Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রোগ-যুদ্ধে পড়শিরাও ভরসা অরণ্যের

হাবড়া শহরের পশ্চিম কামারথুবার বাসিন্দা গোপাল বৈদ্য ও কাকলি বৈদ্যের একমাত্র সন্তান অরণ্য। বয়স ৪ বছর ২ মাস। সম্প্রতি ক্যানসার-আক্রান্ত হয়েছে সে।

পরিবারের সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত অরণ্য। ছবি: সুজিত দুয়ারি

পরিবারের সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত অরণ্য। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ০২:০৬
Share: Save:

বাড়িতে বাবার মোবাইলে গেম খেলতে ব্যস্ত শিশুটি। ছোটাছুটি করে খেলা, সকলের সঙ্গে কথা বলা— সবই করছে সে। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে তাকে আর পাঁচটা সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর মতোই মনে হবে।

কিন্তু মোটেই সুস্থ-স্বাভাবিক নয় সে।

হাবড়া শহরের পশ্চিম কামারথুবার বাসিন্দা গোপাল বৈদ্য ও কাকলি বৈদ্যের একমাত্র সন্তান অরণ্য। বয়স ৪ বছর ২ মাস। সম্প্রতি ক্যানসার-আক্রান্ত হয়েছে সে।

স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। শুধু বাবা-মা নন, শিশুটির চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন পাড়া-প্রতিবেশীও।

ছেলের রোগের কথা জানতে পেরে ভেঙে পড়েছেন গোপাল। কারণ, পেশায় টোটো গাড়ি সারাইয়ের মিস্ত্রি গোপালের পক্ষে ছেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। এ কথা জেনে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এলাকার মানুষ। এলাকার জনাতিরিশ মানুষ এখন নাওয়া-খাওয়া ভুলে পথে নেমে পড়েছেন অর্থ সংগ্রহ করতে। সুজয় দে, শম্ভু দে, টোটন মজুমদার, লিটু দাস, শীলা দে রায়ের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিক দলে ভাগ হয়ে অর্থ জোগাড় করছেন। পথচলতি মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা— সকলের কাছেই ছুটছেন তারা। সুজয় বলছিলেন, ‘‘কেউ আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। যার কাছেই যাচ্ছি, সাধ্যমতো সাহায্য করছেন। পাড়া প্রতিবেশী হিসেবে আমরা একটা চেষ্টা করছি মাত্র।’’ সেই চেষ্টার ফল হিসেবে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা সংগৃহীত হয়েছে। এ দিন তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সুজয় বলেন, ‘‘অরণ্যকে নিয়ে পরিবারের লোকজন চিকিৎসার জন্য মুম্বই যাচ্ছেন। সামান্য হলেও টাকাটা ওদের কাজে লাগবে।’’ তবে এখানেই শেষ নয়। টাকা সংগ্রহের কাজটি তাঁরা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। কারণ, চিকিৎসার জন্য এখনও অনেক টাকার প্রয়োজন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝে মধ্যে জ্বর আসত অরণ্যের। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে প্রথমে দেখানো হচ্ছিল। মার্চ মাসে চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়। তার পর জানা যায়, শিশুটির কিডনি ও লিভারের মাঝে রয়েছে একটি টিউমার। ইতিমধ্যে এনআরএস হাসপাতালে তার চিকিৎসাও হয়েছে। তিনটি কেমো দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এবং বাচ্চাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।

গোপাল বৈদ্য বলছিলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসার জন্য ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। আরও অনেক টাকার প্রয়োজন।’’ তবে এলাকার মানুষ যেভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমার জীবনে একটা বড় পাওনা।’’ মানুষের এই পাশে দাঁড়ানো তাঁর মনে ভরসাও জুগিয়েছে। টিন ও ইটের বাড়িতে বসে বলছিলেন, ‘‘এত মানুষের আশীর্বাদ ছেলের উপর। ও ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে।’’

(অরণ্যের পরিবারের ফোন নম্বর: ৯৬৭৯৮১০৬১৪)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Child ক্যানসার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE