রাজ্যের ৩৯৭টি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৩৯০টিতেই জিতেছেন বলে গর্বের সঙ্গে দাবি করেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। হোক কলরবের মতো আন্দোলনের পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল টিএমসিপি। প্রেসিডেন্সিতেও তারা প্রার্থী দেওয়ার অবস্থায় নেই।
বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির নেতাদের একাংশের মতে, বেশির ভাগ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি কার্যত নির্বাচন হতেই দেয়নি। ফলে বেশির ভাগ জায়গাতেই তারা জিতেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। কিন্তু যেখানেই কলেজ প্রশাসন শক্ত হয়ে ভোটাভুটির ব্যবস্থা করেছেন, সে সব জায়গাতেই টিএমসিপি-র হাল ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি বাদ দিলেও বৃহস্পতিবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের চাঁইপাট আর সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়েও কোনও আসন জিততে পারেনি টিএমসিপি। চাঁইপাট কলেজে ক্ষমতা ধরে রেখেছে এসএফআই। ১৫টি আসনের সব ক’টিতেই জিতেছে তারা। সবং কলেজেরও ৩২টি আসনে জয়ী হয়েছে ছাত্র পরিষদ। সেখানে তারাই ক্ষমতায় ছিল।
শিলিগুড়ির বাগডোগরা কলেজেও আসন কমেছে টিএমসিপি-র। ছাত্র সংসদ দখল করলেও ৫০টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে ২২টি। গত বারের চেয়ে ৬টি আসন কম। ওই কলেজে এ বার ছাত্র পরিষদের প্রাপ্তি ১৬টি, এসএফআইয়ের ৮টি এবং এবিভিপি-র ৪টি। আবার নকশালবাড়ি কলেজে ২১টি আসনের মধ্যে ২০ টিতে জিতে সংসদ দখল করেছে এসএফআই। মালদহের চাঁচল কলেজেও দাঁত ফোটাতে পারেনি টিএমসিপি। এ বারও সেখানকার ছাত্র সংসদ নিজেদের দখলে রেখেছে ছাত্র পরিষদ।
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র যদিও তাঁদের ফল আলাদা করে খারাপ হয়েছে বলে মনে করছেন না। তাঁর বক্তব্য, যাদবপুর-প্রেসিডেন্সিতে টিএমসিপি-র পায়ের জমি কোনও দিনই শক্ত ছিল না। আজও নেই। তা ছাড়া যাদবপুরের পড়ুয়াদের একাংশ জানাচ্ছেন, হোক কলরবের পরে এ বার নির্বাচনে একেবারেই গা লাগায়নি টিএমসিপি। অশোকবাবুরও দাবি, অশান্ত ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখার জন্যই তাঁরা এ বার যাদবপুরে জেতার চেষ্টাই করেননি। গত বছর কলা বিভাগে বেশ কয়েকটি শ্রেণি-প্রতিনিধির আসন পেয়েছিল তারা। এ বার একটিও জোটেনি। চেয়ারপার্সন, সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক (দিবা) পদে টিএমসিপি গড়ে ৫০টির বেশি ভোট পায়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। যাদবপুরের বেশির ভাগ পড়ুয়া মনে করেন, পুলিশি নিগ্রহের পরেও যে ভাবে টিএমসিপি উপাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তার জেরেই তারা ধুয়েমুছে গিয়েছে। এক ছাত্র বলেন, “অভিজিৎ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবিতে যখন প্রায় সব ছাত্রছাত্রীই এককাট্টা ছিল, তখন দেখা মেলেনি টিএমসিপি-র। উল্টে পাল্টা মিছিল বের করেছিল তারা।”
কেবল টিএমসিপি নয়। গত বার কলা শাখায় বিজয়ী এসএফআই-কে এ বার হারিয়ে দিয়েছে তথাকথিত রাজনৈতিক দলের সংস্রব এড়িয়ে চলা সংগঠন ফ্যাস। কলা শাখার নতুন সাধারণ সম্পাদক শ্রমণ গুহ বলেন, “কোনও রাজনৈতিক দলের নয়, এই জয় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার স্বীকৃতি।” ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজ্ঞান শাখায় এ বারও জিতেছে ডিএসএফ এবং ডব্লিউটিআই। ওই দুই শাখায় প্রার্থীই দেয়নি টিএমসিপি।
এ দিন যাদবপুরে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের ভিতরে চার নম্বর গেটের সামনের রাস্তায় টিএমসিপি-কে দূর হঠানোর কথা বড় বড় হরফে লেখা। এমনকী, ছাত্র সংসদ হাতছাড়া হওয়ার পরেও টিএমসিপি-কে দূরে রাখতে পারাকেই এসএফআই এখন নিজেদের সাফল্য বলে মনে করছে। সমাবর্তন মঞ্চে আচার্য-রাজ্যপালের এগিয়ে দেওয়া পদক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন গত বারের কলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএফআইয়ের গীতশ্রী সরকার। গীতশ্রী এ বার স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষে একটি শ্রেণি প্রতিনিধির আসন জিতেছেন। তিনিও বলেন, “গোটা রাজ্যে যখন টিএমসিপি গোলমাল করছে, তখন যাদবপুরে অন্তত তাদের জন্য ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া গিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy