উদ্বিগ্ন: নিখোঁজ মাঝি অজিত দাসের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র
মাসখানেক আগে সমুদ্রে ট্রলার দুর্ঘটনায় দশজন মৎস্যজীবী নিখোঁজ হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়ল মৎস্যজীবীদের ট্রলার।
গভীর সমুদ্রে ট্রলার উল্টে ও অন্য ট্রলার থেকে ছিটকে পড়ে ১৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রলারের ৬ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা গিয়েছে। মৎস্যজীবীদের ক্ষোভ, ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট থাকলে এতগুলি মানুষ এ ভাবে বিপদে পড়তেন না।
মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। মৎস্যজীবীদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে কাকদ্বীপ ও নামখানা ঘাট থেকে মৎস্যজীবীদের ট্রলার গভীর সমুদ্রে গিয়েছিল। সোমবার ভোরে কেঁদোদ্বীপ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে পর পর বেশ কিছু ট্রলার দাঁড়িয়ে জাল পেতে মাছ ধরার তোড়জোড় করছিল। দুপুরের পরে আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। তোড়ে বৃষ্টি নামে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। সমুদ্রে বড় বড় ঢেউয়ে ট্রলারগুলি বেসামাল হয়ে পড়ে। বিপদ বুঝে ট্রলারগুলি জাল গুটিয়ে কেঁদোদ্বীপের দিকে ফিরতে শুরু করে। হঠাৎই জলের তোড়ে উল্টে যায় এফবি মল্লেশ্বর, এফবি জয়কৃষ্ণ, এফবি শিবানী নামে তিনটি ট্রলার। জলে পড়েন মৎস্যজীবীরা। এফবি ধর্মরা, এফবি গঙ্গামায়া ও এফবি হরিপ্রিয়া ট্রলারের ৩ মৎস্যজীবী বেসামাল হয়ে ট্রলার থেকে ছিটকে পড়েন। কয়েকজনকে উদ্ধার করা গেলেও এখনও নিখোঁজ ১৯ জন। মৎস্যজীবীদের অধিকাংশের বাড়ি কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর মাইতিরচক গ্রামে। সঙ্গী মৎস্যজীবীদের বক্তব্য, ‘‘আর কবে মালিক বা প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে? যদি সকলের লাইফ জ্যাকেট থাকত, তা হলে এ ভাবে বিপদের মুখে পড়লেও লড়াই করা যেত। অন্তত ১০-১৫ ঘণ্টার বেশি লাইফ জ্যাকেট পরে ভেসে থাকা যায়। মৎস্যজীবীদের দাবি, ফি বছর একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ নিরাপত্তা নিয়ে কারও কোনও উদ্যোগ নেই। সমুদ্রে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের কারও সাহায্যে পাওয়া যায় না। মৎস্যজীবীদের ট্রলারকেই উদ্ধারের কাজে নামতে হয়। অধিকাংশ ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট থাকে না।
কী বলছেন কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বিজন মাইতি?
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধ্য মতো সমস্ত ট্রলার মালিককে লাইফ জ্যাকেট রাখার জন্য বলি। কিন্তু ওঁরা বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মৎস্য দফতর ওঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক।’’ মাঝ সমুদ্রে বিপদে-আপদে উপকূল রক্ষী বাহিনীর সাহায্য পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ তাঁরও। দুর্ঘটনাগ্রস্ত জয়কৃষ্ণ ট্রলারের মালিক অমৃত দােসর যুক্তি, ‘‘আমার গুদামে ১০-১২টি লাইফ জ্যাকেট দু’বছর ধরে পড়ে আছে। ওঁরাই নিয়ে যাননি। তবে এ বার থেকে জ্যাকেট ছাড়া মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে পাঠাব না।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগ বলেন, ‘‘প্রতিটি ট্রলারে লাইফ জ্যাকেটের রাখার ব্যবস্থা দেখে তবেই লাইসেন্স দেওয়া হয়। বিষয়টি আরও কঠোর ভাবে দেখা হবে। তবে কোস্টাল পুলিশ ও উপকূল রক্ষী বাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকা দরকার।’’ তাঁর মতে, ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy