Advertisement
E-Paper

বই-পার্বণ

আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলার মতো বই-পার্বণ বাঙালির দ্বিতীয়টি নেই। বাংলার সঙ্গে দেখা মেলে নতুন ইংরেজি বইয়েরও। নানা স্বাদের নতুন বই নিয়েই এ বারের পুস্তক পরিচয়।আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলার মতো বই-পার্বণ বাঙালির দ্বিতীয়টি নেই। বাংলার সঙ্গে দেখা মেলে নতুন ইংরেজি বইয়েরও। নানা স্বাদের নতুন বই নিয়েই এ বারের পুস্তক পরিচয়।

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৪

জ্ঞানপিপাসু

প্রবন্ধ সংকলন ১, সুকুমার সেন। আনন্দ, ৬০০.০০

‘আসলে কিন্তু বাঙ্গালা ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যে পুরা দমে অরাজকতার সূত্রপাত হইয়াছে।’ মাত্র তিরাশি বছর আগে লিখেছিলেন সুকুমার সেন, পরিবর্তন কোন দিকে যাচ্ছে দিক্নির্দেশ করেছিলেন তারও। তাঁর সেই অমোঘ উচ্চারণের সত্যতা আজকের পাঠকের কাছে সুপরিস্ফুট। ১৯২৭ সালে তাঁর প্রথম গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, ১৯৯২-এ প্রয়াণ পর্যন্ত বাংলায় অন্তত আড়াইশো প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। কিছু প্রবন্ধ বিভিন্ন বইয়ে সংকলিত হলেও অধিকাংশই ছিল অগ্রন্থিত। এ বার খণ্ডে খণ্ডে তা প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছে আনন্দ। প্রথম খণ্ডে সংকলিত হয়েছে শব্দবিদ্যা ও ভাষাতত্ত্ব, সংস্কৃত সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য (প্রাগাধুনিক যুগ), সংস্কৃতি ও লোকসাহিত্য বিষয়ে ৭৫টি প্রবন্ধ। পাতা ওল্টালে বোঝা যায়, কত বিচিত্র বিষয়ে আগ্রহ ছিল জ্ঞানপিপাসু মানুষটির। ১৯২৭-এ প্রকাশিত প্রথম প্রবন্ধটির বিষয় ছিল ‘বাঙলায় নারীর ভাষা’, সেখানে তাঁর মন্তব্য, ‘নারীর ভাষা পুরুষের ভাষার চেয়ে অনেক বেশী রক্ষণশীল... এইজন্যে নারীর ভাষাতে আমরা... অনেক পুরানো শব্দ পাই।’

পুনরাবিষ্কার

সুনীতিকুমার/ সপাদ-জন্মশতবর্ষ সংকলন, সম্পা: তাপস ভৌমিক। কোরক, ১৫০.০০

জন্মের ১২৫তম বর্ষে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় যেন কিছু-বা বিস্মৃত। তাঁকে, এবং বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে তাঁর মূল্যবান কীর্তিকে পুনরাবিষ্কারে কোরক-এর এই প্রয়াস। সুনীতিকুমারকে নিয়ে কোরক-এরই পুরনো একটি বিশেষ সংখ্যার পরিমার্জিত সংশোধিত ও পরিবর্ধিত রূপ এ-বই। ভাষাবিদ এই মানুষটির মধ্যে শিল্প-রুচি-সৌন্দর্যের যে বোধ, তা তাঁর পাণ্ডিত্যের চেয়ে কম ছিল না, লক্ষ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সুনীতিকুমারই ‘কালচার’-এর প্রতিশব্দ করেছিলেন ‘সংস্কৃতি’। তাঁর কর্মকাণ্ডের প্রাসঙ্গিকতা সংবলিত এ-বই তিন পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে তাঁর সৃজনাত্মক রচনার মূল্যায়ন, চর্চা ও গ্রন্থপঞ্জি। দ্বিতীয় পর্বে তাঁর ভিতরের মানবিক সত্তাটিকে নিয়ে নিকটজন ও অনুগামীদের অন্তরঙ্গ আলোচনা। তৃতীয় পর্বে তাঁর ও তাঁকে লেখা চিঠিপত্র, যার মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও মনস্বিতার নানা দিক উন্মোচিত। সঙ্গে তাঁর ছবি, প্রতিকৃতি, বইয়ের প্রচ্ছদ, নথিপত্র ইত্যাদি।

ফেলে আসা স্বদেশ

যখন যা মনে পড়ে, প্রফুল্ল রায়। দে’জ, ২৫০.০০

ভারতবর্ষের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরে বেড়ান তিনি। দেশ দেখতে-দেখতে দেশের পিছিয়ে-থাকা শোষিত মানুষকে তুলে আনেন নিজের লেখনীতে। প্রফুল্ল রায়। তাঁর সামগ্রিক কথাসাহিত্যে এখনও বঁুদ হয়ে আছে বাঙালি, তবু তাঁর কেয়াপাতার নৌকা আজও আলাদা ভাবে অখণ্ড বাংলার স্মৃতিতে অবগাহন করায় বাঙালিকে। লেখকের শৈশব-কৈশোর কেটেছে তিরিশের দশকের ঢাকা জেলার তেমনই এক গ্রামে, যা ছিল আবহমান কালের বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। দেশভাগের এতকাল পর তিনি যেন টাইম-মেশিনে চেপে ফিরে গিয়েছেন সেই হারানো দিনগুলিতে। সেখানকার নদী খালবিল, পাখপাখালি, শস্যক্ষেত্র, পালাপার্বণ উত্‌সব, লোকাচার লোকগান, হিন্দু-মুসলমানের ওতপ্রোত জড়িয়ে থাকা সব যেন উঠে এসেছে লেখকের এই আশ্চর্য স্মৃতি-আখ্যানে। মৃদু কৌতুকের তবকে মোড়া লেখকের লাবণ্যময় কলম পাঠককে টেনে নিয়ে যায় যে মায়াবী ভূখণ্ডে, সে তো আসলে বাঙালিরই ফেলে-আসা এক স্বদেশ, যার জন্যে পড়ে আছে শুধু দীর্ঘশ্বাস।

বিতর্কিত রেনেসাঁস

রেনেসন্স বাংলার রেনেসন্স, গোলাম মুরশিদ। অবসর, ঢাকা (পরি: নয়া উদ্যোগ), ১০০০ বাংলাদেশি টাকা

‘হ্যঁা’ কিংবা ‘না’ দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর হয় না বলেই বেঁচে থাকার কিঞ্চিত্‌ মজা আছে। উনিশ শতকের বঙ্গদেশে রেনেসাঁস হয়েছিল কি না, ‘গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে’, জানিয়েছেন গোলাম মুরশিদ। তাঁর নতুন বইটি শেষ করার পরেও এই বিতর্কের নিরসন হয় না, হওয়ার কথাও নয়। কিন্তু বইটির প্রথম দুই-তৃতীয়াংশে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের ইউরোপীয়, প্রধানত ইতালীয় রেনেসাঁস এবং বাকিটায় উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণের যে আলোচনা তিনি দুই মলাটের মধ্যে শ’দেড়েক পৃষ্ঠায় গেঁথে দিয়েছেন, ইতিহাস-আগ্রহীর পক্ষে তা খুবই কাজের। ইউরোপীয় স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের বেশ কিছু ছবি এবং তাদের প্রেক্ষাপট ও তাত্‌পর্যের প্রাঞ্জল বিশ্লেষণ এই বইয়ের প্রধান সম্পদ। যে পাঠক আরও বিশদ জানতে উত্‌সাহিত হবেন, তাঁর জন্য আছে পরিশিষ্টের গ্রন্থ-তালিকাটি।

অনুভবের গদ্য

নির্বাচিত গদ্যলেখা, শঙ্খ ঘোষ। তালপাতা, ৪৮০.০০

‘ট্রামে ঘুরে বেড়াবার স্মৃতি ভেসে আসে হঠাত্‌, ময়দান থেকে উঁচু হয়ে জেগে উঠতে থাকে মনুমেন্ট, মেমোরিয়াল, মিউজিয়াম। বাবা-মা-র হাত ধরে একদিন ছিল আমাদের ঘুরে-বেড়ানো এইখানে, শীতের সূর্যে, রবিবার।’ গদ্যটির শিরোনাম: ‘আজ রবিবার’। অনেক সময় এমনই কিছু গদ্য লিখেছেন শঙ্খ ঘোষ, কবির মতে ‘যাকে ঠিক দস্তুরবাঁধা প্রবন্ধ বলা যায় না।’ ছিন্ন ছিন্ন মুহূর্তের ভাবনা আর অনুভবের গদ্যলেখা। তাঁর নানা বইয়ে ছড়িয়ে রয়েছে সে সব, যেমন জার্নাল, বটপাকুড়ের ফেনা, এখন সব অলীক, কবিতার মুহূর্ত, সময়ের জলছবি, ছন্দোময় জীবন ইত্যাদি। সেখান থেকেই বেশ কয়েকটি বেছে নিয়ে এ সংকলন। ব্যক্তিস্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ নিয়ে অনুভব, চেনা মানুষের অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক মন্তব্য এমন নানাবিধ বিষয়-বিন্যাসে ঠাঁই পেয়েছে লেখাগুলি। আপাত ভারহীন অথচ চকিত চিন্তার গভীর ইশারা সংবলিত কবির এমন গদ্যের সমগ্র তৈরি হল এই প্রথম।

নারীবাদের প্রেক্ষিতে

আশাপূর্ণা দেবী অ্যান্ড ফেমিনিস্ট কনসাসনেস ইন বেঙ্গল/ আ বায়ো-ক্রিটিক্যাল রিডিং, দীপান্বিতা দত্ত।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ৮৯৫.০০

আশাপূর্ণা দেবী তাঁর জীবনে জনপ্রিয়তা এবং পুরস্কার অনেক পেয়েছেন, কিন্তু প্রাপ্য মর্যাদা পাননি এই অভিযোগ বহুশ্রুত। মেয়ে বলে তাঁকে তুচ্ছ করা হয়েছে, এমন নালিশে তাঁর অবিচল আত্মমর্যাদাবোধ কিছুতেই সায় দিত না, কিন্তু অভিযোগ অহেতুক নয়, তিনি পুরুষ হলে অনেক বেশি গুরুত্ব পেতেন। দীপান্বিতা দত্তের বইটি এক দীর্ঘ অভাব পূরণ করল। নারীবাদের এক প্রসারিত পরিসরে দাঁড়িয়ে দীপান্বিতা বুঝতে চেয়েছেন, কী ভাবে তিনি মেয়েদের স্বাধিকারকে দেখতেন, নারীমুক্তির কোন সাধনা তাঁর কাঙ্ক্ষিত ছিল, কেমনই বা ছিল তাঁর সেই ধারণার ঐতিহাসিক এবং সামাজিক প্রেক্ষিত। মূল আলোচনার সঙ্গে আছে বিভিন্ন সময়ে লেখা আশাপূর্ণা দেবীর ছ’টি প্রবন্ধ, তাঁর লেখা এবং তাঁকে লেখা কিছু চিঠি, পাঁচটি কথোপকথন, ডায়েরিতে সযত্নে লিখে রাখা বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে তাঁর সাম্মানিক প্রাপ্তির কিছু হিসেবনিকেশ, ইংরেজিতে তাঁর লেখালিখির অনুবাদের তালিকা এবং জীবনপঞ্জি।

ফিরে পড়া

রবীন্দ্র-কক্ষপথে ক্ষিতিমোহন সেন, প্রণতি মুখোপাধ্যায়। দীপ, ২৫০.০০

রবীন্দ্রনাথের শিল্পসাহিত্য, সমাজ-রাজনীতি, শিক্ষাদর্শ, ধর্মবোধ বিষয়ে আলোচনায় যে সব প্রবন্ধের কথা অবধারিত উঠে পড়ে, তেমন একগুচ্ছ রচনারই সংকলন এটি। নির্বাচন, ভূমিকা ও টীকা নিত্যপ্রিয় ঘোষের। যেমন ‘সভ্যতার সংকট’ প্রসঙ্গে নিত্যপ্রিয় জানাচ্ছেন ‘কবির শেষ ভাষণ।... প্রবন্ধটি বেশ কয়েকদিন ধরে কবি মুখে মুখে বলে গিয়েছিলেন। পরে লেখা হলে কবি সেটা দেখে দেন। ওই সময়েই তিনি ‘ঐ মহামানব আসে’ গানটি লিখেছিলেন।’ ১৯৮০-২০০১ অবধি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র-রচনাবলীর যে সংস্করণ প্রকাশিত হয়, সেই সংস্করণের পাঠই নেওয়া হয়েছে এ-সংকলনে। তবে বাদ-যাওয়া প্রবন্ধাদি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ‘একমাত্র উত্তর, গ্রন্থটির কলেবর অতিস্ফীত না-করার চেষ্টায় নির্বাচন-বর্জন করতে হয়েছে।’ নিত্যপ্রিয় লিখেছেন তাঁর ভূমিকা-য়। কবির প্রবন্ধ অনর্থক পুনরাবৃত্তিতে দীর্ঘ, এ সমালোচনা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য ‘দৈর্ঘ্যের একটা কারণ হতে পারে, অনেক প্রবন্ধের প্রারম্ভিক রূপ ছিল বক্তৃতার।’

আশ্রমিক জীবনী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৪০টি প্রবন্ধ, নির্বাচন-ভূমিকা-টীকা: নিত্যপ্রিয় ঘোষ। গাঙচিল, ৭৫০.০০

ক্ষিতিমোহন সেন। শান্তিনিকেতন-আদর্শ রূপায়ণে সহায় হতে অনুরোধ জানিয়ে তাঁকে প্রথম চিঠি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ১ ফাল্গুন ১৩১৪ (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯০৮)। আর উত্তরায়ণ-গৃহে কবি তাঁর ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পপাঠের আসরেও সস্ত্রীক ক্ষিতিমোহনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্ধক্যতাড়িত কাঁপা হাতে চিঠি লিখেছিলেন, ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪০, শেষ চিঠি সেটি। ‘গুরুদেব’-এর সঙ্গে ‘ক্ষিতিবাবু’-র এই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের পরিচয় ছড়ানো আছে অজস্র চিঠিপত্রে। কোনও দিন তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে কোনও ব্যবধান রচিত হয়নি। রবীন্দ্র-কক্ষপথে ক্ষিতিমোহন কী ভাবে চিরবন্ধনে জড়িয়ে পড়েছিলেন শান্তিনিকেতনে, কী ভাবে তাঁর ব্যক্তিত্ব সেখানকার শিক্ষার্থীদের জীবনে সত্যের ভিত গাঁথতে এবং তাদের মনকে সংকীর্ণতামুক্ত উদার হতে শিখিয়েছিল, তা নিয়েই প্রণতি মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ এই আখ্যান। ক্ষিতিমোহন সেনের আশ্রমিক জীবনীই বলা যেতে পারে প্রায়।

প্রথম শিল্পীগোষ্ঠী

বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পীগোষ্ঠী, প্রফুল্লকুমার পান। সাহিত্যলোক, ৫০০.০০

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, স্কুলবুক সোসাইটি আর শ্রীরামপুর মিশনারিদের হাতে বাংলা গদ্য চর্চার সূচনা পর্বের কথা বহু আলোচিত। কিন্তু সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কলেজকে কেন্দ্র করে বেশ ক’জন গদ্যশিল্পী বাংলা গদ্যের যে অনুশীলন শুরু করেন, তার ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। লেখকের মতে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাংলা গদ্য ভাষা শিক্ষিত গদ্যে রূপান্তরিত হল। আর তাঁরাই হলেন বাংলা গদ্যের ‘প্রকৃত প্রথম শিল্পীগোষ্ঠী’। মদনমোহন তর্কালংকার, ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা, অক্ষয়কুমার দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায় কি জয়গোপাল তর্কালংকার, কাশীনাথ তর্কপঞ্চাননের মতো আটত্রিশ জন প্রধান-অপ্রধান গদ্যশিল্পীর শ’দুয়েক বই আর তাঁদের সম্পাদিত-প্রকাশিত কুড়িটি সাময়িকপত্র নিয়ে সবিস্তার আলোচনা এই প্রথম দুই মলাটে এল। তাঁদের লেখা বহু বিচিত্র পাঠ্যবই, অনুবাদ-সাহিত্য, মৌলিক রচনা, সাময়িকপত্র নিয়ে আলোচনার পর আছে বাংলা ভাষায় পরিভাষা সৃষ্টিতে তাঁদের কৃতিত্বের কথা। আছে গদ্যশিল্পীদের জীবন ও কর্মকৃতির প্রসঙ্গও।

মনের কথা

বঙ্কিম পরিবারের মহিলাদের কথা ও চিঠি, বিজলি সরকার। কারিগর, ৩৬০.০০

সিনেমা এবং তার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে মৃণাল সেনের গদ্যরচনা-সাক্ষাত্‌কার-চিত্রনাট্য-আত্মকথন-প্রবন্ধ ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ, বাংলা বা ইংরেজিতে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। সে সবের বাইরে শিবাদিত্য দাশগুপ্ত গ্রন্থিত তাঁর এই বইটি একানব্বই-পেরনো মৃণালবাবুর লেখকজীবনে নতুন মাত্রা যোগ করল। ‘তাঁর চলচ্চিত্রভাবনার গভীরতম স্তরে যে রাজনৈতিক প্রত্যয়, জনজীবনাবর্তের যে প্রবল আত্মিক টান, বন্ধু-সহযোগীদের সঙ্গে সখ্য-সমবায়িকতায় যে নিপাট ভরসা, তা ওইসব আলোচনা-সমালোচনায় প্রায়ই চাপা পড়ে গেছে বা আড়াল হয়ে গেছে। মৃণাল সেনের সেই অন্তর্লীন মনোভূমিই এই বইটিতে খানিকটা উদ্ঘাটিত হল।’ শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন বইটির মুখবন্ধ-এ। জসীমউদ্দিন, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, বিজন ভট্টাচার্য, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, গঙ্গাপদ বসু, অরুণ মিত্র, নিমাই ঘোষ, রাজেন তরফদার, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, তাপস সেন, উত্‌পল দত্ত, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, সাধনা রায়চৌধুরী, শেখর চট্টোপাধ্যায়, অনুপকুমার, দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহিত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ফুটে উঠেছেন মৃণাল সেনের কলমে।

পারিবারিক

অনেক মুখ অনেক মুহূর্ত, মৃণাল সেন। থীমা, ১৫০.০০

বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত পরিবারের ২৭ জন মহিলার পরিচয় ও তাঁদের জীবন-কথা এবং তিন জন মহিলার শুদ্ধ-পাঠ সংবলিত চিঠিপত্র প্রকাশ পাচ্ছে গ্রন্থাকারে। এই সূত্রেই জানা যাবে বঙ্কিমের ব্যক্তিগত জীবনের নানা অজানা কথা। এক জন গৃহী মানুষ হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন, পরিবার-পরিজনে তাঁর অবস্থানটি কেমন ছিল, বাড়ির মহিলাদের ব্যাপারে তাঁর ভাবনাচিন্তা, তাঁর ভূমিকা কেমন ছিল এ সব কিছুই। বঙ্কিম নিজে কোনও আত্মজীবনী লেখেননি, সেই অভাব অনেকখানি পূর্ণ করবে বইটি। তাছাড়া বঙ্কিমচন্দ্রের যে-সমস্ত জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাঁর সাহিত্যকৃতি নিয়ে যত আলোচনা, তুলনায় ব্যক্তি বঙ্কিমচন্দ্রের কথা প্রায় অধরা। শুধু বঙ্কিম নয়, জানা যাবে এই পরিবারের আর এক প্রতিভাবান বঙ্কিম-ভ্রাতা সঞ্জীবচন্দ্রের ব্যক্তিজীবনেরও নানা অজানা কথা। বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে উজ্জ্বল এই পরিবারের মহিলাদের কথা ও চিঠিপত্রের ভেতর দিয়ে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে ঊনবিংশ শতাব্দীর সামাজিক ইতিহাসের আবছায়া।

কবির স্মৃতি

কলকাতা কনকলতা, শান্তি চৌধুরী। সম্পা: সমরেন্দ্র দাস। সহজপাঠ, ১৭৫.০০

‘একটা শক্তি ভেঙে ভেঙে অনেক হয়ে যায়।... সত্য আর মিথ্যার মাঝখানে শক্তি কোনও সুতোর দাগ রাখে না। এক শক্তি প্রচণ্ড স্বার্থপর, হিসেবি, বিলক্ষণ সাবধানী; অন্য শক্তি অন্য রকম।’ শক্তি চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে এই মন্তব্য শান্তি লাহিড়ীর (১৯৩৬-২০০৭)। ষাটের দশকের বিশিষ্ট কবি শান্তি লাহিড়ী কবিতা আন্দোলনেও ওতপ্রোত ছিলেন। তাঁর এই আশ্চর্য স্মৃতিকথায় ছড়িয়ে আছে সমসময়ের কবি-সাহিত্যিকদের ব্যক্তিগত গল্পগাছার সঙ্গে অনেকের মানবিক মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। ‘বাংলা কবিতা’ পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন শান্তি লাহিড়ী, মণীশ ঘটক ও বিষ্ণু দে-র উপর দুটি স্মরণীয় সংখ্যা প্রকাশ করেন। তাঁর স্মৃতিকথনের শুরু: বিমল রায়চৌধুরীর ‘চিতা জ্বলছে দাউদাউ করে, বন্ধুরা খাঁ খাঁ রোদ্দুরে কাছেপিঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে-- শোকে বিপুল স্তব্ধতায় কেওড়াতলার কাঠের চুল্লীর আগুনও মনে হচ্ছে নিষ্প্রভ।’ এই বিমল রায়চৌধুরীর সঙ্গেই ১৯৬৬ সালে টানা ১৬ দিন ‘দৈনিক কবিতা’ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

pustak calcutta book fair new books
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy