প্রতীকী ছবি
সবেমাত্র রাতের খাবারের তোড়জোড় শুরু করেছিলেন বাড়ির লোকজন। সে সময়ে কতগুলি কুকুরের প্রাণপণ চিৎকার শুনে গৃহকর্তা বেরিয়ে এসে দেখেন, স্থানীয় জনা ছয়েক যুবক ওই কুকুরগুলিকে মারধর করছে। তিনি প্রতিবাদ করায় তারা উল্টে তাঁকেই মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। গোলমাল শুনে বেরিয়ে আসেন গৃহকর্তার ছেলে। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই ছয় যুবক আচমকা তাঁর উপরে চড়াও হয়। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়ে ভাঙা বোতল দিয়ে আঘাত করা হয় ডান কানের নীচে ও গলায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবক লুটিয়ে পড়লে অভিযুক্তেরা তাঁকে উইকেট ও ইট দিয়ে আঘাত করে। ছেলেকে বাঁচাতে এসে ফের আক্রান্ত হন বাবা। এর পরে আহত যুবককে ফেলেই চম্পট দেয় ছ’জন। রাতেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের অনুমান, ওই যুবককে মারার উদ্দেশ্য নিয়েই সম্ভবত এসেছিল অভিযুক্তেরা।
সোমবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চসায়র থানার মুকুন্দপুর নবদিগন্ত এলাকায়। মৃতের নাম বিশ্বরূপ দাস ওরফে বিশু (২৫)। রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। এই ঘটনায় তারক, ঢোলু, কালু-সহ একাধিক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্বরূপের বাবা দেবু দাস। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার রাতে প্রদীপ ধর ও জয়ন্ত চক্রবর্তী নামে দু’জনকে ধরা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে ভাঙা মদের বোতল ও ভাঙা উইকেট। ঘটনার সময়কার একটি সিসি ক্যামেরা-ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা সকলেই বিশ্বরূপের পূর্ব পরিচিত। এর আগে মুকুন্দপুর, অজয়নগর, নয়াবাদ এলাকায় তারক, ঢোলু ও আরও কয়েক জনের সঙ্গে জমি কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন ওই যুবক। তখন তাদের নিজেদের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হত। তার পরেই তারকদের থেকে সরে আসেন বিশ্বরূপ। গত মাসে পূর্ব যাদবপুরে ফের উভয় পক্ষে গোলমাল হয়। অভিযোগ, সে সময়ে বিশ্বরূপ মারধর করেন তারকদের। যার জেরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। পরে জামিন পান ওই যুবক। পুলিশের অনুমান, পুরনো ওই বিবাদের বদলা নিতেই বিশ্বরূপকে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্তেরা সকলেই এলাকায় প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। তাদের নামে একাধিক দুষ্কর্মের অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্বরূপের বাবা দেবুবাবু জানান, আগে তাঁর ছেলে তারকদের দলে ছিলেন। কিন্তু মাসখানেক আগে ওদের সঙ্গ ত্যাগ করে অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর অভিযোগ, এই বদল মেনে নিতে পারেনি তারকেরা। তাই পরিকল্পনামাফিকই বিশ্বরূপকে খুন করেছে তারা।
মঙ্গলবার মুকুন্দপুর নবদিগন্তে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্বরূপদের বাড়ি তালাবন্ধ। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে একটি আবাসনের সামনে রক্তের দাগ। প্রতিবেশীরা জানান, ওখানেই বিশ্বরূপকে কুপিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ঘটনার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই যুবকের মা। বিশ্বরূপের এক পরিচিত নকুল মণ্ডল অভিযোগ করেন, পুরনো বিবাদের বদলা নিতেই এই খুন। যে হাসপাতালে মারা গিয়েছেন ওই যুবক, সেখানে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, ভিড় করে আছেন বিশ্বরূপের গোষ্ঠীর লোকজন। স্থানীয় কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দু’পক্ষই এলাকায় জমির দালালি ও প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। উভয় পক্ষে পুরনো বিবাদ রয়েছে। তাঁর দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy