তখনও চলছে শিবির।
প্রচার চালাতে গিয়ে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁদের। মেয়ে হয়ে রক্তদান করবে! এ তো পুরুষমানুষদের কাজ।
কিন্তু কোনও কথাই দমাতে পারেনি নাজিরা খাতুন, রাবিয়া খাতুন, গঙ্গা মণ্ডল, দীপা দত্তদের। রবিবার মগরাহাট ২ ব্লকের মুলটি গ্রামের সান পাড়ায় ওই তাঁদের রক্তদান শিবিরের রক্ত দিয়ে গিয়েছেন ২৬ জন মহিলা। গ্রামের মহিলাদের উৎসাহে তাঁদের আয়োজিত শিবিরে রক্ত দিয়েছেন ২৪ জন পুরুষও।
বছর কয়েক আগে প্রতিবেশী এক যুবক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। সে সময় রক্ত জোগাড় করতে নাজেহাল হতে হয়েছিল নাজিরাকে। শেষে পাড়ার অন্য ছেলেরা রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ওই যুবকের।
তখন থেকেই নাজিরা ঠিক করেছিলেন সুযোগ পেলে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবেন। রবিবার তাঁরই চেষ্টায় ওই রক্তদান শিবির হয়। শুধু তিনি নন, এই শিবিরের আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন গঙ্গা, দীপা, মুসলিমা, রাবিয়ারাও। এই মহিলারা দু’টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গেও যুক্ত।
গঙ্গাদেবী বলেন, ‘‘ছেলেরা বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে রক্ত দেয়। আমরা দেখতাম। কিন্তু এ বার রক্ত দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’ একই কথা বলেন কামদেবপুরের নাজিরা খাতুন। তাঁর কথায়, ‘‘নিজে রক্ত দিয়ে জীবন সার্থক হল। আমি চাই গ্রামের মহিলারা সমস্ত রক্তদান শিবিরে যোগ দিক।’’ তাতে রক্তের জোগান বাড়বে। পাশাপাশি কারও পরিবারেরই কোনও সদস্যের রক্তের অভাবে অকালে প্রাণ যাবে না বলে তিনি মনে করেন। মহিলাদের বাড়ির লোকজনও এই শিবিরের আয়োজনে তাঁদের সাহায্য করেছেন।
তাঁদের কথায়, ‘‘এটি একটি ভাল কাজ। এমন কাজে বাড়ির মহিলাদের পাশে থেকে খুশি আমরা।’’
এই গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই বাস। যা অনুষ্ঠান হয় সবাই একসঙ্গে মিলেমিশেই করা হয় বলে জানান এক বৃদ্ধা।
এ দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত শিবির চলে। রক্তদাতাদের মুরগির মাংস ভাত খাওয়ানো হয়। এ দিনের শিবিরের উদ্বোধন করেন মগরাহাট পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক নমিতা সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কোনওদিন শুনিনি যে, মহিলারা কোনও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছেন। সংসার সামলে সমাজসেবার এই কাজ করা সত্যিই গর্বের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy