Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বেতন কাটার হুমকি, তবু দেরির ফাঁদে উড়ান

মাঝখানে মাত্র একটা দিন রেহাই। তার পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানের দেরিতে আবার ভোগান্তি। এবং সেই কলকাতাতেই! আগের দিন উড়ানের দেরির দায় চাপানো হয়েছিল বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির উপরে। আর বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার বিমান ছাড়তে দেরির কারণ হিসেবে জানানো হল, বিমানসেবিকাদের অভাব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৭
Share: Save:

মাঝখানে মাত্র একটা দিন রেহাই। তার পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানের দেরিতে আবার ভোগান্তি। এবং সেই কলকাতাতেই! আগের দিন উড়ানের দেরির দায় চাপানো হয়েছিল বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির উপরে। আর বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার বিমান ছাড়তে দেরির কারণ হিসেবে জানানো হল, বিমানসেবিকাদের অভাব।

কারণ যা-ই হোক, ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদেরই। বিরক্ত, বীতশ্রদ্ধ যাত্রীদের প্রশ্ন, দেরি হচ্ছে, এটাই মোদ্দা কথা। এর থেকে কি মুক্তি নেই? সফরের জন্য কি এয়ার ইন্ডিয়ার উপরে আর নির্ভর করা উচিত হবে না?

তাঁদের প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরের ইঙ্গিত আছে। এবং সেই ইঙ্গিত ধরেই বিমান পরিবহণ শিবিরের একাংশ বলছে, হয়রান হতে হতে যাত্রীরা এক সময় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাববেন। আর বিকল্প মানে অন্য সংস্থার উড়ান। তা হলে এয়ার ইন্ডিয়ার কী হবে?

বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, লোকসানের রাস্তা ছেড়ে এয়ার ইন্ডিয়া যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, সেই সময়ে এ ভাবে একের পর এক উড়ান দেরিতে ছাড়লে স্বাভাবিক ভাবেই যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন। তাতে আরও সমস্যায় পড়বে এই বিমান সংস্থা।

যাত্রীরা যে মুখ ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছেন, এ দিনই তার প্রমাণ মিলেছে। মঙ্গলবার দেরিতে ছাড়া দিল্লি উড়ানে যাত্রী ছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সে-দিন এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানের দেরির জন্য দিল্লিতে তাঁরও জরুরি কাজ পণ্ড হয়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এ দিন তিনি বলেন, “২৫ ফেব্রুয়ারি আবার আমার দিল্লি যাওয়ার কথা। তবে এয়ার ইন্ডিয়া আর নয়। এ বার বেসরকারি বিমান সংস্থার টিকিট কেটেছি।”

অথচ এয়ার ইন্ডিয়া যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেই জন্য কঠোর হাতে নিয়মশৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করছে বিমান মন্ত্রক। সম্প্রতি নির্দেশ এসেছে, দেরি করে বিমান ছাড়ার ঘটনা যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে। এ বার থেকে দেরি হলে তার কারণ খতিয়ে দেখা হবে। যদি দেখা যায়, দেরির জন্য কোনও কর্মী বা অফিসার দায়ী, তা হলে তাঁর বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে। কিন্তু সংস্থার কর্মীদের একাংশের কথায়, “এমন কড়া ব্যবস্থার পরেও হেলদোল নেই অফিসারদের একাংশের।”

কলকাতা থেকে মঙ্গলবার দিল্লির উড়ান ছেড়েছিল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে। ফলে সেই বিমানের যে-সব যাত্রীর সে-দিন বিলেত যাওয়ার কথা ছিল, তাঁরা লন্ডনের উড়ান ধরতে পারেননি। সেই সব ভুক্তভোগী যাত্রীর মধ্যে ছিলেন চিকিৎসকও। নাকাল যাত্রীদের অনেকে মামলা করার কথা জানিয়েছিলেন। এ দিনও কলকাতা থেকে দিল্লির উড়ান ছাড়তে পাঁচ ঘণ্টা দেরি করে এয়ার ইন্ডিয়া। শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক অরূপ সরকার দিল্লি যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিট কেটেছিলেন। এ দিন সকাল ১০টার নির্ধারিত সময়ের বদলে বিমানটি বেলা ১টায় ছাড়বে বলে বুধবার তাঁর মোবাইলে বার্তা পৌঁছে যায়। সেই হিসেব করে তিনি ১২টার আগেই কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে যান। কিন্তু পরিবর্তিত সময় ১টাতেও উড়ান ছাড়েনি। সেই বিমান ছাড়ে বিকেল ৫টা নাগাদ। দিল্লি থেকে দেহরাদূনের উড়ান ধরার কথা ছিল অরূপবাবুর। কিন্তু দিল্লি পৌঁছতেই তাঁর সন্ধ্যা হয়ে যায়। দেহরাদূনের উড়ান ধরতে পারেননি তিনি। বলেন, ‘‘আমার দেহরাদূন পৌঁছনো এতটাই জরুরি ছিল যে, দিল্লি থেকে ভাড়ার গাড়িতে রওনা দিতে বাধ্য হয়েছি।”

স্বপ্নের উড়ান ড্রিমলাইনারেরও ইদানীং উড়তে দেরি হচ্ছে প্রায়ই। সম্প্রতি দিল্লিতে তাদের বিলম্বের কারণ হিসেবে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিমানসেবিকার অভাবের কথা বলা হয়েছিল। এ দিনের দেরির জন্য বিমানসেবিকার অভাবের কথা বলছে এয়ার ইন্ডিয়াও। কিন্তু কেন তারা আগে থেকে পর্যাপ্ত বিমানসেবিকার ব্যবস্থা রাখেনি, তার দায়ই বা কার, সেই সব প্রশ্নের জবাব মিলছে না।

এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, এর আগেকার কয়েকটি দেরির ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু কোনও তদন্তের ফল এখনও জানা যায়নি। এ দিনের বিলম্ব নিয়েও হয়তো তদন্ত হবে নাম-কা-ওয়াস্তে। কিন্তু তার ফলাফল শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। তাঁদের প্রশ্ন, এই তো অবস্থা! তা হলে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিমান মন্ত্রকের উদ্যোগ কি নিছকই কথার কথা?

জবাব মিলছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

salary air india
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE