Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
কসবা

অবৈধ গুদামে আগুন, আতঙ্ক এলাকায়

চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। গুদাম থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে ধোঁয়া, সঙ্গে দাউদাউ আগুন! পোড়া ও ঝাঁঝালো গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে ঘিঞ্জি এলাকার বাতাস। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে পথে নেমে এসেছেন বাসিন্দারা। দমকলকর্মীরা এক দিকের আগুন নেভাচ্ছেন। পরক্ষণেই আগুনের শিখা বেরিয়ে আসছে গুদামের অন্য দিক থেকে!

আগুনে ভস্মীভূত কসবার প্লাস্টিকের কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।

আগুনে ভস্মীভূত কসবার প্লাস্টিকের কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। গুদাম থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে ধোঁয়া, সঙ্গে দাউদাউ আগুন! পোড়া ও ঝাঁঝালো গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে ঘিঞ্জি এলাকার বাতাস। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে পথে নেমে এসেছেন বাসিন্দারা। দমকলকর্মীরা এক দিকের আগুন নেভাচ্ছেন। পরক্ষণেই আগুনের শিখা বেরিয়ে আসছে গুদামের অন্য দিক থেকে!

রবিবার সন্ধ্যার এই ঘটনাস্থল কসবার রাজডাঙা স্কুল রোড। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ এলাকার একটি পিভিসি জলের ট্যাঙ্ক, পাইপ তৈরির কারখানার ওই গুদামে আগুন লেগে যায়। ধোঁয়া এবং আগুন দেখে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পাড়ার এক মহিলা-সহ দুই বাসিন্দা। আগুন নেভাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই দমকলকর্মীও। ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় ১০টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও গভীর রাত পর্যন্ত আগুনের উত্‌সে পৌঁছতে পারেননি দমকলকর্মীরা। জানা যায়নি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও। দমকল সূত্রের দাবি, ওই গুদামটি দাহ্য পদার্থে ঠাসা ছিল। তাই কয়েক বার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও তা বারবার জ্বলে উঠেছে। তার ফলেই আগুনের উত্‌সে পৌঁছতে দেরি হয়েছে দমকলকর্মীদের।

ঘিঞ্জি বসতি এলাকায় এমন দাহ্য বস্তুর গুদাম থাকা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন অনেকে। কী ভাবে এ রকম জায়গায় এই গুদাম করার অনুমতি মিলল, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। এ দিন অগ্নিকাণ্ডের পরে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ সুশান্ত ঘোষ বলেন, “গুদামটি বেআইনি ভাবে চলছিল। পুরসভা আগেই তার লাইসেন্স বাতিল করেছিল।” স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, লাইসেন্স বাতিল হওয়া একটি গুদাম চললেও এত দিন তা প্রশাসনের নজরে আসেনি কেন। সুশান্তবাবুর আশ্বাস, “পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলব।” দমকলের এক কর্তাও জানিয়েছে, বেআইনি ওই গুদামের বিরুদ্ধে তাঁরাও মামলা দায়ের করবেন।

কী ঘটেছিল এ দিন?

দমকল ও পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যায় ওই গুদাম থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন এলাকার বাসিন্দারা। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানা ও দমকলে খবর দেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি ইঞ্জিন পাঠানো হয়। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় আরও ৫টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পাঠান দমকলকর্তারা। এলাকার একটি পুকুরের জলও আগুন নেভাতে ব্যবহার করেন দমকলকর্মীরা।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, দমকল পৌঁছনোর আগেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ধোঁয়ার সঙ্গে বেরোতে থাকে প্লাস্টিক-পলিমার পোড়ার কটূ গন্ধও। তা দেখে স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দাই প্রথমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দেন। ধোঁয়া ও আগুনের আতঙ্কে আশপাশের বহুতলের বাসিন্দারা প্রায় সকলেই ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোটা এলাকার বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তার ফলে অবশ্য দমকলকর্মীদের কাজে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, একটি বহুতলে এক মহিলা আটকে পড়েছিলেন। স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দাই তাঁকে উদ্ধার করে আনেন।

শুধু কসবাই নয়, এ দিন আগুন লেগেছিল শহরের আরও দু’টি জায়গায়। ভোরে ফুলবাগানের জগদ্দল লেনে একটি লোহার কারখানায় আগুন লাগে। দমকল সূত্রের খবর, ভোর চারটে নাগাদ ওই লোহার কারখানায় আগুন লেগে গেলে তড়িঘড়ি তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন পাঁচটা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুপুরে আগুনে ভস্মীভূত হয় একটি ঝুপড়িও। বেহালা চণ্ডীতলার দমকল সূত্রের খবর, দুপুর দুটো নাগাদ চণ্ডীতলা লেনের ওই ঝুপড়িতে আগুন লেগে যায়। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন আধ ঘণ্টায় আগুন নেভায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kasba rajdanga fire plastic warehouse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE