Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

টাকা পেতে দেড় মাস ধরে ভোগান্তি বৃদ্ধের

ব্যাঙ্কের পাসবইও চোখের কাছে এনে ধরা গলায় বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আর হাঁটতে পারছি না। নিজের টাকার জন্য আর কত ছুটতে হবে?’’

ভজনকুমার সাহা। —নিজস্ব চিত্র।

ভজনকুমার সাহা। —নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৭
Share: Save:

বয়স ৭৯। ঘোলাটে চোখে মোটা কাচের চশমা আঁটা। কাগজপত্র দেখতে হয় একেবারে েচোখের কাছে এনে। ব্যাঙ্কের পাসবইও চোখের কাছে এনে ধরা গলায় বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আর হাঁটতে পারছি না। নিজের টাকার জন্য আর কত ছুটতে হবে?’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুরের বাসিন্দা ভজনকুমার সাহার এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা ওই ব্যাঙ্কের পাসবই নিয়েই। তাঁর অভিযোগ, নিজের ৮০ হাজার টাকা ফিরে পেতে গত দেড় মাস ধরে বারুইপুরের পোস্ট অফিস আর সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের শাখায় ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। ব্যাঙ্কের বক্তব্য, পোস্ট অফিসের দেওয়া চেক ‘বাউন্স’ করেছে। সমস্যার সমাধানের জন্য যোগাযোগ করতে হবে পোস্ট অফিসেই। বৃদ্ধের অভিযোগ, পোস্ট অফিসের তরফে বলা হচ্ছে, তিনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে যেতে চাওয়ায় সেখান থেকে চেক লিখে দেওয়া হয়েছে। এর পরে কী হয়েছে, পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ তা জানেন না।

নাজেহাল বৃদ্ধ শুক্রবার সন্ধ্যায় ফোন করেন বারুইপুর থানায়। জানান, ৭৯ বছর বয়সে টাকার জন্য আর ছুটে বেড়াতে পারছেন না তিনি। ঘটনা শুনে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পুলিশ পাঠিয়ে বৃদ্ধের অভিযোগ নথিভুক্ত করিয়েছেন। ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসের সঙ্গে কথা বলবেন তদন্তকারীরা।

কী হয়েছে বৃদ্ধের সঙ্গে?

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ভজনবাবু মল্লিকপুরে স্ত্রী অনিমার সঙ্গে থাকেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পেনশন এবং অবসরের সময়ে পাওয়া টাকায় তাঁদের সংসার চলে। ভজনবাবু জানান, সব টাকা তিনি রাখতেন বারুইপুরের পোস্ট অফিসে। মল্লিকপুরে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের শাখায় তাঁর একটি অ্যাকাইন্ট রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এখন বয়সের জন্য বাড়ি থেকে অত দূরে পোস্ট অফিসে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জমানো ৮০ হাজার টাকা পোস্ট অফিস থেকে ব্যাঙ্কে নিয়ে চলে আসতে চাই। পোস্ট অফিসের লিখে দেওয়া চেক গত ১৫ নভেম্বর ব্যাঙ্কে জমা করি। ব্যাঙ্কের পাসবুক আপডেট করিয়ে দেখি, ৮০ হাজার টাকা ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। আবার ওই দিনই উঠেও গিয়েছে।’’ এর পরে ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেন ভজনবাবু। তাঁকে জানানো হয়, পোস্ট অফিসের চেক ‘বাউন্স’ করেছে। পোস্ট অফিসে কথা বলতে গেলে সেখান থেকে ভজনবাবুকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বৃদ্ধের প্রশ্ন, ‘‘আমার টাকা তা হলে গেল কোথায়?’’

শনিবার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের মল্লিকপুর শাখার ম্যানেজার নারায়ণ শাহকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এটা পোস্ট অফিসের ভুল। ওঁদের চেক বাউন্স করেছে। তাৎক্ষণিক যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের পাসবুকে উঠেছিল।’’ এর পরে বারুইপুরের পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার পোস্টমাস্টার শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দ্রুত বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’ এর পরে তিনি অমলকান্তি বিশ্বাস নামে পোস্ট অফিসের আর এক কর্মীকে ফোন ধরিয়ে দেন। অমলকান্তিবাবু মুখে বলেন, ‘‘লিঙ্কের একটা সমস্যা হচ্ছিল। সোমবারের মধ্যে ওই বৃদ্ধ টাকা পেয়ে যাবেন।’’

বৃদ্ধকে এ কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘‘টাকা যদি পেয়েও যাই, এত দিন আমাকে এ ভাবে ভোগানো হল কেন? ব্যাঙ্ক থেকে যে সুদ পাই, এই বয়সে সেটাও দরকার ছিল। সেটা তো আর পাব না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE