প্রতীকী ছবি।
এক মাসের ব্যবধানে খাস কলকাতার বুকে ফের চোর সন্দেহে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মারা হল এক যুবককে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ বারের ঘটনাস্থল প্রগতি ময়দান থানা এলাকার মিলনমেলা প্রাঙ্গণের পিছনে মঠেশ্বরতলা লেনের একটি নির্মীয়মাণ বহুতল চত্বর। সোমবার সকালে ওই ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মৃতের পরিচয় জানা যায়নি। তবে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্তকারীরা ছ’জনকে গ্রেফতার করেছেন। তারা ওই বহুতলেরই নিরাপত্তারক্ষী, কেয়ারটেকার ও নির্মাণকর্মী। এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারার কথা কবুল করেছে।
পুলিশ জানায়, নিহতের দেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, তাঁর দেহে অন্তত দশটি গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ওই যুবককে দফায় দফায় পেটানো হয়। লাঠি, বাঁশ, পাইপ ও কাঠের টুকরো দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি ওই যুবককে শুকনো লঙ্কার গুড়ো এবং খৈনির জল জোর করে খাওয়ানো হয়েছিল। তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে এলাকা ছেড়ে পালায় অভিযুক্তেরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত ২৪ মার্চ কালীঘাট থানা এলাকায় চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছিল এক যুবককে। তার আগে দমদম, ফুলবাগান, কসবা ও আনন্দপুরেও পরপর গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন লালবাজার থানাগুলিকে গণপিটুনি-বিরোধী প্রচার চালাতে নির্দেশ দিয়েছিল। কেন বারবার সাধারণ মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন? পুলিশের মতে, ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার প্রবণতা থেকেই এটা বারবার ঘটছে।
এক পুলিশকর্তার মতে, প্রগতি ময়দানের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন। ঘেরা জায়গার ভিতরে মারধর করায় প্রথমে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। ঘটনার দু’জন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পাওয়া গেলেও পুলিশকে তাঁরা নিজে থেকে কিছুই জানাননি। এলাকার এক বাসিন্দা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ তিনি মারধরের খবর পান। তাঁর দাবি, নিরাপত্তারক্ষীদের তিনি বলেছিলেন, আইন নিজেদের হাতে তুলে না নিতে।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ প্রগতি ময়দান থানায় ফোন করে কেউ এক জন গণপিটুনির খবর দেন। পুলিশ গিয়ে রক্তাক্ত ওই যুবককে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, অনুপম সরকার নামে এলাকার এক বাসিন্দা থানায় গণপিটুনির অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের কাছে তাঁর দাবি, সোমবার সকালে ওই যুবককে চোর সন্দেহে নির্মীয়মাণ বহুতল চত্বরে আটকে রেখে নৃশংস ভাবে মারধর করা হয়েছে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অনুমতি ছাড়া কাজ শুরু না করতে।
তদন্তকারীরা জানান, ওই নির্মীয়মাণ বহুতল চত্বরে দিনে ও রাতে দুই শিফটে নিরাপত্তারক্ষীরা কাজ করেন। রাতের শিফটে সাত জন রক্ষী থাকেন সেখানে। একই সঙ্গে কেয়ারটেকার এবং কর্মীরা মিলিয়ে আরও জনা কুড়ি থাকেন। দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীদের থানায় নিয়ে আসে। খতিয়ে দেখা হয় এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। তাতেই মারধর এবং অত্যাচারের ছবি দেখতে পান তদন্তকারীরা। তার পরেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy