Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আছড়ে পড়ছিল তিনতলা বাড়ির সমান উঁচু ঢেউ

শনিবার ফের দুর্যোগের মধ্যে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন ২৫ জন মৎস্যজীবী। প্রাণ হাতে ফিরেছেন অমল দাস, অরুণ দাস, সৌমিত্র দাসরা।

বিপদের ঘটনার বিবরণ শোনাচ্ছেন উদ্ধার হওয়া মৎস্যজীবী।

বিপদের ঘটনার বিবরণ শোনাচ্ছেন উদ্ধার হওয়া মৎস্যজীবী।

দিলীপ নস্কর
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০২:১৪
Share: Save:

মাঝে মধ্যে সচেতনতা শিবির হয় মৎস্যজীবীদের নিয়ে। গভীর সমুদ্রে বিপদে পড়লে কী করণীয়, তার তালিম দেয় মৎস্য দফতর, উপকূল রক্ষী বাহিনী। লাইপ জ্যাকেট, জিপিএস ব্যবস্থা-সহ কারিগরি সরঞ্জাম ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়। তারপরেও মাছ ধরতে গিয়ে বার বার বিপদে পড়ছেন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা। গত বছর মাছ ধরার ভরা মরসুমে কাকদ্বীপের ২৮ জন মৎস্যজীবীর প্রাণ গিয়েছিল ট্রলার ডুবিতে। এখনও খোঁজ নেই ১৪ জনের।

শনিবার ফের দুর্যোগের মধ্যে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন ২৫ জন মৎস্যজীবী। প্রাণ হাতে ফিরেছেন অমল দাস, অরুণ দাস, সৌমিত্র দাসরা। তাঁদের অনেকেরই কথায়, ‘‘মাঝ সমুদ্রে যখন তিন-চারতলা বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দেয় ট্রলারে, তখন কোনও কৌশলে বাঁচার কোনও রাস্তা থাকে না।’’

অমল-অরুণরা ছিলেন এফবি দশভূজা ট্রলারে। তাঁরা জানালেন, বৃহস্পতিবার আবহাওয়া খারাপ থাকায় কেঁদোদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পর দিন আকাশ একটু পরিষ্কার হওয়ায় ফের মাছ ধরার তোড়জোড় শুরু করেন সকলে। কিন্তু ভোর থেকে ফের আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। এ বার ঝড়ের দাপট ছিল আরও বেশি। ঢেউয়ের তোড়ে অনেকগুলি ট্রলার ঢুকে পড়ে বাংলাদেশি জলসীমার মধ্যে। সে দেশের উপকূল রক্ষীবাহিনীর থেকে সাহায্য পাওয়া তো দূরের কথা, তাঁদের দুর্যোগের মধ্যেই ভারতের দিকে চলে যেতে বলা হয় বলে অভিযোগ ওই মৎস্যজীবীদের। সে সময়ে একটি জাহাজের চ্যানেল খুঁজে পায় দশভূজার মতো কয়েকটি ট্রলার। এ ধরনের চ্যানেলে সাধারণত চর থাকে না। তুলনায় পথ কিছুটা সুগম। সেই পথ ধরেই ফেরার চেষ্টা করেছিল কিছু ট্রলার। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি তখনও কমেনি। ডুবে চায় এফবি দশভূজা, এফবি নয়ন, এফবি জয় যোগীরাজ। আরও একটি ট্রলারের খোঁজ মিলছে না।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিখোঁজ কিরণ দাসের পরিবার।

অমল-অরুণরা জানালেন, তাঁদের ট্রলারে ছিলেন ১৫ জন। ঝড় ওঠার পরে সকলে ঢুকে পড়েছিলেন ট্রলারের খোলের মধ্যে। কিন্তু যখন বোঝেন, ট্রলার ডুবতে চলেছে, সকলে ডেকে উঠে আসেন। পরনে ছিল লাইফ জ্যাকেট। এক সময়ে ট্রলার ডুবে সকলেই জলে পড়েন। অরুণের কথায়, ‘‘প্রবল ঢেউ কখনও তিনতলা উঁচুতে তুলে দিচ্ছিল। কখনও একই রকম নীচে নিয়ে ফেলছিল। কোথায় যাচ্ছি, আদৌ বাঁচব কিনা, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভগবানের নাম করছিলাম।’’ প্রসেনজিৎ দাস নামে দশভূজার এক মৎস্যজীবী জানালেন, প্রায় তিন-চার ঘণ্টা ভেসেছিলেন জলে। তারপরে এক সময়ে এফবি দুর্গা নামে একটি ট্রলার দেখতে পেয়ে তাঁদের দিকে দড়ি ছুঁড়ে দেয়। সেই দড়ি ধরে ওঠেন কয়েকজন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারান।

এফবি দুর্গা উদ্ধার করেছে ৬ জনকে। এখনও খোঁজ মিলছে না যাঁদের, তাঁদের মধ্যে আছেন বছর পঁয়তাল্লিশের কিরণ দাস। তাঁর মা মমতারানি নাগাড়ে কেঁদে চলেছিলেন। অক্ষয়নগরের বাড়িতে পড়শিদের ভিড়। মমতারানি বলেন, ‘‘প্রায় কুড়ি বছর ধরে ও সমুদ্রে মাছ ধরতে যাচ্ছে। কখনও এমন কাণ্ড ঘটেনি।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fisherman Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE