বিমানবন্দরে উদ্ধার হওয়া সেই সোনা। নিজস্ব চিত্র
বিদেশে চাকরির প্রলোভন দিয়ে তাঁকে বলা হয়েছিল, মোটা টাকা বেতন। সঙ্গে ভাল খাওয়া-পরা। খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। উপার্জিত অর্থের সিংহভাগটাই জমিয়ে দেশের বাড়িতে পাঠানো যাবে।
সেই প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করে মাস দুয়েক আগে দালালের হাত ধরে দুবাই গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বাসিন্দা, ৪০ বছরের সন্দীপ (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর পরপরই শুরু হয় তাঁর যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবন। যে চাকরি পাওয়ার কথা ছিল, তা পাননি সন্দীপ। গত দু’মাস রাস্তায় শুয়ে, খেয়ে কাটাতে হয়েছে। ফুরিয়ে গিয়েছিল সঙ্গে থাকা সব টাকা। দেশে ফেরার টিকিট কাটার অর্থটুকুও ছিল না।
দেশে ফিরতে মরিয়া ওই যুবকের সঙ্গে অবশেষে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় এক ব্যক্তির। তিনি প্রস্তাব দেন, সন্দীপ দেশে ফিরতে চাইলে তিনি তাঁকে টিকিট কেটে দেবেন। পরিবর্তে সন্দীপকে একটি বৈদ্যুতিক তারের রোল নিয়ে যেতে হবে। রাজি হয়ে যান ওই যুবক। কিন্তু বুধবার কলকাতায় নেমে বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর মুখে তিনি ধরা পড়ে যান শুল্ক অফিসারদের হাতে। দেখা যায়, তাঁর কাছে থাকা তারের রোলটি আসলে সোনার। তার উপরে ছিল রুপোর মোড়ক। সেই রুপোর মোড়কের উপরে আবার প্লাস্টিকের মোড়ক লাগিয়ে অবিকল বিদ্যুতের তারের মতো তৈরি করা। সব মিলিয়ে ৮১৫.৭ গ্রাম ওই সোনার বাজারদর ৩৬ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা।
জানা গিয়েছে, দালালদের এমন প্রলোভনের সামনে আত্মসমর্পণ করেন এ দেশের গরিব মানুষগুলো। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও এই ফাঁদে পা দেন মূলত বিহার, উত্তরপ্রদেশের দরিদ্র পরিবারের যুবকেরা। ধার করে, কেউ কেউ শেষ সম্বল জমিটুকু বেচে দালালের হাতে টাকা তুলে দেন। তার পরে শ্রমিকের কাজ করতে যান পশ্চিম এশিয়া অথবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে।
আর সেখানে পৌঁছনোর পরে শুরু হয় স্বপ্নভঙ্গ। প্রথমেই ফেরার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই শ্রমিকদের। তাঁদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। মালিক বা দালালের অনুমতি ছাড়া দেশে ফেরা সম্ভব হয় না। দমবন্ধ করা পরিবেশে, প্রচণ্ড গরমে একটি ছোট ঘরে একসঙ্গে ২০-২৫ জনকে থাকতে হয়। অমানবিক পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয় এবং দিনের শেষে যে বেতন মেলে, তা ফুরিয়ে যায় খাওয়ার খরচ জোগাতেই। কোনও ভাবেই দেশে ফেরার উপায় থাকে না। এমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন সন্দীপ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিমানবন্দরের শুল্ক অফিসারদের জানিয়েছেন গত দু’মাসে তাঁর নরক-যন্ত্রণার কথা।
তবে শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, মানবিকতার খাতিরে ওই যুবককে গ্রেফতার না-ও করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy