রাস্তায় ছুটে চলা বাস, মোটরবাইক, গাড়ির পাশ দিয়েই রুদ্ধশ্বাসে দৌড়চ্ছেন এক তরুণী। পিছনে রং হাতে এক যুবক। ডিউটি শেষে ওই পথেই মোটরবাইকে ফিরছিলেন সাদা পোশাকে থাকা তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশ আধিকারিক। তরুণীকে দেখেই বাইক দাঁড় করান তিনি। কী হয়েছে, প্রশ্ন করতেই কেঁদে ফেলেন তরুণী। বলেন, ‘‘ছেলেটা পিছু নিয়েছে। অসভ্যতা করছে। জোর করে রং মাখাতে চাইছে।’’
বৃহস্পতিবার, দোলের রাতে এই ঘটনা ঘটে দুর্গাপুর ব্রিজে। বছর পঁচিশের ওই তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় বংশীদাস শেঠি নামে তাঁরই বয়সি এক যুবককে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪এ (যৌন হেনস্থা) এবং ৩৫৪ডি (অনুসরণ করা) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই আদালতে তরুণীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। সেই মর্মে আদালতের কাছে আবেদন করছে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই রাতের শহরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক তরুণী। বালিগঞ্জ এলাকায় গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে তাঁর যৌন হেনস্থার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গিয়ে বেধড়ক মার খেতে হয় তরুণীর হবু স্বামী এবং এক আত্মীয়কে। তদন্তে নেমে পুলিশ ছ’জনকে গ্রেফতার করলেও ওই ঘটনায় রাতের শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। এই ধরনের একাধিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দোল উৎসব ঘিরে বাড়তি পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করেছিল লালবাজার। মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও বাড়তি নজর দিয়ে দেখার কথা জানিয়েছিলেন লালবাজারের কর্তারা। কলকাতা পুলিশের মহিলা টিম ‘উইনার্স’ও শহরে নজরদারিতে থাকবে বলে জানায় পুলিশ। এর মধ্যেই ঘটেছে এই ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীর বাড়ি রায়দিঘিতে। তিনি নিউ আলিপুর এলাকায় পরিচারিকার কাজ করেন। প্রতিদিন নিউ আলিপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে তিনি বাড়ি যান। রোজকার মতো বৃহস্পতিবার রাতেও নিউ আলিপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরবেন বলে দুর্গাপুর ব্রিজ ধরে যাচ্ছিলেন তিনি। তরুণী বলেন, ‘‘ব্রিজ ধরে হাঁটার সময়ে এক যুবক আমার পথ আটকায়। আমি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে রং মাখায়। আমি এক চড় মারি। এর পরে সে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ভয়ে আমি দৌড়তে শুরু করি।’’
সেই সময়েই দুর্গাপুর ব্রিজ দিয়ে যাচ্ছিলেন ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। সাদা পোশাকে থাকায় তাঁর উপরেও চড়াও হয় ওই যুবক। তবে ব্রিজের উপরে ঝামেলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন ব্রিজের দু’পারে থাকা দুই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। তখনই গ্রেফতার করা হয় ওই যুবককে। ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘চিৎকার-চেঁচামেচিতে পাশের বস্তির ছেলেরাও জড়ো হয়ে যায়। কোনও মতে ছেলেটিকে উদ্ধার করে নিউ আলিপুর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সে মত্ত অবস্থায় ছিল।’’ রাতে তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে পুলিশ।
এ দিন তরুণী ফোনে বলেন, ‘‘ওই পুলিশকর্মী ঠিক সময়ে না এলে কী হত, জানি না। আমার পরিবার আমার উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। কাজের জন্য এর পরেও কলকাতায় যেতে হবে। ভয় করছে, আবার কিছু হবে না তো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy