Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তায় একা পেয়েই পথ আটকাল ট্যাক্সি

একটি ঠিকাদার সংস্থায় সুপারভাইজারের কাজ করি। তাই সোমবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ বালি নিমতলায় গিয়েছিলাম, এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওনা চার হাজার টাকা নিতে। কাজ সেরে হুগলির বৈদ্যবাটীতে বাড়ি ফেরার জন্য বালিঘাট অটোস্ট্যান্ডে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম অটোয় বালি হল্টে গিয়ে ট্রেন ধরব।

রেবা মিস্ত্রী(ট্যাক্সিচালকের হাতে নিগৃহীত মহিলা)
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

একটি ঠিকাদার সংস্থায় সুপারভাইজারের কাজ করি। তাই সোমবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ বালি নিমতলায় গিয়েছিলাম, এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওনা চার হাজার টাকা নিতে। কাজ সেরে হুগলির বৈদ্যবাটীতে বাড়ি ফেরার জন্য বালিঘাট অটোস্ট্যান্ডে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম অটোয় বালি হল্টে গিয়ে ট্রেন ধরব।

অটোস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখি খুচরো নেই। বালিঘাট থেকে বালি হল্ট অটো বা বাসে ভাড়া ৫ টাকা। খুচরো না থাকলে কেউ নিতে চান না। ঝামেলা এড়াতে অগত্যা বালিঘাট থেকে হেঁটে বালি হল্ট চলে যাব মনস্থির করলাম।

টাকার ব্যাগটা চেপে ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। বালিঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েক পা এগিয়ে বালিঘাট স্টেশনের রেল সেতুর নীচে আসতেই এল বিপদ! প্রথমটায় কিছুই বুঝিনি। আলো-আঁধারি রাস্তায় আচমকা একটা গাড়ি আমার পিছনে এসে জোরে ব্রেক কষে দাঁড়াল। ঘুরে দেখি সাদা রঙের একটা ‘নো-রিফিউজাল’ ট্যাক্সি। ভয়ে রাস্তার ডান দিকে সরে গেলাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা বাস জোরে আমার সামনে দিয়ে চলে যেতেই আবার রাস্তার বাঁ দিক ধরে হাঁটতে লাগলাম। যেই দু’পা এগিয়েছি, ট্যাক্সিটা প্রচণ্ড গতিতে আমাকে পেরিয়ে সামনে প্রায় রাস্তা আটকে দাঁড়াল।

ভয়ে রাস্তার একদম ধারে সরে গেলাম। মনে হচ্ছিল একটা বিপদ হতে চলেছে। কিন্তু আলো-আঁধারি রাস্তায় কাকে পাব সাহায্যের জন্য? কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বুক দুরুদুরু করতে লাগল। ঠিক তখনই ট্যাক্সির কাচ নামিয়ে চালক আমাকে ডাকতে লাগল। আমি ভয়ে কাঁপছি। সাড়া না পেয়ে এ বার ট্যাক্সিটা একটু পিছনে সরে একদম আমার পাশে। ড্রাইভারের পাশে থাকা এক যুবক জানলার কাচ নামাল। হাত বাড়িয়ে আমার হাত ধরতে গেলে আমি আরও পিছন দিকে সরে গেলাম।

ফাঁকা রাস্তায় চরম বিপদের আশঙ্কা তাড়া করছিল। টাকার ব্যাগ আঁকড়ে রেখে জুতো খুলে হাতে নিলাম। যা হবে দেখা যাবে! তখনও ওই যুবক বারবার আমাকে ডাকছে। ঠিক সেই সময়ে পিছন দিক থেকে একটি মোটরবাইক কাছাকাছি পৌঁছে গেল। বাইকচালক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দিদি কী হয়েছে? কী বলছে ওঁরা?’ ট্যাক্সির চালক ও সঙ্গী যুবক তখনও আমাকে অশ্লীল ভাষায় ডাকাডাাকি করছে। পুরো ব্যাপারটা আঁচ করে বাইকচালক তখন ট্যাক্সির চালককে সামনে আসতে বললেন।

বেগতিক বুঝে ট্যাক্সিচালক এ বার গতি বাড়িয়ে বালি হল্টের দিকে পালাতে শুরু করে। মোটরবাইকটি ধাওয়া করে ধরে ফেলে ওদের। শুরু হয়ে যায় হইচই। ততক্ষণে অন্য পথচারীরা জড়ো হয়ে গিয়েছেন। পৌঁছে যায় পুলিশও। তারাই ট্যাক্সি চালককে ধরে বালি থানায় নিয়ে যায়। পরে আমিও থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করি। শুনলাম পরে ওই ট্যাক্সিচালক অজয়কুমার ঝা এবং যাত্রী রোহিত লিঙ্কাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওরা ডানকুনি যাচ্ছিল।

ট্যাক্সিচালকদের আচরণ নিয়ে অনেক খবর শুনি। নিজেও যে তার শিকার হব, কোনও দিন ভাবিনি। ভগবানই আমাকে আজ বাঁচালেন। তিনিই হয়তো ওই মোটরবাইক চালককে পাঠিয়ে ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE