প্রতীকী ছবি।
পরিবারের ছেলে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। রোগ ধরা পড়ার পরে খামারু পরিবারে প্রথম ধাক্কাটা এসেছিল। পরের ধাক্কাটা এসেছিল চিকিৎসার ব্যবস্থা হওয়ার ঠিক পরেই। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ২০ ইউনিট রক্ত লাগবে।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল সুরজিৎ খামারুর দিনমজুর বাবার। এক সঙ্গে অত রক্ত পাবেন কোথায়। তার উপরে অর্থ! খবর গিয়েছিল সুন্দরবনের রায়দিঘির দমকল গ্রামের মণ্ডল পাড়ায়। সেটা ছিল শুক্রবার। শনিবার বিকেল বলছে, সুরজিৎ ভাল আছে। কারণ, ২০ ইউনিট রক্ত জোগাড় হয়েছে। বন্ধুকে রক্ত দিয়েছেন সাদ্দাম গাজি। শুধু নিজেই নয়, গ্রামের আরও ১৭ জনকে যোগাড় করে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
দিন দশেক আগে বছর তেইশের সুরজিতের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছিল। তার কয়ে ক’দিন পরে নাক মুখ কান দিয়ে অল্প অল্প রক্ত বেরোতে শুরু করে। পরিবারের লোকজন তাকে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে ‘রেফার’ করা হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। দিন দু’য়েক পরে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরিবারের লোকেরা তাঁকে নিয়ে ছোটেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ধরা পড়ে ব্লাড ক্যানসার। পরিবারের লোকেরা রাজারহাটের একটি বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে ২০ ইউনিট রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়। কলকাতায় রক্ত জোগাড় করতে পারেননি সুরজিতের বাড়ির লোকেরা। শুক্রবার খবর আসে গ্রামে। মণ্ডলপাড়ার পাশেই পুরকাইত পাড়া। ওই গ্রামের যুবক সাদ্দাম বিষয়টি জানতে পারেন। সুরজিৎ তাঁর বন্ধুও। আশপাশের এলাকা থেকে পরিচিতদের ডেকে নেন সাদ্দাম। বলেন, ‘‘আমাদের বন্ধুকে বাঁচাতেই হবে।’’ শেষ পর্যন্ত ১৭ জনের সঙ্গে সুরজিতের রক্তের গ্রুপ মেলে। এ ছাড়া, সাদ্দাম নিজে তো ছিলেনই ওই দলে। শনিবার সকালে নিজেদের টাকায় দু’টি গাড়ি ভাড়া করে তাঁরা রাজারহাটের হাসপাতালে পৌঁছন। ১৮ জনের রক্ত দেওয়া হয় সুরজিৎকে। শনিবার বিকেলেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। যদিও চিকিৎসা প্রায় পুরোটাই বাকি। সাদ্দাম বলেন, ‘‘সুরজিৎ আমার ভাল বন্ধু। ওর অসুস্থতার কথা শুনে আমি স্থির থাকতে পারিনি।’’ চিকিৎসায় অন্তত ৮-৯ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এখন লড়াই সেটা জোগাড়েরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy