Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার দেখাতে হবে, তবু মিলল না টাকা

ওষুধের দোকানিরাও সমস্যা পড়েছেন। বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকার একটি ওষুধের দোকানের মালিক অপূর্ব দাস বলেন, ‘‘ওষুধ আনার জন্য চেকে টাকা দিয়েছিলাম। ব্যাঙ্ক বন্ধের কারণে চেক ক্লিয়ার হবে না। ফলে আমাদের ওষুধ পেতে আরও কয়েক দিন সময় লেগে যাবে।’’ 

তালাবন্ধ বনগাঁর ব্যাঙ্ক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

তালাবন্ধ বনগাঁর ব্যাঙ্ক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০২:৪৭
Share: Save:

পোস্ট অফিসে বিপর্যয় চলছিলই জায়গায় জায়গায়। তার মধ্যে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটে বা়ড়তি ভোগান্তি চলছে মানুষের।

বনগাঁ শহরের ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় স্টেট ব্যাঙ্কের শাখায় টাকা তুলতে এসেছিলেন এক প্রৌঢ়। অসু্স্থ ছেলেকে কলকাতায় গাড়ি ভাড়া করে ডাক্তার দেখাতে যেতে টাকার দরকার। ব্যাঙ্ক বন্ধ দেখে ভেঙে পড়লেন। বললেন, ‘‘বাড়িতে টাকা নেই। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ভেবেছিলাম ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। এখন কারও কাছে ধার করতে হবে।’’

গাইঘাটার চাঁদপাড়া এলাকায় স্টেট ব্যাঙ্কের শাখায় পেনশন তুলতে এসেছিলেন দীপালি মণ্ডল। বাড়ি প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে গাজিপুরে। সেখান থেকে ব্যাঙ্কে আসা-যাওয়ার জন্য পথ খরচই লাগে ৩২ টাকা। স্বামী সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। মারা গিয়েছেন। পেনশনের টাকায় সংসার চলে দীপালির। বললেন, ‘‘মাসের শেষ দিকেই টাকা তুলি। ব্যাঙ্ক ধর্মঘট শুনেছিলান। কিন্তু সব ব্যাঙ্কই যে বন্ধ থাকবে, সেটা জানতাম না। আবার একদিন আসতে হবে। ফের খরচ।’’

চাঁদপাড়ার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী যুবক মধুসূদন মণ্ডল এটিএম থেকে টাকা তুলতে এসেছিলেন। এটিএমও বন্ধ দেখে মাথায় হাত। বললেন, ‘‘ধারের টাকা আজই শোধ করার কথা ছিল। পাওনাদারের কাছে আজেবাজে কথা শুনতে হবে। এটিএমও যে বন্ধ থাকবে ভাবতে পারিনি।’’

বুধবার থেকে শুরু হওয়া ৪৮ ঘণ্টার ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের জেরে এ দিন সকাল থেকে জায়গায় জায়গায় এ ভাবেই নাকার হলেন বহু মানুষ। অনেকে জানতেনই না ব্যাঙ্ক বন্ধ। অনেকের আশা ছিল, এসেই হয়তো দেখবেন, কোনও না কোনও ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে। কিন্তু সে রকম কিছু হয়নি। এমনকী, বেশির ভাগ এটিএমও বন্ধ ছিল। বা খোলা থাকলেও টাকা ছিল না।

ওষুধের দোকানিরাও সমস্যা পড়েছেন। বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকার একটি ওষুধের দোকানের মালিক অপূর্ব দাস বলেন, ‘‘ওষুধ আনার জন্য চেকে টাকা দিয়েছিলাম। ব্যাঙ্ক বন্ধের কারণে চেক ক্লিয়ার হবে না। ফলে আমাদের ওষুধ পেতে আরও কয়েক দিন সময় লেগে যাবে।’’

১৮ মে থেকে পোস্ট অফিসে পরিষেবা ব্যাহত বিভিন্ন এলাকায়। প্রথমে সফটওয়ার আপডেট করার জন্য পরিষেবা বন্ধ ছিল। পরে ডাক ধর্মঘট শুরু হয়। একদিকে ব্যাঙ্ক বন্ধ, অন্য দিকে পোস্ট অফিসেও পরিষেবা মিলছে না। জোড়া ফলায় বিদ্ধ অসংখ্য মানুষ।

তবে কেউ কেউ সমস্যার কথা আগাম আন্দাজ করে টাকা তুলে রেখেছিলেন। যেমন সতীশ বিশ্বাস। তিনি বললেন, ‘‘বাড়িতে শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান শুক্রবার। ব্যাঙ্ক ধর্মঘট হতে পারে বুঝে আগে থেকেই টাকা তুলে রেখেছিলাম। তাই স্বস্তি। না হলে যে কী হত, কে জানে!’’ বুধবার সকালে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় দেখা গেল ক্যানিংয়েও। দরজা বন্ধ দেখে তাঁরা ফিরলেন রাগে গজগজ করতে করতে। ক্যানিংয়ের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রমেশ মণ্ডলের কথায়, ‘‘সামনেই মেয়ের বিয়ে। এখন টাকার দরকার। কেনাকাটা চলছে। হঠাৎ ব্যাঙ্ক ধর্মঘট হওয়ায় সমস্যায় পড়ে গেলাম। প্রস্তুতির দু’টো দিন নষ্ট হল।’’

ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা ব্লকে সমস্ত এটিএম কাউন্টারগুলিও বন্ধ ছিল। কলেজ মোড়ের রতন নস্কর বলেন, ‘‘চাকরির পরীক্ষার জন্য ড্রাফট কাটার দরকার ছিল। ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় কী ভাবে ড্রাফট জমা করব, বুঝতে পারছি না।’’ বহু গরিব মানুষ, যাঁরা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অনুদান পান ব্যাঙ্ক থেকে, তাঁরাও এ দিন টাকা তুলতে পারেননি।

তবে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের প্রথম দিনটা সামলে নিয়েছে কাকদ্বীপ। মঙ্গলবার রাত থেকেই বেশ কিছু এটিএম কাউন্টারে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। বুধবারও এটিএমে টাকা মিলেছে। তবে বেলার দিকে টাকা শেষ হয়ে যায় অনেক জায়গায়।

কাকদ্বীপে বন্ধন ব্যাঙ্কের শাখা এ দিন খোলা ছিল। রোজকার ব্যবসায় লেনদেনের কিছুটা হয়েছে সেই ব্যাঙ্ক থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bank strike Banak customer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE