অগ্নিকাণ্ডের পরে হিন্দুস্থান বিল্ডিং ঘুরে দেখছেন মেয়র। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
সেই আগুন লাগার পরেই টনক নড়ল দমকলের। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে আট দশকের পুরনো বহুতল হিন্দুস্তান বিল্ডিংয়ের হাল-হকিকত ফের দেখিয়ে দিল শহরে অগ্নিসুরক্ষা নিয়ে প্রশাসনিক নজরদারির চেহারাটা ছিটেফোঁটাও বদলায়নি। এক দিকে অগ্নিবিধি চালু করার বিষয়ে বহুতলগুলি যেমন উদাসীন, তেমনই নড়বড়ে নজরদারির ব্যবস্থা। অগ্নিবিধি খাতায়-কলমে থাকলেও, তা কার্যকর কতটা করা হচ্ছে দেখার পরিকাঠামো কার্যত নেই প্রশাসনের।
গত সপ্তাহে এ নিয়ে তিনটি আগুনের মোকাবিলায় মাঠে নামতে হল দমকলকে। ঠিক এক সপ্তাহ আগে (গত সোমবার) ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মোড়ের কাছে রাজা রামমোহন রায় সরণির একটি কাঠের গুদামে আগুন লাগে। ভয়াবহ সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ২২টি ইঞ্জিন এবং ৫টি পোর্টেবল পাম্প কাজে লাগাতে হয় দমকলকে। এর পরে গত বৃহস্পতিবার জওহরলাল নেহরু রোডের এক বহুতলের চারতলায় একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার অফিস ভস্মীভূত হয়ে যায়। এর পরে শনিবার রাতে চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের কাছের এই ঘটনা। গত বছর অগস্টেও এই বাড়িতে আগুন ধরেছিল।
এ বার পরিস্থিতি ঢের বিপজ্জনক ছিল। তবে কেউ হতাহত হননি। কিন্তু ৩০ মিটার উঁচু বহুতলের ছাদে দাউ দাউ আগুন ফিরিয়ে এনেছিল এ শহরে নানা বিভীষিকার স্মৃতি। আগুন নেভানোর দরকারি ব্যবস্থা ছাড়াই যে অফিস-বাড়িটিতে দিনের পর দিন কাজ চলছিল, তা কার্যত মেনে নিচ্ছেন দমকলকর্তারা। দায় এড়াতে যথারীতি অগ্নিকাণ্ডের পরেই দমকলের তরফে বৌবাজার থানায় বহুতল কতৃর্পক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
বহুতল কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, সুরক্ষায় ফাঁক ছিল না। ১৯৩৩ সালে নির্মিত এই বহুতলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্তা জানান, আগুন লাগলে সতর্ক করার বিপদঘণ্টি থেকে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র, বালতি বোঝাই বালি মজুত করা ছিল। পুরনো দিনের বহুতলে ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরির অবকাশ ছিল না। তবে ছাদের উপরে দু’লক্ষ ৫০ হাজার লিটারের একটি ট্যাঙ্ক ছিল। বহুতলের ওই কর্তার দাবি, শনিবার রাতে আগুন লাগার পরেই বিপদঘণ্টি বেজে ওঠে। নিরাপত্তারক্ষীরা অ্যালার্ম শুনেই ছুটে আসেন। খবর যায় দমকল এবং পুলিশে। প্রাথমিক ভাবে নিরাপত্তারক্ষীরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে ওই কর্তার দাবি।
এই দাবি নস্যাৎ করে দমকলের শীর্ষ স্তরের এক কর্তা বলেন, “বহুতলে আগুন নেভানোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা কাজ করেনি।” দমকল-বিধি অনুযায়ী, বিপদঘণ্টি বা ধোঁয়া জরিপ করার যন্ত্রের মাধ্যমে একেবারে গোড়াতেই আগুনকে ঠেকানোর ব্যবস্থা থাকার কথা। এতে কাজ না-হলে বা আগুন বাড়লে, ট্যাঙ্ক থেকে জল নিয়ে তা ব্যবহারের ব্যবস্থা বা স্বয়ংক্রিয় স্প্রিংকলার থাকা চাই। হিন্দুস্থান বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে দমকলকর্মীরাই যা করার করেছেন।
দমকল সূত্রে খবর, আগুন লেগেছিল বহুতলটির ছ’তলার একটি অফিস ঘরে। সেখানে বহুতলের এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির অফিস। ১০০০ বর্গ ফুটের ওই অফিসটিতে জরুরি নথি, কম্পিউটার-সহ অনেক দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন সহজে ছড়ায়। বহুতলটি রাজপথের উপরে থাকায় ৩০ মিটার উঁচু যন্ত্রচালিত মই বা স্কাইলিফ্ট-ও কাজে এসেছে। তবে অফিস-বাড়িটিতে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা কাজ না করলেও তাদের হাতে দমকলের ছাড়পত্র রয়েছে বলেই দাবি বহুতলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্তার। দমকলের বক্তব্য, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
শহরে পর পর আগুনের জেরে এ দিন লালবাজারের গোয়েন্দাপ্রধান থেকে শহরের মেয়র দীর্ঘ ক্ষণ বহুতল-চত্বরে ছিলেন। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কী পরিস্থিতিতে এমন আগুন লাগল তা নিয়ে তদন্তের আগে কিছু বলব না।” এ দিনই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
তবে তদন্ত চললেও এখনই বহুতলটির বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। আজ, সোমবার থেকে বহুতলে ফের অফিস চালু হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy