —নিজস্ব চিত্র।
মধ্যবয়স্ক ছেলের হাতে লাঠি। সামনে অশীতিপর বৃদ্ধা মা। তাঁকে সেই লাঠি উঁচিয়ে বা কখনও লাঠির ঘা মেরে শাসাচ্ছে ছেলে।
এই ঘটনা এক দিনের নয়। নিমতার বিএল মুখার্জি রোডের বাসিন্দাদের কাছে এই দৃশ্য নিত্য দিনের। একতলা বাড়িতে থাকে আশি বছরের বৃদ্ধা শান্তিপ্রভা দেব। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলে বিকাশ দীর্ঘ দশ বছর আগে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। বাড়িতে এখন বৃদ্ধা থাকেন তাঁর ছোট ছেলেকে নিয়ে। ছোট ছেলে ভুলু বেকার। স্বামী সুকুমার রাজ্য সরকারের ভূমি রাজস্ব দফতরে চাকরি করতেন। তাঁর পেনসনই এখন ভরসা শান্তিপ্রভার। সেই টাকাতেই চলে মা আর বেকার ছেলের সংসার।
স্থানীয়েরা জানান, ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে পারেন না ওই বৃদ্ধা। ঘরের বাইরেও খুব বেশি বেরোতে পারেন না। ভুলুবাবু প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ বাজার নিয়ে আসেন। বিকেল চারটে পর্যন্ত বৃদ্ধা মা সে সব রান্না করেন। তার পরে চলে খাওয়াদাওয়া। সন্ধ্যায় ফের বেরিয়ে যান ছেলে। রাতে অবশ্য খাওয়া জোটে না শান্তিপ্রভাদেবীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় রোজই বাড়ির ভিতর থেকে মাকে মারধরের আওয়াজ পান প্রতিবেশীরা। প্রতিবাদ করতে গেলে জোটে গালিগালাজ।
আরও পড়ুন: মা কি বেঁচে, হাসপাতালের দ্বারস্থ মেয়ে
বাঁচাও বাবা! তারকেশ্বরে পুজো দিল ৩ চোর, তারপর...
শান্তিপ্রভা দেব।
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে এই ঘটনা সহ্য করতে পারেননি প্রতিবেশীরাও। তাই সুযোগ পেয়েই ঠিক উল্টোদিকের বাড়ির কর্ত্রী প্রত্যাশা রায় চৌধুরী মারধরের গোটা ঘটনা মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করেন। আর সেই ছবিতেই দেখা যাচ্ছে কী ভাবে মধ্যবয়সী ভুলু লাঠি নিয়ে মারধর করছেন বৃদ্ধা মাকে। সঙ্গে তুই করে সম্বোধন।
প্রত্যাশা সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করেন। তার পরেই সেই ভিডিয়ো দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। সেই ভিডিয়ো পৌঁছয় নিমতা থানার পুলিশের কাছেও। তাঁরা প্রথমে ভুলুকে সাবধান করেন। কিন্তু তার পরেও কোনও পরিবর্তন হয় না ছেলের ব্যবহারের। মায়ের পেনশনের টাকা নিয়ে মাকে মারধর করেন ভুলু, অভিযোগ প্রতিবেশীদের। ছেলের হাতে মায়ের এই অত্যাচারের ভি়ডিয়ো নজরে পড়ে পুলিশ কর্তাদের। বিষয়টি জানতে পেরে দলবল নিয়ে গিয়ে ছেলেকে গ্রেফতারও করে নিমতা থানার পুলিশ। যদিও বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তিকে আদালতে তোলা হলে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।
দেখুন ভিডিয়ো
এ দিন খবর পেয়ে মায়ের কাছে এসে হাজির হন বিকাশবাবু ও তাঁর স্ত্রী শুভ্রাদেবী। তাঁদের কথায়, ‘‘ভুলুর অত্যাচারে আমরাও ঘর ছেড়েছি। মাকে বারবার আমাদের সঙ্গে যেতে বললেও যান না। এ বার থেকে নিয়মিত মায়ের খবর নেব।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy