Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওঝার কীর্তি, প্রাণ গেল কলেজ ছাত্রের

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন-লাগোয়া পাটঘড়া গ্রামে থাকেন ভুজঙ্গ মণ্ডল। ছেলে হিরণ্ময় এবং মেয়ে দেবারতি।

হিরণ্ময় মণ্ডল

হিরণ্ময় মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

কাছেই হাসপাতাল। কিন্তু সেখানে না নিয়ে গিয়ে সারা রাত ওঝার কাছে ফেলে রাখা হল সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ তরুণকে। পরে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে চিকিৎসকের আর কিছু করার নেই। মঙ্গলবার বসিরহাট জেলা হাসপাতালে মারা গিয়েছেন হিরণ্ময় মণ্ডল (১৮) নামে ওই তরুণ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন-লাগোয়া পাটঘড়া গ্রামে থাকেন ভুজঙ্গ মণ্ডল। ছেলে হিরণ্ময় এবং মেয়ে দেবারতি। হিরণ্ময় এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সোমবার রাতে খাওয়ার পরে মাটির বাড়ির ঘরে খাটে শুয়েছিলেন ওই তরুণ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ডান হাতে কিছু কামড়ায়। আলো জ্বালিয়ে উঠে হিরন্ময় দেখেন, বিছানার উপরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপ। তাঁর চিৎকারে বাবা-মা ছুটে এসে সাপটিকে মারেন।

রাতেই হিরণ্ময়কে খগেন মণ্ডল নামে এক ওঝার কাছে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। সঙ্গে নেওয়া হয় প্রায় ৭ ফুট লম্বা মৃত সাপটিকে। শুরু হয় খগেনের কেরামতি। গাছ-গাছড়া খাইয়ে, শিকড় মাথায় দিয়ে, ঝাড়ফুঁক করে ওঝা। এ ভাবে সারা রাত ওঝার কাছে রাখা হয় হিরণ্ময়কে। কিন্তু ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসে রোগা-পাতলা চেহারার শরীরটা। ভোরের দিকে পিঠটান দেয় ওঝা।

শেষমেশ চার কিলোমিটার দূরে যোগেশগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হিরন্ময়কে। সেখান থেকে তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মঙ্গলবার বেলা দুপুর দেড়টা নাগাদ মারা যান হিরন্ময়।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর বর্ষায় সুন্দরবন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে বহু মানুষকে সাপের কামড় খেতে হয়। অনেকে হাসপাতালে না এনে রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করেন। প্রাণহানি বাড়ে। সর্পদষ্টকে হাসপাতালে আনার জন্য লাগাতার প্রচার চলে। তারপরেও পরিস্থিতি বহু জায়গায় বদলায়নি। শিক্ষিত তরুণ হিরন্ময়ের পরিবারও যে ভাবে ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করলেন, তা জেনে চিন্তিত প্রশাসনের কর্তারাও। মৃতের জেঠতুতো ভাই সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে বড় ভুল হয়ে গেল। ভাইকে আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয় তো বেঁচে যেত।’’

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ইছামতী বিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক প্রদীপ্ত সরকার বলেন, ‘‘আমরা সারা বছরই এই ধরনের কুসংস্কার মানুষের মন থেকে দূর করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে থাকি। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যের, এখনও কিছু মানুষ আছেন যাঁরা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE